শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

করোনা ওয়ার্ডে কাজ করা একজন চিকিৎসকের আকুতি

শুক্রবার, এপ্রিল ৯, ২০২১
করোনা ওয়ার্ডে কাজ করা একজন চিকিৎসকের আকুতি

ডা. কেকা দৃষ্টি শর্মা :

আমি একজন চিকিৎসক। 
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আমি  চট্টগ্রাম শহরের বাইরে পা দিতে পারিনি।
আমি কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ করি।

কোভিড যখন প্রথম এলো,আমি তখন অন্য একটা ডিপার্টমেন্টে কাজ করতাম। পরে আমার বিসিএস হলো মে তে। সেই থেকে আমি কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ করি।

কাজ ছাড়া আমার ভালো লাগে না। কোন কাজ না করে বসে থাকা আমার কাছে অভিশাপের মত মনে হয়। ২০২০ এর মার্চে যখন প্রথম কেইস ধরা পরলো দেশে, তখন আমি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে কাজ করি।সেই সময় ও রিস্ক নিয়ে অফিসে গেছি। কর্মীদের বেতন ভাতা যাতে ঠিক মতো হয়, তাদের সুরক্ষা সামগ্রী যাতে ঠিক মতো ডিস্ট্রিবিউট হয়, তা সশরীরে মনিটর করেছি। ভয় পাই নি। উপজেলা পর্যায়ে ইউ এন ও মহোদয় যতগুলো প্রোগ্রাম রেখেছেন, এটেন্ড করেছি। প্রজাতন্ত্রের  দায়িত্বশীল একজন কর্মচারী হয়ে প্রতিটা কাজ আমি দায়িত্ব নিয়ে করেছি।

তবু মনে হত, আমি একজন চিকিৎসক। সারা পৃথিবীর এমন কঠিন পরিস্থিতিতে একজন চিকিৎসক হিসেবে সরাসরি রোগীর সেবা করার ভাগ্য আমার হবে না। আমি সেই আত্মতৃপ্তি টুকু পাবার জন্য তাড়না অনুভব করছিলাম ভেতর থেকে।

সেই সুযোগ ও ঈশ্বর করে দিয়েছেন।
এখন আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে রিস্কি জোনে সবচেয়ে ব্যস্ততম হাসপাতালের সবচেয়ে বিপদজনক ওয়ার্ডে কাজ করি।

আমি ফ্রন্টলাইনার। আমি যোদ্ধা।

আমি যুদ্ধ করি। শুধু কোভিডের সাথে না। শুধু যমের সাথে না। 
আমি নিজের সাথে যুদ্ধ করি।

কত দিন হয়ে গেলো ফুল ফল লতা পাতা গাছ ছুঁয়ে দেখি না। 
খালি পায়ে সাগরের বালুকাবেলায় হেঁটে বেড়াই না।
বুক ভরে পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা বৃষ্টির জলের মাখো-মাখো গন্ধটা শ্বাস টেনে নেই না।

কত দিন হয়ে গেলো নিঃসংকোচে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভরে আদর করি না।

খুব ইচ্ছা করে মনটা যখন নাজুক হয়ে থাকে,প্রিয় মানুষটার বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পরে একটু শান্তি খুঁজি। তাতে যদি মনের অস্থিরতা একটু কমে, পারি না।

মায়ের অপারেশন হল। সাথেই ছিলাম। কিন্তু দূরে দূরে। যদি ক্ষতির কারণ হয়ে যাই?

তবু আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমি বসে নেই। আমার পূর্বজন্মের কোন পুণ্যের ফল, ঈশ্বর আমাকে এই যুদ্ধে শরীক হবার সুযোগ দিয়েছেন।

আপনারা যারা একটু স্বাস্থ্য বিধি মানতে পারছেন না বার বার হাত ধোওয়ার আলসেমি, কিংবা মাস্কের ভেতর দম বন্ধ বন্ধ লাগার অজুহাত, কিংবা একেবারেই এড়িয়ে না যেতে পারার মতো নেমন্তন্ন, অথবা কোন কারন ছাড়া নেহায়েত পাগলামি করে করে,...

তারা কি বোঝেন একজন মায়ের জন্য কত কষ্ট তার সন্তানকে বুকে আগলে ধরতে না পারা?

একজন স্ত্রীর জন্য কতটা বেদনার বিষয় স্বামী কে রেখে দূরে দূরে থাকা?

একজন সন্তান হিসেবে কতটা কষ্টকর নিজের বাবা মায়ের খুব কাছে যেতে না পারা?

একজন চিকিৎসকের জন্য কতটা ট্রমার বিষয়  চোখের সামনে রোগী কে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখা?

আমি তো এখনো ভুলতে পারি না সেই মেয়েটার আর্তনাদ! 

'আব্বু,আমার আব্বু,আমার লক্ষ্মী আব্বু' বলে বলে কাঁদছিল।

সেই রোগী টার চেহারা ভুলতে পারি না, স্যাচুরেশন ৩০% নিয়ে একা বিছানায় শুয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছিলেন যিনি।

আমি,আমরা, যুদ্ধ করছি। 

যুদ্ধ শেষ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।। 

মাস্কগুলো পুড়িয়ে ফেলতে চাই। 

মেয়েকে প্রাণ ভরে আদর করতে চাই মাসের প্রতিটা দিন।

বাবা মায়ের সাথে মন খুলে কথা বলতে চাই।

নিঃশংকোচে প্রিয় জনের হাত ধরে বলতে চাই,'ভালবাসি'....

একটু কি আমাদেরকে সাহায্য করা যায়? প্লিজ....


সময় জার্নাল/ইএইচ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল