শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিএনপির সময়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের নির্বাচনী দায়িত্বে চায় না আ’লীগ

রোববার, জুলাই ৩১, ২০২২
বিএনপির সময়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের নির্বাচনী দায়িত্বে চায় না আ’লীগ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ, সিভিল প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ইসির অধীনে ন্যস্ত করাসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেছে দলটি।

রোববার (৩১ জুলাই) নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে ইসির কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবগুলো হলো-
১. নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন।
২. নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা।
৩. নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ। এটি সর্বজন স্বীকৃত, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে একদিকে যেমন দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইসব দলীয় ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। এসব কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।

৪. ছবিযুক্ত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা।
৫. ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ বৃদ্ধি করা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের মতো প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোনো বিকল্প নেই। ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের শুরুর দিকে কিছু কিছু ভোটারের অপছন্দ থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় প্রমাণিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি- এসব বন্ধ করে একটি টেকসই স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন ইভিএম ব্যবস্থায় সম্ভব।

বর্তমান সরকারের অব্যাহত সহায়তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এখন ১ লাখ ৫০ হাজারের অধিক ইভিএম মেশিন রয়েছে, যা দিয়ে মোট ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট নেওয়া সম্ভব। আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবর্তে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।
৭. আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ।
৮. দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনোভাবেই কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।
৯. নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা।
১০. নির্বাচনের পূর্বে ও পরে সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১১. নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা।
১২. নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবল আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা।
১৩. অ্যাডহক বা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা।
১৪. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ‘past and closed chapter’। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছে। আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এর বিধান অনুযায়ী এই বিষয়ে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে সাংঘর্ষিক কোনো মন্তব্য করা সংবিধান লংঘন করার শামিল।

এই প্রস্তাবগুলো ছাড়া ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশন’-কে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে।

সংলাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

সংলাপে নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল