সর্বশেষ সংবাদ
স্বজনের দাবি হত্যা পুলিশ বলছে আত্মহত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর হাতিরঝিল
থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সুমন শেখ (২৬) নামে ওই যুবককে চুরির
মামলায় শুক্রবার বিকেলে গ্রেপ্তার করে থানার হাজতখানায় রাখে পুলিশ। সেখানে গতকাল শনিবার
সকালে তাঁর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ বলছে, সুমন হাজতখানার ভেন্টিলেটরের লোহার গ্রিলের
সঙ্গে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে আত্মহননের দৃশ্য
স্পষ্ট। তবে স্বজনের অভিযোগ, সুমনকে হত্যা করে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করছে
পুলিশ।
সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর স্বজন
ও এলাকাবাসী গতকাল সন্ধ্যায় হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। হাজতখানায় আসামির আত্মহত্যার
ঘটনায় শুক্রবার রাতে থানায় দায়িত্ব পালন করা এসআই হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল মো. জাকারিয়াকে
সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজীমুল হক বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্ট- সুমন
ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে নিজের পরনের ট্রাউজার দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন।
কিন্তু হাজতখানায় আসামি কীভাবে আছে, কী করছে এসব দেখভালের দায়িত্ব সেন্ট্রির (কনস্টেবল)।
ডিউটি অফিসারও খোঁজ রাখবেন। রাত সাড়ে ৩টায় সুমন আত্মহত্যা করেছেন, আর সকাল ৮টায় পুলিশ
লাশ দেখতে পায়। এর আগে কোনো পুলিশ সদস্য হাজতখানায় আসামির খোঁজ করেননি। দায়িত্বে অবহেলার
অভিযোগে রাতের ডিউটি অফিসার এসআই হেমায়েত ও কনস্টেবল জাকারিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা
হয়েছে।
সুমনের স্বজনরা জানান, তাঁর বাসা
পশ্চিম রামপুরার ঝিলকাননে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লেবার (শ্রমিক) হিসেবে কর্মরত
ছিলেন। স্ত্রী জান্নাত ও সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। গত বছর
সুমনের মা মারা গেছেন। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে বাসায় মিলাদ-মাহফিলের
আয়োজন করেছিলেন। বিকেল ৪টার দিকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ চুরির মামলায় তাঁকে বাসা থেকে
গ্রেপ্তার করে।
হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদ
জানান, সুমন পশ্চিম রামপুরার মেসার্স মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের
লেবার ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩ আগস্ট রাতে ৫৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২০ টাকা চুরির ঘটনায়
থানায় মামলা হয়। এতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তে সুমনের
সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এরপর ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের সময়
সুমনের বাসা থেকে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
সুমনের শ্যালিকা সুমাইয়া জানান,
গ্রেপ্তারের পর তাঁরা শুক্রবার রাতে সুমনকে দেখতে থানায় গিয়েছিলেন। রাত ১১টা পর্যন্ত
অপেক্ষা করেও তাঁকে দেখতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের বলা হয়েছিল- শনিবার আদালতে পাঠানো হবে,
সেখানে দেখা করতে।সুমনের শাশুড়ি আমেনা খাতুন জানান, গতকাল সকাল ৯টায় তিনি মেয়ে জামাইয়ের
জন্য নাশতা নিয়ে যান থানার সামনে। তাঁকে থানায় ঢুকতে না দিয়ে বলা হয়, আদালতে যেতে।
স্ত্রী জান্নাতসহ স্বজনরা ঢাকার আদালতে গিয়ে অপেক্ষা করেন। দুপুরের পর তাঁরা মুত্যুর
খবর শুনেছেন। তাঁর অভিযোগ, সুমনকে হত্যা করা হয়েছে।
স্বজনদের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি
করে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজীমুল হক বলেন, সকাল ৯টার দিকে সুমনের
মৃত্যুর খবর তাঁর স্বজনদের জানানো হয়েছে। ১০টার দিকে তাঁরা থানায় আসেন। সিসিটিভি ক্যামেরার
ফুটেজ তাঁদের দেখানো হয়েছে।
হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদ
বলেন, তিনি শুক্রবার রাতে থানা থেকে বাসায় যান। সকাল ৮টায় খবর পান হাজতখানায় আসামি
আত্মহত্যা করেছেন। হাজতখানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যাচ্ছে, সুমন হাজতখানায় শুয়েছিলেন।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে উঠে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছেন, কেউ জেগে আছে কিনা। এরপর নিজের পরনের
ট্রাউজার খুলে গ্রিল বেয়ে ওপরে উঠছেন। ভেন্টিলেটরের লোহার গ্রিলের সঙ্গে ট্রাউজার বেঁধে
গলায় ফাঁস দেন।
মৃত সুমনের স্বজন সোহেল বলেন,
সুমন অপরাধী হলে আইনের মাধ্যমে তাঁর শাস্তি হোক। কিন্তু থানা হাজতে মৃত্যু কোনোভাবেই
গ্রহণযোগ্য নয়। থানায় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা কী করেছেন। পুলিশ কোনোভাবেই দায় এড়াতে
পারে না।
এ বিভাগের আরো
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল