মাহমুদুল হাসান, কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্যের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পর এবার কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে। রোববার (২১ আগস্ট) কোষাধ্যক্ষের অফিসে সভাপতি ইলিয়াস এ ঘটনা ঘটান।
এর আগেও চলতি বছরের ৩১ মার্চ বিভিন্ন 'অনৈতিক দাবি-দাওয়া' না মানায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কুবি উপাচার্যের গাড়ি অবরুদ্ধ করারও অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ইলিয়াসের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২১ আগস্ট কোষাধ্যক্ষ ড. মো. আসাদুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির মিটিং শেষে দুপুর সোয়া দুইটায় নিজ কক্ষে খাবার খেতে বসেন। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস অনুমতি ছাড়াই ট্রেজারারের কক্ষে প্রবেশ করে ট্রেজারারকে বিভিন্ন কাজের জবাবদিহিতা করতে বলেন। আর ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কিংয়ের (ওয়াইফাই) প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকার প্রকল্প নিজের পছন্দের লোককে দেয়ার কথা বলেন। এরপর ট্রেজারারের উত্তর প্রত্যাশিত না হওয়ায় ইলিয়াস কিছুটা উত্তেজিত হয়ে উঠেন। ইলিয়াস ট্রেজারারকে বলতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে খুশি চালাচ্ছেন। শেখ হাসিনা হলের আসবাবপত্রের জন্য আগের ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদার দিয়ে কাজ করিয়েছেন, এখানে দুর্নীতি করেছেন। এছাড়াও তার পছন্দের লোককে ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ দিতে বলেন বলে অভিযোগ শোনা যায়।
এদিকে বাগবিতণ্ডা শুরুর প্রায় বিশ মিনিট পর দুইটা চল্লিশের দিকে পূর্বনির্ধারিত মিটিংয়ের জন্য ট্রেজারারের কক্ষে উপস্থিত হোন অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূইয়া, একই দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল ইসলাম, আইসিটি সেলের সিনিয়র প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল জান্নাত। তারা এসেও কোষাধ্যক্ষ ও ইলিয়াসের মাঝে কথাকাটাকাটি দেখতে পান। এসময় ইলিয়াসকে তারা শান্ত হতে বললেও ইলিয়াসের বাধ সাধেনি।
তাদের সবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা ইলিয়াসকে শান্ত হতে বলি বারবার, কিন্তু ইলিয়াস বেশ উত্তেজিত অবস্থায় ছিল।
এ বিষয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিভিন্ন টেন্ডার, আসবাবপত্র নিয়ে বাগবিতণ্ডা হচ্ছিলো। ইলিয়াস বলতেছিলো শেখ হাসিনা হলের আসবাবপত্র নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন সরকারি প্রতিষ্ঠান। কোনো ব্যক্তি মালিকানার নয়। এখানে টাকা এদিক-সেদিক করার সুযোগ নেই।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি একটু দেড়িতে রুমে ঢুকেছিলাম, তখন দেখলাম কথাকাটাকাটি চলছে, সম্ভবত কোনো টেন্ডার নিয়ে কথাকাটাকাটি হচ্ছিলো।
অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, স্যারের সাথে আমাদের একটা মিটিং ছিল বিভিন্ন কাজের। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় ও তিনটায় স্যারের নিয়োগ বোর্ডের মিটিং থাকায় উত্তপ্ত পরিবেশে আমাদের সাথে আর মিটিং হয়নি। আমরা গিয়ে দেখলাম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কোষাধ্যক্ষের সাথে ইলিয়াসের কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো।
তবে হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, আমি ট্রেজারারের রুমে অনুমতি নিয়ে গেছি। আমি বলেছি শেখ হাসিনা হল এবং বঙ্গবন্ধু হলের নতুন ভবনের আসবাবপত্র ও ওয়াইফাই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য যাকে কাজ দিক দ্রুত দিক। আমি ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীর সমস্যা সংক্রান্ত কথা বলেছি।
তিনি আরো বলেন, আমার পছন্দের কাউকে আমি দিতে বলিনি, আমার কোন কোম্পানির সাথে পরিচয় নেই। উনি উনাদের পছন্দের কাউকে দিতে চেয়েছে সেটা নিয়ে আমি কথা বলেছি। কারণ দুই-তিনটা কোম্পানির মধ্যে যে কোম্পানি সর্বোচ্চ বিট করেছে তাদের কাজ দেওয়া তো অবৈধ, নিয়মের মধ্যে দিলে সবচেয়ে কম যারা তারা কাজ পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইলিয়াস আমার রুমে খুবই আক্রমণাত্মক ভাবে এসে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ওয়াইফাইয়ের জন্য নেটওয়ার্কিংয়ের টেন্ডার তার সুপারিশকৃত কোম্পানিকে দেয়ার কথা আমাকে বলতে বলে। কিন্তু বিষয়গুলো একটা কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে, তার কথামতো তো আর সব হবে না। সে আমার সাথে এমনভাবে কথা বলেছে যা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কাম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, ইলিয়াস আমাকে হুমকি ও ব্ল্যাকমেইল করে এই বলে যে, আমরা প্রশাসন নাকি টাকা খেয়ে আমাদের পছন্দের কোম্পানিকে টেন্ডার দেই। কিন্তু আমি আমার জায়গায় পরিষ্কার। সে আগেও এমন ব্ল্যাকমেইল করেছে, এখনও করতে চাচ্ছে। আমি আগে থেকেই দুর্নীতি, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে ছিলাম এখনও আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ওরা চেষ্টা করছে যেন ওদের পছন্দের লোককে দিই। কিন্তু আমরা তো কারো পছন্দের লোককে দিবো না। যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমরা দেখবো যৌক্তিক মূল্যে কার সর্বোচ্চ মানের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস দেওয়ার সামর্থ্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয় চলে সরকারের পয়সায়, বিশ্ববিদ্যালয় চলে ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নয়নের জন্য। সেখানে কোনোভাবেই কারো কথায় বা কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় কোয়ালিটি সেক্রিফাইজ করার বিষয় আমরা কনসিডার করবো না। যারাই হুমকি ধমকি দিক, আমরা গ্রহণ করবো না। এসব ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলবে না। কোয়ালিটির ব্যাপারে আমাদের কোনো ছাড় নেই।
এমআই