শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: সাইয়েদ আবদুল্লাহ-র পরামর্শ

সোমবার, এপ্রিল ১২, ২০২১
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: সাইয়েদ আবদুল্লাহ-র পরামর্শ

মো: মাইদুল ইসলাম : ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন মো. সাইয়েদ বিন আবদুল্লাহ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক দেয়ার পরে যখন অনেকেই বুয়েট-মেডিকেলে ভর্তির দৌঁড়ে শামিল হয়েছে, তখন পাবনা ক্যাডেট কলেজে থেকে উচ্চমাধ্যমিক দেয়া সাইয়েদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঘ ইউনিট। সফলতাও এসেছে, তিনি এখন পড়ছেন আইন বিভাগে। 

আর কিছুদিন পরে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। শেষ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ও ঘ ইউনিটের প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর পরামর্শ।

প্রথমেই মেডিকেলে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু চান্স হয়নি তাদের নিয়ে কিছু বলবো, এখনো কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার অনেকটা সময় বাকি। অন্যান্য বার যারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিতো তারা এ সময় টা পেতো না। আমি বলব যারা মেডিকেল ফেরত আছে তাদের এখনো হাতে বেশ খানিকটা সময় আছে এ কয়দিন প্রস্তুতি নিলে চান্স পাওয়া সম্ভব। 
 
★ এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে এই শেষ সময়ে প্রস্তুতি নিবো? 

বিগত বছরের প্রশ্নের দিকে নজর দেয়া

সবার আগে ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের প্যার্টান বুঝতে হবে। ভর্তি পরীক্ষা কিভাবে প্রশ্ন আসে যদি আমরা সেটা না বুঝি তাহলে অনেক পড়ালেখা করলেও চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। অন্যান্য বছর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় মডেল টেস্ট দিয়ে প্রশ্ন বুঝতে পারতো কিন্তু এবছর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ বছর প্রশ্ন বুঝতে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিবে সেটার বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক থেকে অন্তত বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে।

রুটিন বানিয়ে পড়া

রুটিন বানিয়ে পড়তে হবে। তবে এক্ষত্রে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি মেন্টেইন করতে হবে। অর্থাৎ সারাদিন পড়ার দরকার নেই; কিন্তু যতটুকো পড়বে ততটুকো মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে। প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করতেই হবে ব্যাপারটা এমন নয়। একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন কত ঘণ্টা করে পড়াশোনা করবে, তা নির্ভর করবে সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত সামর্থ্যের ওপর। সে যদি অনুভব করে, সাত থেকে আট ঘণ্টা পড়ালেখা করে খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারছে, তাহলে তার জন্য সেটাই যথেষ্ট। সারাদিন পড়ার দরকার নেই, পড়ার পাশাপাশি নিজের শরীরের সুস্থ্যতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ভুঁইফোঁড় অনলাইন গ্রুপ অনুসরণ করার দরকার নেই

অনলাইনে ব্যাঙের ছাতার মত বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার গ্রুপ রয়েছে। যেহেতু এ বছর বিভিন্ন জায়গায় পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা, তাই শিক্ষার্থীরা এ সকল হাজারটা অনলাইন গ্রুপ অনুসরণ করছে। যেটা তার সময় নষ্ট করছে আবার সে সঠিক গাইডলাইনও পাচ্ছে না। কারন অনেক গ্রুপ আছে শুধু লাইক কমেন্ট পাওয়ার জন্য কপি পোস্ট করছে বা এফিসিয়েন্ট লোকেরা ঐ গ্রুপ চালাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাদের উচিত এমন গ্রুপ ও ব্যক্তির উপদেশ অনুসরণ করা যারা ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে দক্ষ বা এডমিশন মেন্টরিং প্রফেশনের সাথে জড়িত।

 শেষ সময়ে পড়া যেভাবে গুছিয়ে নিবে

টেক্সবই অনুসরণ করতে হবে। অতীতের যেকোন বছরের চেয়ে এ বছর পাঠ্যবই বেশি পড়তে হবে। কিছু টপিক আছে বুঝে নেয়ার মত আবার কিছু টপিক যেগুলো মুখস্থ করতে হয়। এ দুটোর, মধ্যে পার্থক্য করে নিতে হবে। অনেকে বলে সাধারণ জ্ঞান মানেই মুখস্থ; এটা ভুল, এখানে অনেক জিনিস বুঝতেও হয়। মুখস্থ নির্ভর পড়াশোনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। লিখিত ও বহুনির্বাচনী উভয়টিতে সমানভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি-

লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি সেটা হলো, পরীক্ষায় একটা প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে এবং সময় ও কম। তাই বাসায় নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে এবং দ্রুত প্রশ্ন লেখার প্র্যাকটিস করা। ৫ মার্কের লিখিত প্রশ্নের জন্য অনেক বেশি লেখার প্রয়োজন নেই, ৫ লাইন লিখাটাই শ্রেয়, অনুরূপভাবে ১০ মার্কের ক্ষেত্রে ১০ লাইন। আর এই প্র্যাকটিস বেশি বেশি করতে হবে। আর অবশ্যই দ্রুত লেখা এর সাথে হাতের লেখা স্পষ্ট হয়; তার জন্য বাসায় বেশি বেশি লিখে প্র্যাকটিস করতে হবে।

ইংরেজিতে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে টেক্সটবুকটি ভালোভাবে বুঝতে হবে। যেমন অনেক চ্যাপ্টার আছে যেগুলো রিটেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো এমনভাবে পড়তে হবে যাতে এগুলো থেকে প্রশ্ন আসলে সামারি লেখা যেতে পারে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড গুলো এর অর্থ বুঝে তা দিয়ে বাক্যে বানানো শিখতে হবে। পাশাপাশি অনুবাদের প্র্যাকটিস করতে হবে। অন্যান্য বিষয়গুলোতে নিজে লেখার দক্ষতা তৈরি করতে হবে।

বাংলার ক্ষেত্রে পাঠ্যবই লাইন ধরে ধরে পড়তে হবে। কারন কবিতা বা গল্পের কোনো লাইন দিয়ে বলা হতে পারে নিজের ভাষায় ব্যখ্যা করো বা মূলভাব লেখো। শুধুমাত্র কবিতায় কোনটি কোন শব্দটি কত বার আছে, কতবার দাঁড়ি আছে এসব মুখস্থ করে লিখিত-তে ভালো করা সম্ভব নয়। 

সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে ট্রেন্ডিং বিষয়গুলোর বিস্তারিত ভালোভাবে জানা। আরেকটি বিষয় হল, যে বিষয়ে লিখবে সেটার তথ্যগুলো সঠিকভাবে লিখতে হবে। বড় করে ইতিহাস না লিখে ঐ বিষয়ের ভেতরের তথ্যগুলো লেখার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

বহুনির্বাচনী পরীক্ষার প্রস্তুতি-

বাংলা 

বাংলা প্রথম পত্র বইয়ের প্রতিটা লাইন ভালোভাবে পড়তে হবে যেন ভেতর থেকে প্রশ্ন আসলে পারা যায়। আর কবিতার ক্ষেত্রে মুখস্থ করার দরকার নেই। কবিতার লাইন গুলো এবং এর শব্দগুলোর অর্থ ভালোভাবে জানতে হবে।

বাংলা ২য় পত্রে নবম-দশম শ্রেণীর ব্যাকরণ বইটি ভালোভাবে পড়া অবধারিতভাবে জরুরি। এটা থেকেই অনেক প্রশ্ন বিগত বছরে এসেছে। 

ইংরেজি

ইংরেজি বইটি সেগমেন্ট করে পড়তে হবে । টেক্সটবুকে কিছু চ্যাপ্টার আছে যেগুলো লিখিত ও বহুনির্বাচনী উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই বইটা অনেক বেশি ভালোভাবে পড়তে হবে।

২য় পত্রের ক্ষেত্রে ভোকাবুলারি ও গ্রামাটিক্যাল অংশ দু'টো আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। ভোকাবুলারি মনে রাখার ক্ষেত্রে একাধারে ২-৩ ঘন্টা না পড়ে, দিনে কয়েক ভাগ করে ২০ মিনিট করে পড়লে সুবিধা হয়য়। আর হ্যাঁ, অনেকে শুধু সিনোনিম-এনটোনিম পড়ে। এটা করা যাবে না; সব টপিকে জোড় দিতে হবে। এর ফলে কোন টপিকে কম দখল থাকলে অন্যটা দিয়ে পুষিয়ে নিতে পারবে।

আর গ্রামারের ক্ষেত্রে শুধু নিয়ম মুখস্থ করে ভাল করা সম্ভব না। পরীক্ষায় আসে ব্যতিক্রমীগুলো আর এগুলো পারার জন্য প্র্যাকটিস করতে হবে বেশি বেশি। এক্ষেত্রে ব্যারনস টোফেল, ক্লিপস টোফেল বইগুলো পড়া যেতে পারে।

সাধারণ জ্ঞান

সাম্প্রতিক বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে জানতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ও সাম্প্রতিক ঘরানার প্রশ্ন আসে অনেক। সাম্প্রতিক ঘরানার মানে হলো সাম্প্রতিক কোন ঘটনার সূত্র ধরে ঐ ঘটনার সাথে সম্পর্কিত অতীত ইতিহাস থেকে প্রশ্ন করা হতে পারে। যেমন সম্প্রতি সুয়েজ খালে একটি জাহাজ আঁটকে পড়েছিলো। এই ঘটানার সূত্র ধরে প্রশ্ন আসতে পারে সুয়েজ খাল কত সালে খনন করা হয়েছে, এর আয়তন কত, মিশর সুয়েজ খাল কবে জাতীয়করণ করেছিলো ইত্যাদি। এইভাবে সাম্প্রতিক বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে অতীতটাও জানা জরুরি।

সর্বোপরি শুধু পড়াশোনা করলে হবেনা, পুরো বিশ্ব একটি খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে সুস্থ থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। তাই কোনমতেই অসাবধানতাবশত অসুস্থ হওয়া চলবে না। শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে।

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল