মাহমুদুল হাসান, কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রীরাও। ‘মুজিব: একটি তর্জনী গর্জন, একটি জাতির অভ্যূদয়’ শীর্ষক উন্মুক্ত বক্তব্য প্রতিযোগিতায় মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটা থেকে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত ওই হলে উপস্থিত ছিলেন তারা।
এদিকে, ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অবগত থাকলেও অনুষ্ঠানে নেত্রীদের উপস্থিতির ব্যাপারে জানেই না হল প্রশাসন। অথচ, ছেলেদের হলে মেয়ে শিক্ষার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রে রীতি অনুযায়ী হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বা অনুমতির প্রয়োজন৷
সচেতন মহল বলছে, এই ঘটনা ছাত্রলীগ কর্তৃক হল প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করার আরেকটি নজির। পাশাপাশি হলে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকার উদাহরণ।
অনুষ্ঠান চলাকালীন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কুবির দুই ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী ও শেখ হাসিনা হলে থাকা পদধারী ৬ জন নেত্রী অতিথির সারিতে। প্রশাসন বলছে, ছাত্রদের হলে কোনো কারণে ছাত্রীরা ঢুকতে গেলে সেখানে প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি, হস্তক্ষেপ এবং ব্যবস্থাপনার দরকার হয়। একই রীতি ছাত্রী হলের বেলাতেও। তবে এই ক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলাম হল প্রশাসন বলছে, নজরুল হল শাখা ছাত্রলীগ নারী নেত্রীদের আসার ব্যাপারে হল প্রশাসনকে জানায়নি, অনুমতিও নেয়নি। শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জানিয়েছে। অনুষ্ঠানে হল প্রশাসনের কাউকে রাখা হয়নি, এমনকি অনুষ্ঠান চলাকালীন হল প্রশাসনের কাউকে সেখানে দেখাও যায়নি।
অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা দেবনাথ বলেন, ‘আমরা যারা গিয়েছিলাম তারা সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গিয়েছিলাম। যারা আয়োজক তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবে। এছাড়া যাওয়ার আগে আমরা আমাদের হলের প্রভোস্টকে জানিয়ে গিয়েছিলাম।’
এ বিষয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রীরা এসে আমাকে বলেছে তারা তিন জন নজরুল হলের ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবে। তবে, ওই হলে প্রভোস্ট বা দায়িত্বশীল কেউ ছিল কি না সেটা জানা নেই।’
কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, ‘আমাদের হল প্রশাসন জানতো এবং আমাদের হলের আবাসিক শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসের আশেপাশেই ছিল নিরাপত্তার স্বার্থে।’
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘এটা তো হল প্রশাসনের বিষয় না। এটা আমাদের শাখা ছাত্রলীগের আয়োজিত প্রোগ্রাম যেখানে প্রত্যেক হলের সভাপতি-সেক্রেটারি ইনভাইটেড। সাংগঠনিকভাবে হলের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি যেকোনো হলে যেতে পারে। এটা একটা রাজনৈতিক প্রোগ্রাম এমন তো না যে মেয়েরা সেখানে ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছে।’ এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা টানেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলে মেয়েরা হল প্রশাসনকে অবহিত না করে যায় কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হল প্রশাসনকে অবহিত না করে প্রোগ্রাম করা এটা তো বলিনি। হল প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েই প্রোগ্রাম করে। তবে আমাদের রাজনৈতিক প্রোগ্রামে গেস্ট কারা আসবে এটা তো আমাদের সাংগঠনিক ব্যাপার বা ব্যক্তিগত বিষয়। এ ব্যাপারে তো হল প্রশাসনকে জিজ্ঞাসা করার কোনকিছু নেই।’
কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মিহির লাল ভৌমিক জানান, ‘ছাত্রলীগ নিজেদের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান করেছে বলেই কোনো কর্মকর্তা বা শিক্ষক সেখানে নেই। তাদের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে হল প্রশাসন, প্রক্টর সবাই অবগত। তবে হলে মেয়ে শিক্ষার্থী নিয়ে আসার ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না। মাত্র আপনার কাছ থেকে অবগত হয়েছি।’
এ বিষয়ে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি জানি না। হলের ভিতরের প্রোগ্রামে আমরা ইন্টারফেয়ার করি না। প্রভোস্ট আমাকে ইনফর্ম করে নি। হলের প্রভোস্ট আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্হা নিতে পারবো।’
সময় জার্নাল/এলআর