মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ব্যাপক সংঘর্ষ, নিহত ১৯ পুলিশ

শনিবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২
মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ব্যাপক সংঘর্ষ, নিহত ১৯ পুলিশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু শহরে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) হামলায় দেশটির সীমান্তরক্ষী পুলিশের অন্তত ১৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। মংডু পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকি আরাকান আর্মির দখল এবং পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের পর রাখাইনে ফের বিমান হামলা শুরু করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।

থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের দৈনিক দ্য ইরাবতি বলছে, বুধবার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মংডু শহরের একটি তল্লাশি চৌকি দখলে নিয়ে মিয়ানমারের ১৯ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে আরাকান আর্মি। এ সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা ওই তল্লাশি চৌকি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য অস্ত্র লুট করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে ইরাবতি বলেছে, বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অন্তত তিনবার হামলা চালিয়েছে। মংডুর এক বাসিন্দা ইরাবতিকে বলেছেন, সকালের দিকে দুটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বিকেলের দিকে আরও দুটি যুদ্ধবিমান এবং দুটি হেলিকপ্টার থেকে ফের হামলা চালানো হয়েছে।

মিয়ানমার জান্তা বলেছে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তল্লাশি চৌকির দখল পুনরুদ্ধারে সৈন্যরা মংডুর ওই এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অভিযানে সৈন্য সংখ্যা এবং গোলাবারুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেছেন, বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলা চালানোয় মাটি কেঁপে উঠেছে। বোমার আওয়াজ এত তীব্র ছিল যে, অনেকে কিছু সময়ের জন্য কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছিলেন না।

সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির সদস্যরা হামলা শুরু করায় গত ২ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পালেৎওয়া শহর, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের মংডু ও এর আশপাশে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়েছে।

আরাকান আর্মির হামলার পর থেকে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের পাশাপাশি মিয়ানমারের সৈন্যরা ছয়টি স্থল ঘাঁটি থেকে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ গোলা বর্ষণ করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় মংডু এবং এর পার্শ্ববর্তী বুথিডং শহরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

এর আগে, বুধবার পালেৎওয়ার মায়েক ওয়া গ্রামের কাাছে গোলাবর্ষণে মিয়ানমার জান্তার অন্তত ১০ সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আরাকান আর্মি। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকেও রাখাইন রাজ্যের আন শহরে আরও কয়েকজন সৈন্যকে হত্যার দাবি করেছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠী। 

রাখাইনের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ির বহর আন শহরের মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় আরাকান আর্মির সদস্যদের অতর্কিত হামলার মুখোমুখি হয়। এই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ি জ্বলছে।

ফের বাংলাদেশে পড়ল মিয়ানমারের গোলা

এদিকে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে নতুন করে আরও দুটি গোলা বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে নিক্ষেপ করা হয়েছে। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় গোলা দুটি পড়ে। এর আগে গত রোববার ও বৃহস্পতিবারও মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল এসে পড়েছিল বাংলাদেশে।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলাম আজ দুটি গোলা বাংলদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুটি যুদ্ধবিমান এবং দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার টহল দেয়। যুদ্ধবিমান থেকে প্রায় ৮-১০টি গোলা ছোড়া হয় আর হেলিকপ্টার থেকেও ৩০-৩৫টি গুলি করা হয়। এ সময় বাংলাদেশের সীমানা পিলার ৪০-এর ১২০ মিটার অভ্যন্তরে যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা এসে পড়ে।

অতীত ফিরছে?

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলার পর রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত মংডু, বুথিডং শহরে রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযান শুরু করেছিল মিয়ানমার। রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এই অভিযান রোহিঙ্গাদের গণহত্যার উদ্দেশে চালানো হয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

রাখাইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগের মুখে সেই সময় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তার আগের তিন দশকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সহিংস নির্যাতন থেকে বাঁচতে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

দফায় দফায় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় সেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়ে চুক্তি ও আলোচনা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। এর মাঝেই রাখাইনে ফের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর স্থল ও আকাশ থেকে চালানো হামলায় বাংলাদেশ সীমান্তমুখী ঢল শুরু হতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল