আজ কবি ফজল শাহাবুদ্দীনের ৮৫ তম জন্মদিন। কবি ফজল শাহাবুদ্দীন ব্রাক্ষ্মবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার শাহপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে ৭৮ বছর বয়সে কবি ফজল শাহাবুদ্দীন ইন্তেকাল করেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্প-সাহিত্যের পত্রিকা ‘জলছবি’ বরেণ্য এই কবির স্মরণে চারশত পৃষ্ঠার বৃহৎ কলেবরে একটি বিশেষ স্মরণ সংখ্যা প্রকাশ করেন।
বাংলা কবিতার একটি আলাদা কণ্ঠস্বর কবি ফজল শাহাবুদ্দীন। কবিতার দীর্ঘ রাজপথের সারথী তিনি। তিনি একটি কবিতা আন্দোলন। কবি এবং ব্যক্তি মিলে তিনি সৃষ্টি করেছেন নিজস্ব জগৎ। তাঁর জগতে তিনি একা এবং একাকী। তাঁকে খুব সহজে চেনা যায় তাঁর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের নিরিখে। অনন্ত ও আন্তরীক্ষের গোপন রহস্য চিহ্নিত করেছেন তিনি। করেছেন তাঁর কবিতার শরীরে। তিনি পঞ্চাশের কবি। শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী এবং ফজল শাহাবুদ্দীন চারজনই চারচারটি নিজস্ব জগতের ¯্রষ্টা। বেশ কিছু দীর্ঘ কবিতা রচয়িতা তিনি। দীর্ঘ কবিতার প্রায় সবকটি প্রকৃতি ও প্রেমের আন্দোলনের দ্যুতিতে উজ্জ্বল। বাংলা কবিতাকে ঋদ্ধ করেছেন কবি ফজল শাহাবুদ্দীন। বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার জনক তিনি। তার উপন্যাস ও গল্পসমূহ ‘চির আধুনিক ও প্রেমময়।’
তিনি দেখিয়েছেন বাংলা কবিতাকে কিভাবে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে হয়। কীভাবে বাংলা কবিতা হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক। তারই একান্ত প্রচেষ্টায় আয়োজন করা হয়েছিলো বসন্তকালীন কবিতা উৎসব। এবং এ উৎসব ছিলো আন্তর্জাতিক। বাংলাদেশের ইতিহাসে সার্থক আয়োজিত আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব ছিলো এটি। এ উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের বেশ কটি দেশের প্রথিতযশা কবিবৃন্দ। তিনি একজন ভাষা সৈনিক। ৫২’র সেই উত্তাল দিনগুলোতে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কবিতা লিখে হয়েছিলেন তৎকালীন সময়ে পাক শাসকের বিরাগভাজন। তার পরিচর্যা ও পরিমার্জনায় অসংখ্য তরুণ শুদ্ধ কবিত চর্চার সুযোগ পেয়েছিলো। পরবর্তীকালে তারা নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে পেরেছে।
তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সংখ্যা তৃষ্ণার অগ্নিতে একা, অকাক্সিক্ষত অসুন্দর, আততায়ী সূর্যাস্ত, অন্তরীক্ষে অরণ্য, সান্নিধ্যের আর্তনাদ, আলোহীন অন্ধকারহীন, সনেটগুচ্ছ, অবনিশ্বর দরোজায়, আমার নির্বাচিত কবিতা, হে নীল সমুদ্র হে বৃক্ষ সবুজ, লংফেলোর নির্বাচিত কবিতা, দিকচিহ্নহীন, ছিন্নভিন্ন, কয়েকজন, জখন জখম নাগমা, ঝবষবপঃবফ চড়বসং, ঝড়ষরঃঁফব, ঞড়ধিৎফং ঃযব ঊধৎঃয, বাতাসের কাছে, ছায়া ক্রমাগত, নিসর্গের সংলাপ, পৃথিবী আমার পৃথিবী, ক্রন্দনধ্বনি, ক্রমাগত হাহাকার।
কবি ফজল শাহাবুদ্দীন ১৯৮৮ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা সালে একুশে পদক এবং ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
কবি ফজল শাহাবুদ্দীন আজ আমাদের মাঝে নেই। আছে তাঁর সৃষ্টিভা-ার। তাঁর কবিতাজগৎ। তাঁর সৃষ্টিই কথা বলবে তাঁর হয়ে। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁরই কবিতার পৃথিবীতে। বাংলাদেশের বরেণ্য আন্তরীক্ষের কবি ফজল শাহাবুদ্দীনের ৮৫ তম জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
লেখক: জামসেদ ওয়াজেদ, সম্পাদক, জলছবি
সময় জার্নাল/