ইসাহাক আলী, নাটোর:
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জেরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার লোকজনের হামলায় আহত জামিউল আলীম জীবন মারা গেছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মারা যান। জীবনের চাচা ও নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি এস এম ফখরুদ্দিন ফুটু মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে ফেসবুকে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়ায় প্রতিবেশী এবং নিকটাত্মীয় ফরহাদ হোসেন (৫৩) ও তার ছেলে জামিউল আলীম জীবনকে (২০) মারপিট করে আহত করে চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে জীবন মারা গেলেও তার বাবা এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন্। মারামারির ঘটনায় নলডাঙ্গা থানায় আজ বিকালে মামলা করে জীবনের পরিবার।
এর আগে গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার রামশারকাজীপুর আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে এই মারপিটের ঘটনা ঘটে। আহত ফরহাদ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন শাহের ছেলে আর জামিউল আলীম জীবন ফরহাদ হোসেনের ছেলে। জীবন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও আওয়ামীলীগ নেতা এস এম ফিরোজের ভাতিজা।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, গত শনিবার ( ১৭ সেপ্টেম্বর) রামশারকাজীপুর আমতলী বাজারে জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের ভিতর থেকে মাইকের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে শালিশী বৈঠক বসিয়ে সন্দেহ ভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ভয়ভীতি দেখায় ও শাসন গর্জন করে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জামিউল আলিম জীবনকে জোড়পুর্বক দোষী সাব্যস্ত করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ।
পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামিউল আলিম জীবন নিজেকে নির্দোশ দাবী করে এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আসাদ।
গতকাল সোমবার রাতে জামিউল আলিম জীবন আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদসহ তার লোকজন তাকে ডেকে পাঠায়। এক পর্যায়ে তার সাথে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এবং জীবনকে কিল ঘুষিসহ মারপিট করতে থাকে। এ অবস্থায় তার বাবা ফরহাদ হোসেন এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে ফরহাদ হোসেন মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। এসময় স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদও হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই এসএম ফকরুদ্দিন ফুটু জানান, তার ভাই ফরহাদ হোসেনের মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন আর ভাতিজা জামিউল আলিম জীবনকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। তাদের উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ অন্যায় ভাবে তার ভাই ও ভাতিজাকে বেদম মারপিট করেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চান তিনি।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এ বিষয়ে আহত ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদী হয়ে চেয়ারম্যানসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে মঙ্গলবার বিকালে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, তাকে জড়িয়ে ফেসবুক লাইভে মিথ্যাচার করায় জীবনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকলে তার বাবা ফরহাদ হোসেন পিছন থেকে তাকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করায় আত্মরক্ষার জন্য তিনি মেরেছেন। অভিযোগ কারী বাবা ছেলে দুজনই নেশাখোর বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তবে মারা যাওয়ার পর তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এমআই