ডাঃ জোবায়ের আহমেদ :
শুধু জানিয়ে গেলেন মেনে নেওয়ার বিনয়টুকু ছাড়া আমার আর কিছু ছিলো নাঃ
কুমিল্লা বার্ডে তৃতীয় বিশেষ ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এর souvenir এ আমাদের প্রিয় মানুষ ডাঃ মঈন উদ্দিন স্যার তাঁর প্রিয় উক্তিতে লিখেছিলেন
"তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্বের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আল হাদীস।"
নাদামপুরের সবুজ গাঁয়ে ঘুমিয়ে গেছেন চিরনিদ্রায়।
এই ঘুমিয়ে পড়ার আগে একটু ঘুমাতে চেয়েছিলেন শান্তিতে কিন্ত তখন সেখানে পরিবেশ ছিলো না ঘুমানোর।
"বলেছিলেন, আমি দাঁড়িয়ে আছি।
একটু ঘুমাতে পারলে আরাম হতো।
বাসায় গেলে আরাম হতো।
এখানে ঘুমানো ইম্পসিবল।।"
বাঁচার আকুতি নিয়ে একটু আইসিইউ তে যেতে চেয়েছিলেন।
বলেছেন " তোমরা আমাকে ওসমানীর আইসিইউ তে নিয়ে যাও।"
"কারো কাছে আকুলতা জানিয়ে বলেছেন,আমার জন্য একটা আইসিইউ এম্বুলেন্স ম্যানেজ করা যায়না।"
জুনিয়র চিকিৎসকদের জন্য পিপিই বেশি দরকার বলে জানিয়েছিলেন।
তারা বেশি এক্সপোজড।
বলেছিলেন, আমি কাজ করছি পিপিই ছাড়া।
এক বুক অভিমান, নীরব বেদনায় আহত নীল হৃদয় ও নীরব অশ্রুপাত করেই সিলেট থেকে ঢাকা গিয়েছিলেন নিজ উদ্যোগে নিজ ব্যবস্থায়।
কেউ একটু মায়ার পরশ দেয়নি।
২৪ ঘন্টা কেটেছে অনাদর ও অবহেলায়।
যখন সিলেট থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন, তখন এই মানুষটার বুকের ভেতর কেমন পাহাড়সম যন্ত্রনা হচ্ছিলো তা হয়তো বুঝাতে চাননি কাউকে।
আইসিইউ এর বেডে শুয়ে শুয়ে নিশ্চয়ই ভাবনার অতলে হারিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের মিথ্যাচার শুনে।
যখন শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছিলো,বুকটা ভারী হয়ে যাচ্ছিলো,বুকের ভেতর একটু অক্সিজেনের জন্য হাহাকার,
তখন নিশ্চয়ই খুব মনে পড়েছে ছোট দুইটা ছেলে কে।
চৌধুরী রিফাত জাহান আপুকে দেখতে নিশ্চয়ই খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তখন।।
জীবনের স্মরণীয় ঘটনা যখন বিয়ে তখন কি মনে পড়েছিলো সেই লাজুক মেয়েটির আনত চোখের কথা।
নিশ্চয়ই মনে পড়েছে টোনাটুনির সংসারের কথা।
কতটা পথ পাড়ি দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন একজন দেশ সেরা মেডিসিন স্পেশালিষ্ট ও সহকারী অধ্যাপক।
স্বপ্নগুলো নিশ্চয়ই আরো বড় ছিলো।।
কত মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।
মায়ার হাত বাড়িয়েছেন গরীব দুঃখী অসহায়ের মাঝে।
কত মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ ফিরেছেন জীবনের ছন্দে উনার সেবার হাতের স্পর্শ পেয়ে।
কত তরুণ চিকিৎসক ও ছাত্র ছাত্রীকে হাতে কলমে শিখিয়েছেন জীবন রক্ষাকারী বিদ্যা,দেখিয়েছেন স্বপ্ন, জুগিয়েছেন সাহস,দিয়েছেন অনুপ্রেরণা।।
যেই পথ দিয়ে হেঁটে গেছেন, বিলিয়েছেন মায়া।
শেষ নিঃশ্বাস বায়ু নেওয়ার আগে জানিয়ে গেলেন আমাদের এই অবহেলা,অযত্ন ও অবজ্ঞা মেনে নেওয়ার বিনয়টুকু ছাড়া আর তাঁহার কিছু ছিলো না।