বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, একই সুতায় গাঁথা

সোমবার, অক্টোবর ১০, ২০২২
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, একই সুতায় গাঁথা

ডা: মোহাম্মদ সাঈদ এনাম: 

স্বাস্থ্য বলতে আমরা সাধারণত শারীরিক স্বাস্থ্যকেই বুঝে থাকি। কিন্তু মানুষ শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই  সুখী বলা যায় না। মানুষ যেহেতু শরীর ও মনের সমন্বয়ে গঠিত, সেহেতু তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও একই সুতায় গাঁথা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য বলতে একজন মানুষের শুধু ভেতর কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা না থাকাকে বোঝায় না। বরং মানুষ হিসেবে নিজের সক্ষমতাকে অনুধাবন করার সক্ষমতা, আত্মনিয়ন্ত্রণের ভেতর দিয়ে সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকা, দৈনন্দিন জীবনের পারিপার্শ্বিক চাপের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলা এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখার সক্ষমতাকেই মানসিক স্বাস্থ্য বলে।

মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতাঃ

মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বলতে আমরা বুঝি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য উপদেশ মেনে চলা, মানসিক চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা, সঠিক চিন্তা ভাবনা প্রেক্টিস করা, সঠিক আচার আচরণ এ নিজেকে অভ্যস্ত করা এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা।

করোনা ও মানসিক স্বাস্থ্যঃ

কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, সামাজিক আচরনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময়ে শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যে উপেক্ষিতও হচ্ছে। তাদের আচরণজনিত সমস্যা প্রকট হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা কম হয়েছে। তারা রাত জাগছে, মোবাইল ফোনে বেশি সময় কাটাচ্ছে। বিভিন্ন পর্ণ সাইটে ঢুকছে । মা বাবার অবাধ্য হচ্ছে। 

করোনাকালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতায় বাংলাদেশ শীর্ষে।এই অবস্থা মোকাবিলা করতে হলে শিশু-কিশোরদের মনোবিকাশে যত্নশীল  হবে। করোনায় স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় তারা নানান বদ অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েছে।

সারা দেশে তিন কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় বা রোগে ভুগছেনঃ

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে আমাদের ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে ৩ কোটির ও বেশী মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় ভুগছে এবং  এদের সিংহ ভাগ সঠিক চিকিৎসা আওতায় আসছেন না।

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় স্বাস্থ্য সচেতনতা কেন জরুরি?

 নানা কুসংস্কার আর অসচেতনতার কারণে মানসিক রোগ তা গোপন করা হয়। মানসিক রোগ কে ক্ষেত্র বিশেষে পাপের ফল ও ভাবা হয়। রোগীরা সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়, প্রতারিত হয়।। সারা পরিবার দুর্বিষহ জীবন যাপন করে। 

মানসিক রোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা।

কি কি মানসিক রোগ বেশী দেখা যায়?

আমাদের সমাজে বিষণ্নতা, অ্যাংজাইটি, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, সাইকোসিস ডিজঅর্ডার, সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ, ওসিডি, হেলথ অ্যাংজাইটি, পোস্ট ট্রমাটিক ট্রেস ডিজঅর্ডার, প্যানিক অ্যাটাক, ফোবিয়া, কনভারশন ডিজঅর্ডার, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার এর রোগী বেশী। শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষ যেকোনো বয়সের মানুষই মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 

মানসিক রোগের কারণ?

জেনেটিক, নেতিবাচক পরিবেশে বেড়ে উঠা, নেতিবাচক অভিজ্ঞতার ভেতর বেড়ে ওঠা, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষণ প্রক্রিয়া/লার্নিং প্রসেস, দুর্বল পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক, দরিদ্রতা, মানসিক চাপ, লোভ, ঘৃণা, সর্বোপরি জীবন ও জগৎ সম্পর্কে অবাস্তব ও অসত্য দৃষ্টিভঙ্গি লালন ও চর্চা করা মানসিক স্বাস্থ্য–সমস্যা তৈরিতে প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

মানসিক রোগীদের অপচিকিৎসাঃ

মানসিক রোগীদের বিশাল একটা অংশ নানা রকম অপচিকিৎসার দ্বারস্থ হয়।এতে রোগী দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে থাকে, রোগ জটিল হয়। প্রতারিত হয়ে রোগী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটা সময় তারা হতাশ হয়ে যায়, হাল ছেড়ে দেয়। 

কেউ কেউ শেষ চেষ্টা হিসেবে চিকিৎসা নিতে আসেন। তত দিনে জটিলতা বহুগুণে বেড়ে যায়। সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসে। 

সময়মতো রোগের লক্ষণ নির্ণয় করে তার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। যেন আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক রোগের কষ্ট ও ভয়াবহতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতো। শারীরিক রোগের মতোই গুরুত্ব দিয়ে এর চিকিৎসা হওয়া জরুরি।

সচেতনতা বাড়ানোর উপায়ঃ

মানসিক রোগ নিয়ে সামান্য সচেতনতা মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অসামান্য অবদান রাখতে পারে।
মানসিক রোগ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ও কুসংস্কার দূর করার জন্য এ বিষয়ে নিয়ে সর্বদা বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করা, 
মানসিক রোগীর পরিবর্তে রোগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া ও অন্যকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করা 
মানসিক রোগকে রোগ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া ও অন্যান্য শারীরিক রোগের মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা 
অস্বাভাবিক  আচরণ দেখা দিলে সাইকিয়াট্রিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে লেখালেখি করা 
ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম, নাটিকা ও আলোচনা করা 
নাটক–সিনেমার মাধ্যমে মানসিক রোগ ও তার চিকিৎসাসংক্রান্ত সঠিক তথ্য তুলে ধরা। 
মানসিক রোগকে গালি হিসেবে ব্যবহার না করা। 
মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুযোগ বাড়ানো 
কমিউনিটি ক্লিনিকে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দেওয়া 
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়), অফিস বা কর্মস্থলগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা ও পাঠ্য বইয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে গল্প প্রবন্ধ প্রচার করা।

শরীরের যেমন সমস্যা হয়, মনের ভেতরও তেমনি সমস্যা হয়। মানসিক স্বাস্থ্য–সমস্যা এবং চিকিৎসা বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য ও জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকে এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য পীর, ফকির, ওঝা, কবিরাজ ও হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যায় এবং অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে ফলে রোগ দীর্ঘায়িত হয়, বাড়ে জটিলতা। 

আমাদের সবাইকে মানসিক রোগী সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, মানসিক রোগী যাতে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার আওতায় আসে সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

ডা. মোহাম্মদ সাঈদ এনাম 
এম বি বি এস (ডিএমসি), বিসিএস
সহকারী অধ্যাপক 
সাইকিয়াট্রি, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল 
ইন্টারন্যাশনাল ফেলোঃ আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল