আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরানের ইভিন কারাগারে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। এবং কারাগারের ভেতরে গোলাগুলির শব্দও শোনা যাচ্ছে। এতে আটজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা এই খবর জানিয়েছে। তেহরানে এই কারাগার রাজনৈতিক বন্দী, সাংবাদিক ও বিদেশী নাগরিকদের আটকে রাখার কারণে বিশেষভাবে পরিচিতি।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কারাগার থেকে আগুন আর ধোঁয়া উড়ছে। সেই সাথে ভিডিওতে বন্দুকের গুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে, আগুন এখনো জ্বলছে।
ইরানে গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
গত মাসে ২২ বছর বয়সী কুর্দিশ ইরানিয়ান মাশা আমিনি পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়ার পর ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কর্মকর্তাদের দাবি, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু মাশার পরিবারের দাবি, তিনি সুস্থ ছিলেন। নৈতিক পুলিশের পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে।
কারাগারে আগুনের বিষয়ে বিবিসি পার্সিয়ান বিভাগের সাংবাদিক রানা রাহিমপুর বলছেন, কারাগারের ঘটনার সাথে সম্প্রতি বিক্ষোভকারীদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ততা থাকতেও পারে। কারণ শত শত বিক্ষোভকারীকে এই কারাগারে পাঠানো হয়েছে, বলছেন রানা রাহিমপুর।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, বিক্ষোভের সাথে কারাগারে আগুনের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই বরং এর পেছনে অপরাধীরা রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, সাধারণ অপরাধীরা এই দাঙ্গা ঘটিয়েছে, রাজনৈতিক বন্দীরা এর সাথে জড়িত নয়।
তবে ইরাকের সরকারবিরোধী পর্যবেক্ষক গ্রুপ ১৫০০ তাসভিরের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে কারাগারের ভেতর থেকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ শ্লোগান শোনা যাচ্ছে- যে শ্লোগান সাম্প্রতিক বিক্ষোভকারীরা নিয়মিত ব্যবহার করছেন।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কারাগারের বাইরে থেকে বিভিন্ন বস্তু ভেতরে ছুঁড়ে মারা হচ্ছে, এরপর বিস্ফোরণ ঘটছে।
কারাগারের ভেতর থেকে ইরানের সরকারি টেলিভিশনকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তেহরানের গভর্নর দাবি করেছেন, ছোটখাটো অপরাধীদের একটি দল এই দাঙ্গা শুরু করেছে, তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে সেখানে আসলে কী পরিস্থিতি রয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্ত রয়েছে বলে বলছেন বিবিসি পার্সিয়ানের সাংবাদিক কাসরা নাজি। কারণ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কারাগারে এখনো আগুন জ্বলছে এবং গোলাগুলির শব্দ আসছে।
আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কারাগারের যে অংশে রাজনৈতিক বন্দীদের রাখা হয় এবং বিক্ষোভের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের যে অংশে পাঠানো হয়েছে, তার ছাদের ওপর কারাবন্দীরা বসে রয়েছেন।
রয়টার্সকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ‘ইভিন কারাগারের দিকে যাওয়া সড়কগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক অ্যাম্বুলেন্স ওই সড়কে। এবং কারাগারের ভেতর থেকে এখনো অনেক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।’
কয়েকজন কারাবন্দীর পরিবার জানিয়েছে, অন্য সময়ে পারলেও তারা তাদের স্বজনদের সাথে এখন টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারছেন না। কারাগারের আশেপাশের ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সময় জার্নাল/এলআর