সময় জার্নাল প্রতিবেদক, ঢাকা: একসপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমেনি বরং আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনা সংক্রমণ রোধে এক সপ্তাহের জন্য আরেক দফা লকডাউন বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। পবিত্র রমজানে দোকান পাট, শপিংমল খোলারাখাসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর পক্ষ থেকে লকডাউন শিথিল করার চাপও রয়েছে। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিসহ সব বিষয় সামনে রেখে লকডাউন নিয়ে আজ সোমবার ভার্চুয়ালি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। সেখানে তথ্য ভিত্তিক সার্বিক আলোচনা হবে। তারপর লডকাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
লকডাউন বাড়ছে কি না জানতে চাইলে রোববার দুপুরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘লকডাউন বাড়ানোর পরামর্শ তো আছেই। তবে সোমবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘একেক এলাকায় একেক ধরনের প্রকোপ ও আক্রান্তের হার। সব বিষয় ধরে তথ্য ভিত্তিক আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ যাবে। তারপর তিনি লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সবাই যদি মাস্ক পরতো এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতো তাহলে এতো সংক্রমণ হতো না। যতক্ষণ পর্যন্ত করোনা জিরোতে না যাবে ততদিন পর্যন্ত নিজস্ব সুরক্ষার জন্য প্রত্যেককে ডাবল মাস্ক পরতে হবে এবং শারিরীক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।’
মন্ত্রণায়ল সূত্রে জানা গেছে, এবারের লকডাউনে কিছু বিধি নিষেধে পরিবর্তন আসতে পারে। এলাকা ভিত্তিক কড়া লকডাউন দেওয়া হতে পারে কিংবা শিথিল করা হতে পারে। জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটিও এ বিষয়ে সরকারের কাছে মতামত তুলে ধরেছে। তাদের মতামত, সব জায়গায় করোনা সংক্রমণ প্রকোপ এক রকম নয়। কোথাও বেশি কোথাও কম। তাহলে কেন সব এলাকা লকডাউনের আন্ডারে আসছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ বিষয়ে বিশ্লেষণ করা হবে। আলাপ আলোচনার পর এলাকাভিত্তিক লকডাউন কিংবা এলাকাভিত্তিক লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে এ অবস্থায় লকডাউন শিথিল করা হবে নাকি আরও কড়া হবে এমন এক প্রশ্নে জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে শিথিল হবে নাকি আরও কড়া হবে সবকিছু নির্ভর করছে অনেকগুলো প্রসঙ্গের ওপর। বিভিন্ন ধরনের পয়েন্ট আছে, মতামত আছে সবগুলো মতামত বাস্তবতার নিরিক্ষে আলোচনা হবে।’
জানা গেছে, আজ লকডাউন বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে এই সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। লকডাউন ঘোষণা করে গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। লকডাউন পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরমধ্যে বেশ কিছু বিধি নিষেধ শিথিল করা হয়।
সীমিত পরিসরে ব্যাংক খেলা রাখার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যপ্রাচ্যগামী অভিবাসীদের দাবির মুখে শনিবার থেকে বিশেষ ফ্লইট চালু করা হয়।
এদিকে, আগামী ২২ এপ্রিল থেকে মার্কেট ও দোকান খুলে দেওয়ার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সামনে ঈদুল ফিতর। লকডাউন দীর্ঘমেয়াদী হলে অন্যান্য পেশাজীবীদের আন্দোলনে নামার আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এর আগে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে। তবে ওই সময়ে গণপরিবহন, মার্কেট সীমিত সময়ের জন্য চালু রাখা হয়।
সময় জার্নাল/আরইউ