শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

সারা দেশ থেকে ৩৬ ঘণ্টা ‘বিচ্ছিন্ন’ বরিশালেও বড় সমাবেশ সম্পন্ন

শনিবার, নভেম্বর ৫, ২০২২
সারা দেশ থেকে ৩৬ ঘণ্টা ‘বিচ্ছিন্ন’ বরিশালেও বড় সমাবেশ সম্পন্ন

সময় জার্নাল ডেস্ক:


বরিশালে শনিবার বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে তিন দিন আগে থেকেই নানা পন্থায় শহরে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতা, কর্মী, সমর্থকেরা। সমাবেশ ঘিরে সড়ক ও নৌপথের সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বরিশাল। সর্বশেষ ক্ষমতাসীন দলের মিছিল ও মহড়াকে কেন্দ্র করে ছিল শঙ্কাও। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বড় সমাবেশ করেছে বিএনপি। গণসমাবেশ ছিল ছয় ঘণ্টার ।


গতকাল বিকেলে বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) এই সমাবেশ হয়। সকল বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করার জন্য বরিশালবাসীকে অভিবাদন জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই সাফল্যের পেছনে টানটা কোথায়? এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘টানটা হচ্ছে আমার কলিজার টান, আমার অধিকারের টান। যে অধিকার আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান।’


জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও দলের পাঁচ নেতা-কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের পর বরিশালের এই সমাবেশ ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উত্তেজনা চলছিল। গত শুক্রবার সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বাস, ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, তিন চাকার যান, স্পিডবোট এবং অভ্যন্তরীণ সব গন্তব্যের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। এমনকি ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী লঞ্চও চলেনি। 


গতকাল সারা দেশ থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন ছিল বরিশাল। এমন বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক অংশ নেন। আগের চারটি বিভাগীয় সমাবেশের সময় বাধা ও পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বরিশাল বিভাগের বিএনপির নেতা-কর্মীরা আগেই চলে আসেন বরিশাল শহরে। গত বুধবার দুপুরের পর থেকে তাঁরা সমাবেশস্থলে জমায়েত হতে থাকেন। শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। দুপুর ১২টায় সমাবেশ শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হয়। তিন দিনের ধকলে মাঠে নেতা-কর্মীদের অনেককে ক্লান্ত দেখা যায়। যে কারণে দুপুরের দিকে অনেকেই মাঠ ছেড়ে আশপাশের সড়কের ফুটপাতে, ছায়ায় অবস্থান নিতে দেখা যায়।


‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়’

গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন প্রধান অতিথি। তিনি বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আবারও বলেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার যে হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।’


বর্তমান সরকারকে ‘ভোট চোর’ বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার ২০১৪ সালে ভোট চুরি করেছে, ২০১৮ সালে করেছে। এখন আবার নতুন করে নির্বাচন নিয়ে নতুন সব বুদ্ধি আঁটছে। নতুন নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এমন একটা ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে এটা বোধ হয় একেবারে নিরপেক্ষ হবে। ইভিএমে ভোটের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।


মির্জা ফখরুল বলেন, আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, সেই কমিশন নতুন করে নির্বাচন করবে এবং সেই নির্বাচনে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এটুকু কথা আপনাদের দিতে পারি, আন্দোলনের পরে যেই নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের পরে যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে, তাদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেশের সংকটগুলো সমাধান করা হবে।’১৫ মিনিটের বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব বিনা মূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকরি এবং ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। ১৪ বছর ধরে বিরোধী দল ও আলেম-ওলামাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, হামলা ও মামলা আওয়ামী লীগের বড় অস্ত্র। যাদের ওপর হামলা করে, আবার তাদের বিরুদ্ধেই তারা মামলা দেয়। আজকে আলেম-ওলামারাও রেহাই পাচ্ছেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। কেউ নিরাপদ নয় এখানে।


দেশের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন বলছেন আমি কী করব, বৈশ্বিক সংকট, ডলারের সংকট। কিন্তু তখন মনে ছিল না, যখন টাকাগুলো চুরি করে পাচার করছিলেন। সেই কানাডা, মালয়েশিয়া আর ইউরোপে বাড়ি বানাচ্ছিলেন, তখন মনে ছিল না?’ তিনি বলেন, ‘এমন ঢাকঢোল পেটাল যে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। হাতিরঝিলে আতশবাজি করল, সেই বিদ্যুৎ এখন আর নেই। সকালে হোটেলে ছিলাম, কমপক্ষে ১০ বার বিদ্যুৎ গেল আর এল। এই বিদ্যুতে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। এমন একটা জায়গা পাবেন না, এমন একটা ক্ষেত্র নেই, যেখানে তারা চুরি করেনি।’ ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কথা বলে’ এখন দুর্ভিক্ষের কথা কেন বলা হচ্ছে, সে প্রশ্নও তোলেন বিএনপির মহাসচিব।


এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এর ফয়সালা হবে কোথায়?’ নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলেন, ‘রাজপথে রাজপথে’। এরপর তিনি বলেন, ‘রাজপথে ফয়সালা করেই আমরা সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনব, যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেখিয়েছিলেন।’


বাংলাদেশ জেগে উঠেছে

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘বরিশাল এসে শুনলাম, চারদিকে বাধা হচ্ছে। ভয় পেয়ে গেলাম যে এই বাধার মধ্যে নদীনালার দেশ, বরিশালের লোকগুলো কীভাবে আসবে। যেভাবেই হোক তারা কিন্তু এসেই গেছে। এটা বিএনপির প্রতি ভালোবাসা এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা। সারা বাংলাদেশ আজকে জেগে উঠেছে। এদের কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না।’


আদবকায়দাও অবশিষ্ট রাখেনি

স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, এই দেশে আজ শিক্ষা নেই, সততা নেই, আওয়ামী লীগের কথায় ও কাজে মিল নেই, তারা দেশ থেকে আদবকায়দা অবশিষ্ট রাখেনি। দেশে কোনো মানবাধিকার নেই, দেশে সুস্থ রাজনীতি নেই, বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, দেশে ন্যায়বিচার নেই, মানুষের ভোটের অধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই। তাহলে কীভাবে দেশে একটি ন্যায়সংগত সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।


পদত্যাগ করে আসুন, খেলা হবে

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশ যখন একটি সংকটময় সময়ে, তখন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন ‘খেলা হবে’। তিনি বলেন, ‘খেলা তো হবে, তবে কার সঙ্গে খেলব। আওয়ামী লীগ হচ্ছে থার্ড ডিভিশনে টিম, আর বিএনপি হচ্ছে ফার্স্ট ডিভিশনের টিম। তাদের যদি ফার্স্ট ডিভিশনে খেলতে হয়, তাহলে আগে সরকার থেকে তাদের পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। তারপর মাঠে আসুন, খেলা হবে।’


এসএম



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল