সময় জার্নাল ডেস্ক:
কেউ খোলা মাঠে, কেউবা সড়কের পাশে, স্কুল-কলেজের বারান্দায় ও ছাদে। চাষের শুকনো জমিতে তাঁবু করে সেখানেও অবস্থান করছেন কেউ কেউ। গণপরিরহন বন্ধ। সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলারের দাপট। মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি। সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বাধা ও হুমকি। এতোকিছু উপক্ষো করে মানুষের ভিড় জমছে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে।
তাদের সবাই ফরিদপুরে বিএনপি’র সমাবেশে অংশ নিতে বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। ফরিদপুরে বিএনপি’র বিভাগীয় সামবেশ আজ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২/৩ দিন আগেই জড়ো হয়েছেন তারা।
সমাবেশের আগের দিনও রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সমাবেশে আসা এসব লোকজন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। অনেকেই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জেরার মুখে পড়েছেন।
এদিকে বিএনপির সমাবেশের আগের দিন থেকে ৩৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট ডাকে বাস মালিক সমিতি। এতে গতকাল সকাল থেকে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ফরিদপুর। বিপাকে পড়েন লাখ লাখ সাধারণ মানুষ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষও ধর্মঘটের মুখে পড়েছেন। বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশেকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের প্রবেশমুখে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। জেলার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ও তল্লাশি চৌকি বসিয়ে, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্রা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা থামিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ।
এসব যানবাহনে থাকা যাত্রীদের ব্যাগ চেক করে তাদের পরিচয় ও গন্তব্য জানতে চান। শুক্রবার শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, বাহির দিয়া সেতু এলাকায় পুলিশ তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা বলছেন, ফরিদপুরে প্রবেশ মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশি চালিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের টহল দিচ্ছেন।
ঢাকা-বরিশাল সড়কে ফরিদপুর শহরের মুন্সীবাজার এবং ফরিদপুর-চরভদ্রাসন সড়কের গজারিয়াতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। এসব এলাকা হয়ে আসা প্রতিটি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাহেন্দ্র, অটোরিকশা তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্যরা। লিমন নামের একজন বলেন, সকালে বাহির দিয়া সেতু এলাকা দিয়ে সদরে আসার পথে ব্যাটারি চালিত রিকসা থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কোথায় যাচ্ছি , কেন যাচ্ছি, বিএনপি’র সমাবেশে যাচ্ছি কি-না এসব জেনে তারপর ছেড়ে দেয়। আমার ব্যাগও তল্লাশি করে। নগরকান্দার বিএনপি নেতা সুলতান আহমেদ বলেন, বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে নগরকান্দার জয় বাংলার মোড়ে এলে পুলিশ আমাকে থামিয়ে দেয়। পরে অসুস্থ রোগী দেখতে যাচ্ছি বললে ছেড়ে দেয়। শহরের অনেক জায়গায় পুলিশের তল্লাশি চলতে দেখেছি।
এদিকে গতকাল ফরিদপুরে কোনো বাস চলাচল করেনি। ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়া সাধারণ যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যেতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ছোট ছোট যানে পথ ভেঙে ভেঙে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছেছেন। এতে অন্যান্য দিনের তুলনায় অতিরিক্ত কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। শহরের নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ড ও বড়পুল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া কিংবা ঢাকাগামী কোনো রুটেই বাস ছাড়েনি কিংবা আসেনি। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অপেক্ষমাণ যাত্রীরা।
ফরিদপুরের সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সভাস্থলের খোলা মাঠেই বিএনপি’র কিছু নেতাকর্মী স্লোগান দিচ্ছেন। পাশেই কেউবা হোগলার মাদুর অথবা পাটের বিছানা বিছিয়ে বসে কিংবা শুয়ে ঘুমাচ্ছেন। কেউ কেউ রান্না করা খাবার খাচ্ছেন।
সময় জার্নাল/এলআর