এম.পলাশ শরীফ, জেলা প্রতিবেদক:
জন্ম থেকে যাদের দুঃখে ভরা, তাদের আবার সুখ কোথায়? এতিম শিক্ষার্থীদের আকুতি। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে
একটি এতিমখানায় সরকারি বরাদ্দ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে এতিম শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের সহযোগীতায় কোন
মতে দিন পার করছেন তারা। সরকারি বরাদ্দের দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামে ৫৪ শতক জমির ওপরে ১৯৯৭
সালে স্থাপিত হয় পঞ্চগ্রাম মোহাম্মাদিয়া (সাঃ) এতিমখানাটি। একটি কাঠের টিনের ঘরে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট এখানে
এতিম শিক্ষার্থী রয়েছে ৯ জন। এদের রান্না ও দেখাশুনার জন্য নিয়মিত একজন বাবুর্চিও রয়েছে। খালের ওপারেই
পঞ্চগ্রাম ইউসুফিয়া আলিম মাদ্রাসা, ৯৭নং একরামখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় এ প্রতিষ্ঠান দুটিতে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম
শ্রেণীতে লেখাপড়া করে এ শিক্ষার্থীরা। ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিত এতিমখানাটিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের
মাধ্যমে এতিমদের ভরণ পোষনের জন্য সরকারি বরাদ্দ পেয়ে আসছেন।
২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ বরাদ্দের চেক হলেও পায়নি তাদের প্রাপ্য টাকা। সে কারনেই
শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। দৈনন্দিন তাদের খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা
কমিটি। বাকি, ধার দেনা করে দীর্ঘদিন চলছে তারা। এখন দোকানের টাকা পরিশোধ না করায় বাকিও দিতে
চাচ্ছেনা ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের বকেয়া পরিশোধের চাপ দিচ্ছেন। স্থানীয়দের সহযোগীতায় এ এতিম
শিক্ষার্থীদের দু-এক বেলা খাবার জুটলেও মাঝে মধ্যে জোটেনা তাদের খাবার। সুপেয় পানির নেই কোন ব্যবস্থা,
একটি কক্ষের ছোট তিনটি চৌকিতে রাত যাপন। গোসলের জন্য খালের জোয়ারের পানিই ভরসা। ঘাটের অভাবে
হাঁটু পানিতে কাদায় নেমে করতে হয় তাদের গোসল।
শিক্ষার্থী নয়ন হাওলাদার, রুম্মান খান, আব্দুল্লাহ হাওলাদার, সাব্বির খান, আব্দুর রহিম সহ ৯ শিক্ষার্থীরা বলেন,
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বন্যার মধ্যেও পূর্বের ঘরে বসবাস করেছি আমাদের এখনতো ভাল ঘর। জন্ম থেকে যাদের
দুঃখে ভরা, তাদের আবার সুখ কোথায়? তার পরেও নানাবিধ সমস্যার মধ্যেও স্থানীয়দের সকলের ভালবাসায় আমাদের
আত্মতৃপ্তি। সরকারি বরাদ্দ ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মর্তাদের প্রতি আকুতি জানান এতিম শিক্ষার্থীরা।
এতিমখানাটি পরিচালনার সমন্বয়কারী সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. হারুন শেখ, সভাপতি মো. ইমরান খান,
সদস্য শাহজাহান হাওলাদার, ইসাহাক হাওলাদার বলেন, এতিমখানা প্রতিষ্ঠাকালিন সময় একটি জরাজীর্ণ ঘর ছিলো,
পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় বসবাসের উপযোগী নতুন ঘর করা হয়েছে। নিয়মিত ৯ জন
এতিমদের খাবার জোগার করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের।
এবারের সরকারি বরাদ্দের টাকা না পেয়ে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। ব্যবসায়ীরাও আর বাকি দিতে
চাচ্ছে না। সরকারি বরাদ্দের টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ সর্ম্পকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকারিভাবে এ উপজেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১৬টি এতিমখানায় এতিমদের ভরণ পোষনের জন্য বরাদ্দ পেয়ে আসছে। তবে, জিউধরা পঞ্চগ্রাম মোহাম্মাদিয়া (সাঃ) এতিমখানাটির প্রয়োজনীয় অনলাইনে কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকায় বরাদ্দের চেক আপাতত স্থাগিত রাখা হয়েছে। বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআই