শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

তাঁতশিল্পের নবজাগরণে কাজ করে যাচ্ছি : আকাশ বসাক

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২২, ২০২১
তাঁতশিল্পের নবজাগরণে কাজ করে যাচ্ছি : আকাশ বসাক

আমি আকাশ বসাক। জন্মস্থান টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল গ্রামে। পেশায় ছাত্র, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করছি। আমার বাবা পেশায় একজন চা বিক্রেতা। 

টাঙ্গাইল মূলত তাঁতের শাড়ির জন্য বিখ্যাত। গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত। আমাদের পারিবারিক পেশা ভিন্ন হলেও (যদিও আমার দাদা, বড়চাচা তাঁতশিল্পের সাথেই জড়িত ছিলো একসময়। তবে পরবর্তিতে আমার বাবা পেশা পরিবর্তন করেন।) ছোটবেলা থেকেই তাঁত, শাড়ি এগুলোর মধ্য দিয়েই বড় হয়েছি। 

আগের মতো চাহিদা না থাকায় অনেকেই তাঁতশিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই যত সময় যাচ্ছে আমাদের গ্রামের সেই শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে। তাঁতীদের সেই করুণ অবস্থা সামনে থেকে দেখে আমার মধ্যে অনেক আগে থেকেই কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিলো। আমি সবসময় মনে প্রাণে চাই আমাদের গ্রামের গর্ব সেই তাঁতশিল্প পুনরায় তার ঐতিহ্য ফিরে পাক।
 
আমার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০২০ সালের লকডাউনের শুরু থেকে। ঘরবন্দী সময়ে তেমন কিছু করার ছিলো না। সাথে পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে নিজে থেকে কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগে। ফেসবুকে অনেক আগে থেকেই দেখতাম মানুষ অনেক ধরণের পণ্য কেনাবেচা করে। সেখান থেকেই মূলত উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা পাই। 

আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ঢাকা এবং পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া কেন্দ্রিক ব্যবসা করেন। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর মানুষের কেনার ইচ্ছা থাকলেও তাদের হাতে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার মতো কোন মাধ্যম ছিলো না। তাই যেই ভাবা সেই কাজ। 

প্রথমেই আমি গ্রামের তাঁতীদের কাছ থেকে শাড়ির স্যাম্পল কালেক্ট করি। এক্ষেত্রে অনেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। আবার অনেকে তিরস্কারও করেন। পারিবারিক ব্যবসা ভিন্ন ও তুলনামূলক নিম্নশ্রেণীর হওয়ায় অনেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন।  

সবমিলিয়ে শুরুতে একটু ভয় কাজ করে। ভয় কাজ করতো আসলেই আমি বিক্রি করতে পারবো কিনা, কেউ কিনবে কিনা এই ভেবে। তখন আমার মা-বাবা আমাকে ভীষণভাবে সাপোর্ট করেন। 

প্রথমে আমি একটা পেইজ ক্রিয়েট করে সেখানে শাড়িগুলোর স্যাম্পলের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে থাকি। শুরুর দিকে তেমন কোন সাড়া না পেলেও কিছুদিনের চেষ্টায় আশ্চর্যজনকভাবে কাস্টমারদের সাড়া পেতে থাকি। কিছুদিনের মধ্যেই বেশ শক্তপোক্ত একটা অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হই। যতই দিন যাচ্ছে ততই আমার কাস্টমার ও সেল বেড়ে চলেছে। 

মাত্র ৮০০ টাকায় শুরু করা আমার এই ক্ষুদ্র ব্যবসা আজ লাখ টাকার ব্যবসাতে রুপান্তরিত হয়েছে। আমার এই ব্যবসায়িক যাত্রায় পরিবারের পাশাপাশি বান্ধবী শ্রেয়ার অনেক অবদান রয়েছে। আমি গর্বের সাথে বলতে পারি আমি একজন সফল উদ্যোক্তা। 

খুব বেশি কিছু না হলেও এটা আমার জীবনের অনেক বড় অর্জন। আমি চাই আমার এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে ভালমানের দেশীয় পোষাক পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে পুনরায় তাঁতশিল্পের নবজাগরণ করা। আমি বিশ্বাস করি অদূর ভবিষ্যতে আমি আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমার গ্রামের তাঁতীদের কিছুটা হলেও সহায়তা করতে পারবো।

অনেকেই প্রশ্ন করেন আমি কিভাবে এত অল্পসময়ে স্বাবলম্বী হলাম? উত্তরটা হলো বিশ্বাস, শ্রম ও ধৈর্য। আমি আমার ক্রেতাদের যেমন পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেই সবসময় চেষ্টা করি কথা কাজের মিল রাখার। এজন্য আমার নতুন ক্রেতার পাশাপাশি পুরাতন ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। শুরুতে তেমন কোন সাফল্য না পেলেও আমি হাল ছাড়িনি। আমার চেষ্টা ও ধৈর্যের কারণেই হয়তো আমার এই সফলতা ধরা দিয়েছে।

নতুন উদ্যোক্তাদের বলবো, ই-কমার্স মার্কেট বাংলাদেশের খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। তাই নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করে বা ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে এই খাতটি ধ্বংস করবেন না। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করুন, সাফল্য নিজেই ধরা দিবে আপনার কাছে।

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল