ডা. মানিক মজুমদার :
আপনাদের সামনে COVID-19 নিয়ে এই মুহূর্তে সবচাইতে আলোচিত জার্ণাল Lancet report এর কিছু চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।
Lancet পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ Science Journal. এটি New York, USA থেকে প্রকাশিত হয়। COVID-19 সংক্রান্ত বহু বহু তথ্য এখানে নিয়মিত প্রকাশিত হয়। সারা পৃথিবীর সকল দেশ, WHO, UNICEF ইত্যাদি সবাই Lancet report কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকে।
১২ এপ্রিল ২০২১ এ প্রকাশিত এই Lancet report টিতে বহু তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, COVID-19 একটি বায়ু দ্বারা সংক্রামিত রোগ। অন্য কোনো ভাবে নয়। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, জুলাই ২০২০ এ Lancet Journal এ ২২ টি দেশের প্রায় ২২৩ জন বিখ্যাত বিজ্ঞানী (যাঁদের মধ্যে ৪৫ জন নোবেলজয়ী) ভবিষ্যদ্বানি করে জানিয়েছিলেন যে COVID-19 নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সম্ভবতঃ ভুল পথে এগোচ্ছে। Lock down, Sanitization এসব করে এই Super spread রোগটি রোখা যাবেনা। এতে বিপর্যয় বাড়বে। তখন এটাকে প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট Data তাঁরা হাজির করতে পারেননি, এটা তখন একটা hypothesis ছিল। এখন বিশাল তথ্য, data দিয়ে সংযুক্ত বহু বিজ্ঞানী এটাকে প্রমাণ করেছেন। যাঁদের আগ্রহ আছে Duck Duck Go বা Google করে এই reprt পড় নিতে পারবেন। যুক্তিগুলো খুব সহজবোধ্য ভাবে বোঝানো হয়েছে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিম্নে আমি উল্লেখ করছি।
১. SARS-CoV-2 কোনমতেই সরাসরি হাঁচি, কাশি, কফ, থুতু দিয়ে ছড়ায় না। ভাইরাসকে বায়ুবাহিত হতে হবে।
২. SARS-CoV-2 পোষাক, জুতো, আসবাবপত্র, ধাতু, চামড়া এসব দিয়েও ছড়ায় না।
৩. SARS-CoV-2 রুগীর ব্যবহার করা কোনো জিনিস স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না।
৪. SARS-CoV-2 যানবাহনের হাতল, সিঁড়ি এসবের মাধ্যমেও ছড়ায় না।
৫. SARS-CoV-2 জীবাণু ছড়ায় রোগীর কথা, নিঃস্বাস বায়ু, হাসি, চিৎকার এমনকি গান থেকেও। জীবাণু বাতাসে মেশে এবং বাতাসে বহুক্ষণ সক্রিয় থাকে।
৬. যেহেতু বৃহৎ অংশের রোগীদের কোনোরকম symptom থাকেনা বা মৃদু symptom থাকে, তাই এই আপাত সুস্থ রোগীরাই বেশিরভাগ সময় রোগ ছড়ায়। বাস্তবে যত COVID-19 রোগী পাওয়া গেছে তার ৫২% রোগীর উৎস উপসর্গ হীন (Asymptomatic) রোগী।
৭. ঘরের বাইরের চেয়ে ঘরের ভিতরে রোগ হবার সম্ভাবনা বহু গুণ বেশী এবং সে রোগ ভয়াবহ হবার সম্ভাবনাও ঘরেই অনেক বেশি।
৮. বারবার হাত ধুয়ে, sanitizer ব্যবহার করে, বাইরে থেকে ফিরেই জামাকাপড় sanitize করলেও কোনো লাভ নেই।
৯. তাঁরা নিঃসন্দেহে প্রমাণ দেখতে পেরেছেন, যাঁরা বাইরে ঘুরেছেন তাঁদের চেয়ে যাঁরা ঘরে বন্দি থেকেছেন, তাঁদের রোগ হয়েছে বহুগুণ বেশী, এমনকি ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন বা মৃত্যুও হয়েছে তাদেরই অনেক গুন বেশি। মৃতদের প্রায় ৮৬% ই ঘরে বন্দি ছিলেন। এই গৃহবন্দী নিয়ে report টিতে detail অনেক তথ্য উপাত্ত দিয়ে বলা হয়েছে ঘরের থেকে রাস্তা, বড় বাগান, জঙ্গল, নদী এসব এলাকা বহুগুন ভালো। এমনকি ঘরের থেকে Shopping mall ও ভালো, কারণ সেখানে জায়গা অনেক বেশি থাকে, তাই বাতাসে জীবাণুর ঘনত্ব কমে যায়।
১০. ঘরের থেকে school, college অনেক অনেক safe প্রমাণিত হয়েছে। Lancet report তাই সারা বিশ্বকে বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, চীন এসব ঘন বসতিপূর্ন দেশকে অবিলম্বে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের Vaccination এর আওতায় এনে Vaccine প্রয়োগ সম্পন্ন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে পরামর্শ দিয়েছেন। এতে শিক্ষার উন্নতির সাথে সাথে শিশু কিশোরদের COVID-19 হবার সম্ভাবনাও অনেক কমে যাবে।
১১. লক-ডাউন এই রোগ নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ তো নয়ই, বরং দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বন্দী থেকে শহর এলাকায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এই ঘরে আবদ্ধ দশা না কাটালে সামনে ভয়াবহ রূপ দেখা দিতে পারে, যা এখন কল্পনার বাইরে।
১২. ঘরে থাকার সময় দরজা জানালা যত বেশী সম্ভব খোলা রাখতে হবে। বাড়ীর ভিতরে হাওয়া চলাচল না হলে সে বাড়ী ত্যাগ করাই শ্রেয়। কারণ এই রোগ অন্তঃত আরো ১২-১৫ বছর থাকবেই।
১৩. ১৬ বছরের বেশি সবাইকে Vaccine নিতে হবে, দ্রুত আরো কম বয়সের শিশুদের এই vaccine এর আওতায় আনতে হবে।
১৪. ঘনবসতি পূর্ন শহরে এই রোগ অতিমাত্রায় ক্ষতিকর থাকবে। আধা শহর বা গ্রামে এই রোগ অল্পদিনেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
১৫. বলা হয়েছে, প্রত্যেকের নিজের পাশের ৫০০ মিটার Radius এ কোন রোগী থাকলে এই রোগ হবার সম্ভাবনা প্রচুর। বলাই বাহুল্য, বড় শহরে একজনের ৫০০ মিটার radius এ যত মানুষ থাকেন, একটা গোটা গ্রামে তত মানুষ পাওয়া যাবেনা।
১৭. দেখা গেছে একজনের বাড়ীর ৭ টা বাড়ী পরে অন্যজনের COVID-19 থেকে, ওই ব্যক্তির রোগ ছড়িয়েছে। এরকম উদাহরণ লক্ষ লক্ষ। বাড়ীর দেওয়াল, দরজা চোর আটকাতে পারলেও Rna virus SARS-CoV-2 কে আটকাতে পারেনা। আর বদ্ধ ঘরে বাতাসে জীবনূর ঘনত্ব অনেক গুণ বেশী হয়, তাই রোগ ভয়াবহ হয়।
১৮. দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকুন। পারলে মাঝে মাঝেই একটু ফাঁকা জায়গা, গ্রাম, এসব এলাকায় যান। Lungs এর জীবাণু কমে যাবে। পারলে ঘন জনবসতি এলাকা ছেড়ে একটু আধা শহর এলাকায় বসবাস করুন। ইউরোপ, আমেরিকায় ছোট শহরে এখন বাড়ী বিক্রি করার ধুম পরে গেছে। সবাই গ্রাম (ওরা বলে county side) এলাকায় বাড়ী খুঁজছে।
তারপরও আমি পরামর্শ দিবো আপনি নিজেও Lancet report টি পড়ুন। জ্ঞান বিকাশ করুন। ধন্যবাদ।
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (শিশু স্বাস্থ্য)
নবজাতক শিশু ও কিশোর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ময়মনসিংহ।