আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফিলিস্তিনি ভূমি দখলদারিত্বের কারণে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) কাছে মতামত চেয়েছে জাতিসংঘ। এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ বিষয়ক একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবের পক্ষে পড়েছে ৮৭ ভোট। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ, রাশিয়া, চীন, ইরান, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, সৌদি আরব প্রভৃতি। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য ২৪টি দেশ এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশ হলো ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, জার্মানি, ইতালি প্রভৃতি। ভোটদানে বিরত থাকে ফ্রান্স, ব্রাজিল, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড সহ ৫৩ টি দেশ। ফলে পক্ষে বেশি ভোট পড়ায় প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিম তীর, গাজা ও জেরুজালেম দখল করে ইসরাইল।
এর মধ্যে পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে চায় ফিলিস্তিন। তবে ২০০৫ সালে গাজা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় ইসরাইল। প্রতিবেশী মিশরের সঙ্গে সেখানকার ছিটমহলের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। এসব নিয়ে অব্যাহত আন্দোলন করছেন ফিলিস্তিনিরা। তাদেরকে বিভিন্ন সময় সমর্থন দিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এবারও তাদের অধিকারের বিষয়ে কোনো ব্যত্যয় হয়নি। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি ভূমি জবরদখল করে রাখায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইসিজের সুপারিশ আহ্বান করে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর আওতায় আছে দখলদারিত্ব, বসতি স্থাপন, সম্প্রসারণ, জনসংখ্যাতত্ত্বকে বদলে দেয়া, পবিত্র জেরুজালেমের মর্যাদা সহ বিভিন্ন বিষয়। জাতিসংঘের প্রস্তাবে আইসিজের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে এসব পলিসি এবং প্র্যাকটিস কিভাবে দখলদারিত্বের আইনি মর্যাদাকে প্রভাবিত করে সে বিষয়ে। পরামর্শ চাওয়া হয়েছে সব দেশ এবং জাতিসংঘের এক্ষেত্রে আইনি করণীয় কি।
উল্লেখ্য, হেগে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস পরিচিত ওয়ার্ল্ড কোর্ট বা বিশ্ব আদালত হিসেবে। একে বলা হয় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত। এই আদালত বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিবাদ মীমাংসায় কাজ করে থাকে। জাতিসংঘ তাদের কাছে কোনো বিষয়ে মতামত, সিদ্ধান্ত আহ্বান করছে সে বিষয়ে রুলিং দিতে বাধ্য আইসিজে। তবে যে সিদ্ধান্ত বা রুলিংই দেয়া হোক না কেন, তা বাস্তবায়নে বাধ্য করার কোনো ক্ষমতা নেই আইসিজের। শুক্রবার ওই প্রস্তাব ভোটে দেয়ার আগে একটি বিবৃতি দেন জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান। এতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কোনো পরিষদ/সংগঠন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে, ইহুদিরা নিজেরা তাদের নিজেদের ভূখ- দখল করেছে। নৈতিকভাবে ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে যারা ম্যান্ডেট পায় এবং রাজনীতিকৃত জাতিসংঘের এমন কোনো বিচারিক পরিষদ/প্রতিষ্ঠানের যেকোনো সিদ্ধান্ত হবে পুরোপুরি বেআইনি।
ওদিকে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হন ইয়াইর লাপিদ। ফলে ইসরাইলের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে। শুক্রবার তার দেশের বিরুদ্ধে গৃহীত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য নভেম্বরে ইয়াইর লাপিদ বিশ্বনেতাদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই বিষয়টি আদালতে (আইসিজে) পাঠানো হলে তা শুধু ‘উগ্রপন্থিদের’ পক্ষে যাবে। এখানে উল্লেখ্য, অধিক উদারপন্থি ফিলিস্তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াইয়ের পর ২০০৭ সালে গাজার দখল নিয়ে নেয় ইসলামপন্থি যোদ্ধা গোষ্ঠী হামাস। তখন থেকে তিনটি যুদ্ধ করেছে হামাস ও ইসরাইল।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেছেন, ইসরাইলে শপথ নিয়েছে নতুন এক কট্টর ডানপন্থি সরকার। তারা ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত এমন নীতি গ্রহণ করেছে তারা। এই সরকার শপথ নেয়ার একদিন পরেই জাতিসংঘে ওই প্রস্তাবের ওপর ভোট হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, আপনারা যারা বা যে-ই ভোট দিয়েছেন, তারা সবাই আন্তর্জাতিক আইন ও শান্তিতে বিশ্বাস করেন। যখন আইসিজে তার রুলিং দেবে, তখন আপনারা সেই সিদ্ধান্তকে সমুন্নত রাখবেন। একই সঙ্গে ঠিক এই মুহূর্তে ইসরাইলি সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন।
এমআই