শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ইসরাইল খান-অনুপ্রাণিত অনুসন্ধিৎসূ।। আহমাদ মাযহার

সোমবার, এপ্রিল ২৬, ২০২১
ইসরাইল খান-অনুপ্রাণিত অনুসন্ধিৎসূ।। আহমাদ মাযহার

আহমাদ মাযহার: ইসরাইল খানকে সেই সব সাধক-গবেষকদের দলে রাখতে হবে যাঁরা গবেষণা করেন ডিগ্রি বিক্রি করে খাবার জন্য নয়, করেন নিজ অনুসন্ধিৎসাকে জাগ্রত রাখবার আত্মতাগিদ-প্রবর্তনায়! তাঁকে রাখতে হবে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, বিনয় ঘোষ বা আবদুল মান্নান সৈয়দদের দলে! পিএইচডি সহ দেশের ও দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি বড় ডিগ্রি তিনি নিয়েছেন বটে, কিন্তু একটু পর্যালোচনা করলেই অনুভব করা যাবে, ডিগ্রিগুলো চাকরির উন্নতিতে বা সামাজিক প্রভাব অর্জনে তাঁর তেমন কাজে আসেনি, কাজে লাগাতে যে খুব সচেষ্ট ছিলেন তা-ও নয়; ডিগ্রিগৌরব অনুভব করেছেন নিবেদিতপ্রাণ অনুসন্ধিৎসু সত্তার এক উপজাত অনুষঙ্গ হিসেবে। উপেক্ষা করার কারণেই যেন ডিগ্রিও আর তাঁর গবেষণার গতির সঙ্গে পেরে না উঠে ক্ষান্তি দিয়েছে; কিন্তু তাঁর গবেষণার গতি রয়েছে অব্যহত!

আমাদের দুর্ভাগ্য, সাহিত্যের ক্ষেত্রে এত এত কর্ষণ তিনি চালিয়ে যেতে পারলেন, মাঠে ফলনও এতে ভালো হলো, কিন্তু সে ফসল ভালোভাবে ঘরে তোলা সম্ভব হলো না দীর্ঘ কাল! অর্থাৎ যতগুলো বছরের প্রাণপাতী চেষ্টায় তাঁর হাতে সেগুলো প্রণীত হতে পারল পারল না সেগুলো সময় মতো ও যথার্থ মর্যাদায় প্রকাশিত হতে! এখনো তাঁর গবেষণার অনেক ফল জমে আছে প্রকাশের অপেক্ষায়। উন্নত দেশে তাঁর মতো প্রাণিত কর্মিষ্ঠা নানাভাবে সংগঠিত সামাজিক প্রণোদনায় এগিয়ে চলতে পারেন, কারণ রাষ্ট্র ও সমাজের এক ধরনের নীতিগত যোগসূত্র থাকে সেখানে। ছোট ছোট সামাজিক উদ্যোগও পায় প্রাতিষ্ঠনিক রূপ। সেইসব সামাজিক উদ্যোগের সম্মিলিত সহযোগ হয়ে ওঠে ব্যক্তির কর্মপ্রয়াসের অংশী! ইসরাইল খান যে ধরনের কাজ করে চলেছেন সে ধরনের কাজে গতি পেতে যে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগ জরুরি তা আমাদের দেশে সামান্যও গড়ে ওঠেনি এখনো! ইসরাইল খানদের মতো মানুষেরা অবশ্য এই না-থাকাকে থোড়াই কেয়ার করেন! প্রণোদনার অপেক্ষায় তাঁরা বসে থাকেন না, অনুপ্রেরণাই তাঁদের প্রণোদনা! আমাদের বিত্তজগত এখনো অনুভব ও বিচার করতে শেখেননি যে প্রণোদনা তাঁরা যদি চাইতেও যান তা তাঁরা চান জীবনের বিলাসিতার জন্য নয়, চান এইসব কাজ চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যে সামর্থ্যবান থাকবার জন্য। ইসরাইল খানদের সমান্তরালে প্রণোদনাই যাঁদের মুখ্য চাওয়া তাঁরা সরকারী চাকরি থেকে লিয়েন নেন দ্বিগুণ বা ত্রিগুণ অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ গ্রহণ করতে! পক্ষান্তরে ইসরাইল খানের মতো মানুষকে এ ধরনের কাজ করতে হয় বিনা বেতন ছুটি নিয়ে, প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা ধার করে নিজের ভবিষ্যৎকে অনিরাপদ রেখে। আগেও লিখেছি, ইসরাইল খানের অপরিসীম নিরবচ্ছিন্ন শ্রমের কথা ভাবলেই মনে মনে একবার আমি তাঁকে সালাম দিয়ে নিই, কারণ তাঁর একলব্য-নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত আমার মাথা শ্রদ্ধায় এমনিতেই নুইয়ে দেয়!!

ইসরাইল খানের প্রধান গবেষণাক্ষেত্র প্রধানত কাজী নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ও অদ্বৈত মল্লবর্মণ, সাময়িকপত্রের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, ভাষার রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবিতার দ্বন্দ্ব। 

তাঁর অনুসন্ধানের ক্ষেত্র যেমন বিস্তৃত তেমনি জটিলও! মানসগঠনে তিনি যতটা সাহিত্যিক ততটাই সমাজ পর্বেক্ষকও; একই সঙ্গে ইতিহাসবোধের শিরদাঁড়াও খাড়া থাকে তাঁর চেতনায়! আমাদের সাহিত্য ভুবন কেবল 'সৃজনশীল' ধারাকেই সামান্য দেখতে পায়, কর্পোরেট জগতও সামান্য যে পৃষ্ঠপোষণায় এগিয়ে আসে তাও এ পর্যন্তই পৌঁছোয়! এর বাস্তব কারণকেও আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের বিত্তশালীরা এখনো বিত্তের নৈতিক পরিশীলনের পর্যায়ে পৌঁছননি। তাঁদের উত্থান ও বিস্তারের পেছনে নিজেদের সৃজনশীলতার সম পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছে ঘুষ, দুর্নীতি, শ্রমশোষণ, করফাঁকি ইত্যাদি! সমাজের অন্তর্নিহিত শক্তিকে শনাক্ত করে এগিয়ে যাওয়ার পর্যায়ে আমাদের অর্থনীতির উত্তরণ এখনো ঘটেনি! ফলে ইসরাইল খানরা যে ধরনের ক্ষেত্রে কাজ করেন তার প্রণেদনা অব্যাহত রাখার মতো প্রতিষ্ঠান নেই! এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও মূলত প্রাথমিক ব্যবস্থাপনার মানবসম্পদ যুগিয়ে দায়িত্ব শেষ করে! যা হোক, সে অন্য প্রসঙ্গ, এ নিয়ে অন্যত্র অলোচনা করা যাবে! 

আমার সঙ্গে ইসরাইল খানের পরিচয় আশির দশকে; বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন তখন তাঁর শেষ পর্যায়ে। আমি তখন সদ্যই ঢাকা কলেজে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রত্ব নিয়েছি! সাহিত্য পত্রিকার তখন আকালযুগ চলছে। সামরিক শাসনামলের সাংস্কৃতিক বিকৃতি সাহিত্যসমাজের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে। ইসরাইল খান যখন সম্পাদনা করছিলেন সাহিত্যপত্র 'স্বকীয়তা' আমি তখন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা 'কণ্ঠস্বরে'র পুনরুজ্জীবিত পর্বে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি! লেখা ও বিজ্ঞাপন সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় চকিতে আমরা উভয়ে ক্ষেত্রমিতা হয়ে উঠেছিলাম! তাঁর 'স্বকীয়তা' কতটা স্বকীয় তা বুঝে-ওঠার মতো পরিণত মন তখনো আমার হয়ে ওঠেনি! যদিও কাজটি যে কত কঠিন তা বুঝে-ওঠার সামর্থ্য আমার ততদিনে হয়ে উঠেছে! ফলে তাঁর প্রতি যে মনোযোগী দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল তা রাখা হয়ে ওঠেনি। সাময়িকপত্র সংগ্রহ ও গবেষণাতেই ইসরাইল খানের কৃতিভাস্বরতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তা নিয়ে সম্পন্ন করেছেন উচ্চতর গবেষণা। আরেক গবেষক মামুন সিদ্দিকী যথার্থই বলেছেন, বাংলা সাময়িকপত্র গবেষণায় ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিনয় ঘোষ-পরবর্তীকালে বাংলাদেশে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ও আনিসুজ্জামান যে ঐতিহ্য নির্মাণ করেছেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম, মুনতাসীর মামুনের হাত হয়ে সেই নিশান নিষ্ঠার সঙ্গে বহন করে চলেছেন ইসরাইল খান। এই সব বইয়ে তাঁর মনন, প্রজ্ঞা ও গভীর অনুসন্ধিৎসার পরিচয় মেলে । চার দশক ধরে বাংলা সাময়িকপত্র নিয়ে ইসরাইল খান যে খনন চালিয়েছেন তা থেকে পেয়েছেন বাঙালি জাতির বৌদ্ধিক উৎকর্ষ-সম্পদ ও চিন্তাস্রোতের রূপবৈচিত্র্যকে।

তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলেও বিচরণক্ষেত্র উভয়ের একই বলে মাঝে মধ্যে আমাদের দেখা হয়ে যেত। কিন্তু ইসরাইল খানের পারিবারিক জীবনে বিপর্যয়ের কারণে এবং আমার কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের কারণে আমাদের যোগাযোগ বছর দশেকের জন্য প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কয়েক বছর পরে আমি বই-সমালোচনার কাগজ 'বইয়ের জগৎ' বের করতে গিয়ে বই খোঁজার প্রক্রিয়ায় তাঁর 'মুসলিম সম্পাদিত ও প্রকাশিত বাংলা সাহিত্য পত্রিকা (১৯৩১-৪৭)' বইটি হাতে আসে। তাঁর অজ্ঞাতে আমি নিজেই বইটির একটি পর্যালোচনা লিখে 'বইয়ের জগৎ'-এ তা প্রকাশ করি! তিনিও তাঁর স্বাভাবিক পত্রিকাসন্ধানী প্রক্রিয়ায় স্বল্প প্রচারিত 'বইয়ের জগৎ'-এর সন্ধান পান! পরস্পরের সঙ্গে পুনর্যোগ উভয়কেই আনন্দিত করে! বৈদ্যুতিন সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে আমাদের পরোক্ষ যোগাযোগ এখন অব্যাহত আছে। খুব সহজেই আমরা ভাবনা ও তথ্য বিনিময় করে থাকি। নানা বিষয়ে পড়ার জন্য পরস্পরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিংবা কখনো কখনো একে অপরকে পাঠ-উপকরণ সরবরাহ করে থাকি! 

সংক্ষেপে ইসরাইল খানের বইয়ের নামগুলোর তুলে দিচ্ছি। তালিকার অধিকাংশ বইই আমি হয় পড়েছি না হয় উল্টে পাল্টে দেখেছি। এখন তালিকা করতে গিয়ে দেখলাম আমার অবহিতির বাইরেও রয়ে গিয়েছে কয়েকটি বই! এটা সমক্ষেত্রের স্বাধীন গবেষক হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতা বলেই বিবেচনা করি! আমার কৃত তাঁর বইয়ের তথ্য নিম্নরূপ:

'সাময়িকপত্র ও সমাজগঠন', পালক পাবলিশার্স, ঢাকা, (১৯৮৮/২০০৬); মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি (১৯৯৯) [পরেও কয়কবার পুনর্মুদ্রিত]; 'মনীষা ও মনস্বিতা', ঢাকা, (২০০৯); 'বুদ্ধিজীবীদের দ্বন্দ্ব ও সাহিত্যসমাজে অবক্ষয়, ঢাকা, (১৯৮৯); 'ভাষার রাজনীতি ও বাংলার সমস্যা', ঢাকা, (১৯৮৯/ দ্বি. সং ২০১১); 'নজরুলের "ঢাকার দাঙ্গা" ও মুক্তবুদ্ধির লেখকদের দুষ্প্রাপ্য রচনাবলী' (২০১০); 'এরশাদের আমলের ভাষাকেন্দ্রিক রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক বিতর্ক ১৯৮২-১৯৯০', ঢাকা, (১৯৯১, দ্বি. সং. ২০১১); 'কবি নজরুলের অসুস্থতা তর্ক-বিতর্ক ও দলিলপত্র', ঢাকা, (১৯৯৯), [চার বার পুনর্মুদ্রিত] ; 'নির্বাচিত প্রবন্ধ' (২০০৮)। পূর্ব বাঙলার সাময়িকপত্রঃ প্রগতিশীল ধারা', ঢাকা, (বা.এ ২০১৬) ; 'পূর্ব বাঙলার সাময়িকপত্র', ঢাকা, (বা.এ. ১৯৯৯); 'বাংলা সাময়িকপত্র: পাকিস্তান পর্ব', ঢাকা, (বা.এ ২০০৪); মুসলিম সম্পাদিত ও প্রকাশিত বাংলা সাহিত্য পত্রিকা ১৯৩১-৪৭ (বা/এ ২০০৫); 'ডা. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান: জীবন ও চিন্তাধারা', ঢাকা, (বা.এ ১৯৯৮)। তাঁর সংকলিত ও সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ সংকলন 'অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচনাসমগ্র', ঢাকা, (২০১৫); সীমান্ত সংগ্রহ (২০০৫) [মাহবুব উল আলম চৌধুরী সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা]; 'আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের অভিভাষণ সমগ্র, (বা.এ ২০১০)। তালিকার কাজ সম্পন্ন করার পর দেখলাম তাঁর একটি প্রবন্ধ-সংকলনের নামকরণ আমার করা! হালকাভাবে আমি তাঁর প্রবন্ধের তালিকা দেখে একটা নাম প্রস্তাব করেচিলাম। সেটাই তিনি গ্রহণীয় মনে করে ভূমিকায় তা উল্লেখও করেছেন।

বইয়ের নাম থেকেও তাঁর কাজের ক্ষেত্র ও মেজাজ বোঝা যাবে! সাময়িকপত্র নিয়ে গবেষণার আগে নিজেই তিনি সাময়িকপত্র সম্পাদনা করেছেন। এ কাজ করতে করতেই সমাজে সাময়িকপত্রের তাৎপর্য অনুভব করেছেন ও গবেষণায় উদ্যোগী হয়েছেন। পদ্ধতিগত গবেষণা শুরুর আগেই বাংলাদেশের সমাজ ও ইতিহাস নিয়ে যে তাঁর পর্যবেক্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছিল তার পরিচয় পাওয়া যায় প্রথম দিকে প্রকাশিত বইগুলোর নাম থেকেই! গতকাল ছিল তাঁর জন্মদিন। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে তাঁর কথা ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতেই দেরি হয়ে গেল! শুধু শুধু শুভেচ্ছা তাঁকে আগেই দিয়ে রেখেছি। এই দেরিতে নিশ্চয় ট্রেন মিস হয়ে যায়নি আমার! জন্মদিন উপলক্ষে এই নিবিষ্ট গবেষককে যে একটু গভীরভাবে জানবার ও বুঝবার চেষ্টা করলাম তার ভাগ বন্ধুদেরও দিতে চাই! সুযোগ করে তাঁর কাজ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানবার ইচ্ছে আছে আমার! 
আপাতত তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ও তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনা করে এখানেই ক্ষান্ত দিচ্ছি!

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গণমাধ্যমকর্মী।

সময় জার্নাল/আরইউ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল