এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের কচুয়ার আলীপুর গ্রামে মোজাহার মোল্লা হত্যার ঘটনায় হামলা ও গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শতাধিক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। পুরুষের পাশাপাশি জীবন ও সম্মান বাঁচাতে এক ধরণের পালাতক জীবন যাপন করছেন নারী ও শিশুরা।
জামিনে থাকা আসামীরাও হামলার ভয়ে এলাকায় প্রবেশ করতে পারছেন না। পরিচর্যার অভাবে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে পুরুষ শূন্য পরিবার গুলোর ধান। এছাড়া বাদী পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে বসত ঘর ভাংচুর এবং মূল্যবান সম্পদ লুটে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন আসামীদের স্বজনরা।
আসামী পক্ষের স্বজনদের অভিযোগ, মামলার বাদী পক্ষের লোক লিটু, কামরুল, সোহাগসহ অন্তত ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল হত্যাকান্ডের দিন থেকে এলাকায় তান্ডব চালিয়েছে। লিটু, সোহাগ ও কামরুলের নেতৃত্বে আসামী পক্ষের অন্তত ১০টি গরু জোর করে নেওয়া হয়েছে। জাল টেনে ঘেরের মাছ ধরে নিয়েছে তারা। কারও কারও বাড়ির ফ্রীজ, টেলিভিশনসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে তারা। এসব মালামাল নেওয়ার সময় ঘরবাড়ি ভাংচুরও করা হয়েছে।
মামলার আসামী আলীপুর গ্রামের হেকমত আলী শেখ (৬৫) এর স্ত্রী আঞ্জিলা বেগম বলেন, আমাদের ঘোয়ালের দুটি গরু এবং ঘরের ফ্রীজটি লিটু ও তার লোকজন এসে নিয়ে গেছে।
আরেক আসামী মহিদুল ইসলামের মা ফিরোজা বেগম বলেন, আমার সন্তানরা হত্যার সাথে জড়িত ছিল না, তারপরও তাদেরকে আসামী দেওয়া হয়েছে। প্রাণ ভয়ে আমার ছেলেরা পালিয়ে গেছে। লিটু, কামরুল, সোহাগসহ ১০-১৫ জন আমাদের বাড়িতে এসে গালিগালাজ করেছে। আমার ফার্মে (গোয়াল) থাকা ৫টি ষাড় নিয়ে গেছে। যার দাম হবে অন্তত ৬ লক্ষ টাকা। আমি অনেক অনুনয় বিনয় করেছি, যাতে তারা গরু না নেয়, কিন্তু জোর করে আমার গরু গুলো নিয়ে গেছে এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই নারী।
মিনারা বেগম নামের এক নারী বলেন, আমার স্বামী পাগল। আমার দুধের বাচ্চা (১৮ বছর বয়সী ছেলে) ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। আমার ছেলেকে মারধর করে ভ্যান ও মোবাইল নিয়ে গেছে লিটু ও তার লোকজন।
আফতাব শেখের স্ত্রী বিউটি বেগম বেগম বলেন, ওরা আমার গরু ও ফ্রীজ নিয়ে গেছে। আমাদের বাড়ি ঘরে ঢিল মারে, গালিগালাজ করে। ওদের ভয়ে বাইরেও বের হতে পারি না।
তহিদুল শেখের স্ত্রী ববিতা বেগম বলেন, কেউ বাড়িতে নেই, আমাদের ঘেরের মাছ ধরে নিয়ে গেছে। ধানের জমির কাছে যেতে নিষেধ করেছে। জমিতে গেলে গালিগালাজ করে। দুই একদিনের মধ্যে ধানে পানি না দিলে এবার ধানই হবে না। মরে যাবে সব। রাতে ঘরের চালের উপর ঢিল মারে। বাচ্চাদের নিয়ে এখন বেঁচে থাকাই দায় হয়ে দাড়িয়েছে।
আসামী মিজানের মা হাওয়া বেগম বলেন, ঘটনার দিন আমার এক ছেলে কাটাখালি এবং আরেক ছেলে খূলনা কোচিংয়ে ছিল। তারপরও ওরা আমার ছেলেদের আসামী দিয়েছে। আর এখন আমাদের বাড়িঘর লুট করতেছে। আমাদের ঘর থেকে ফ্রীজ, টিভি ও আলমারি নিয়ে গেছে ওরা। শুধু আমাদের ঘর না আরও অনেকের বাড়িতে লুট করেছে। ওরা ইদ্রিস শেখ ও লোকছারের বসতঘর ভাংচুর করেছে। ওই ঘরে আর বসবাস করার উপায় নেই বলে দাবি করেন এই নারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, কেউ কাউকে মেরে ফেললে প্রচলিত আইন অনুযায়ি বিচার করবে। কিন্তু হয়রানি মূলক ভাংচুর, লুটপাট ও নিরপরাধ মানুষকে আসামী দেওয়াটা খুবই অন্যায়। এছাড়া মোজাহার হত্যা মামলায় একজন মৃত ব্যক্তিকেও আসামী দেওয়া হয়েছে। মামলার এজাহারের ৪১ নম্বর আসামী হাকিম গাজী কয়েক বছর আগে মারা গেছে। তাকেও আসামী দেওয়া হয়েছে।
বাদীপক্ষের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি মোঃ লিটু বলেন, আসলে আমরা কারও গরু এবং ফ্রীজ নেইনি। ঘরবাড়িও ভাংচুর করিনি। হত্যা মামলায় সুবিধা নিতে তারা এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়টি জানা নেই। গোপনে কোন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব। এছাড়া ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর