বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগ ‘পাল্টা কর্মসূচি’ দিয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করছে: মির্জা ফখরুল

বুধবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২৩
আওয়ামী লীগ ‘পাল্টা কর্মসূচি’ দিয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করছে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিনিধি:


আজ বুধবার দুপুরে গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন,বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ ‘পাল্টা কর্মসূচি’ দিয়ে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগকে ‘পাল্টা কর্মসূচি’ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সব দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহন করতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সেটি তুলে ধরতেই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।বিএনপির কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিকে উসকানি বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিরোধী দলকে উসকানি দিয়ে একটা ট্র্যাপের মধ্যে ফেলা এবং যাতে করে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিএনপি অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই পরিস্থিতি যাতে না ঘটে, তার জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে আসছে।


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন এই সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন শুরু করি, তার প্রথম থেকেই একটা জিনিস লক্ষ করেছি, আমাদের প্রতিটি আন্দোলনের দিনে আওয়ামী লীগ একটা পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। সেই কর্মসূচি দেওয়ার সময়ে তারা যে ভাষা ব্যবহার করেছে, এই ভাষাগুলো সম্পূর্ণভাবে অগণতান্ত্রিক, সন্ত্রাসী ভাষা।’


গত জুলাই মাস থেকে বিএনপি সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি শুরু করেছে। সেটির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দলের ১৫ জন নেতা-কর্মী পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগের অত্যাচার-নির্যাতনে মারা গেছেন। অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন, প্রায় পাঁচ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।সরকারি দলের নেতাদের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাদের নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া, হাত জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আরও অনুপ্রাণিত করেছে।


মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগের এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন করা, বাধা প্রদান এবং একই দিনে একই সময় কোনো কর্মসূচি প্রদান না করার আহ্বান জানানো হয়।

‘টেলিফোনে আড়ি পাতা নিয়ে উদ্বেগ’


মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে আড়ি পাতার বিষয়ে আইন প্রণয়নের ঘোষণায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিএনপির মনে করে, কর্তৃত্ববাদী-অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নজরদারিতে রাখার জন্য মুঠোফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নজরদারি করতে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ক্রয় ও আড়ি পাতার আইন প্রণয়ন করতে চলেছে।’ অবিলম্বে এসব প্রযুক্তি ক্রয় করা ও আইন প্রণয়নের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ভয়াবহ নিবর্তনমূলক আইন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অগণতান্ত্রিক আচরণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।’


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত চার বছরে ১ হাজার ২০৯টি মামলা হয়েছে। বিএনপি মনে করে, এই চরম নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তি, সংবাদকর্মী, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও আটকের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর চরম আঘাত করা হচ্ছে ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।


‘গণতন্ত্রের নমুনা’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার চলছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি, নিপীড়ন-নির্যাতন চলছেই। নতুন করে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জেলা ও মহানগরে ৫৪২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ হাজার ১১৩ জন, অজ্ঞাতনামা আসামি ৭৮ হাজার ৮১২ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।শ্লেষ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই হচ্ছে গণতন্ত্রের নমুনা বর্তমান সরকারের, তাদের পরিবেশ তৈরি করার নমুনা। তিনি এসবের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে কারাগারে আটক সবাইকে মুক্তির দাবি জানান।


বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘নেতৃত্বে সাজাপ্রাপ্তদের রাখা বিএনপির নৈতিক অবক্ষয়।’ সংবাদ সম্মেলনে কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব, দলের গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভা মনে করে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি বন্ধের দাবি নিয়ে যখন দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে উঠছে, তখন এ ধরনের মন্তব্য একনায়কতন্ত্র, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেবে।


এসএম



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল