সর্বশেষ সংবাদ
সময় জার্নাল ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সমমনা ও ধর্মভিত্তিক কিছু দলকে তাদের ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। কিন্তু প্রধান শরিকের জোট সম্প্রসারণের উদ্যোগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে অন্য শরিকেরা। বিশেষ করে তারা ধর্মভিত্তিক দলকে জোটে যুক্ত করার ঘোর বিরোধী। নির্বাচন এবং বিরোধীদলগুলোর আন্দোলন বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ যদি ১৪ দলের বাইরে অন্য কোনো দলকে সঙ্গে নিতে চায়, তাহলে নির্বাচনী ঐক্য বা মহাজোট করলে আপত্তি থাকবে না শরিকদের। এর আগে আওয়ামী লীগ মহজোট গঠন করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেই মহাজোটে ১৪ দলের বাইরে জাতীয় পার্টি যেমন ছিল, একইসঙ্গে ছিল ধর্মভিত্তিক দল তরিকত ফেডারেশন এবং জাকের পার্টি। তরিকত ফেডারেশন পরে ১৪ দলীয় জোটেও জায়গা পেয়েছে। যদিও এই জোটে বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ এবং সাম্যবাদী দলের প্রভাব রয়েছে। ১৪ দলের শরিকদের নানা অভিযোগ ছিল কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সখ্যতা নিয়ে। তবে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল এবং সংগঠনের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রেখে চলার চেষ্টা করেছে।এখন নির্বাচন সামনে রেখে ১৪ দলের বাইরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি, ইসলামি ঐক্যজোটের একটি অংশসহ কিছু ধর্মভিত্তিক দলকে কাছে টানার তৎপরতা বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ নামের একটি দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ধর্মভিত্তিক এই দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইসলামিক ফ্রন্ট নামের দলটি অনেক দিন ধরে ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভূক্ত হতে চাইছে এবং চেষ্টা চালাচ্ছে। এই দলের আগ্রহের বিষয়ে আওয়ামী লীগও তাদের জোটের বৈঠকে আলোচনা করেছে। সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর ইস্কাটনে ১৪ দলের এক বৈঠকে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তোলেন। তখন শরিক দলের একাধিক শীর্ষ নেতা নেতিবাচক মনোভাব দেখান। এরপর আলোচনা আর এগোয়নি।ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। ১৪ দলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেছেন, বিরোধীদল বিএনপি তাদের পুরোনো ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে, অনেক দল নিয়ে কয়েকটি জোট গঠন করে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করছে। আওয়ামী লীগও বেশি সংখ্যক দলকে কাছে টেনে তাদের বড় ঐক্য দেখাতে চাইছে।তবে অন্য দলকে বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক দলকে ১৪ দলে অন্তর্ভূক্ত করার ক্ষেত্র দীর্ঘদিনের শরিকদের সঙ্গের সম্পর্কের টানাপোড়েনে সৃষ্টি হতে পারে। এই বিষয়টিও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের পাশে থাকবে, এমন নতুন দলকে নিয়ে ১৪ দলীয় জোট বড় করার চেষ্টা তাঁরা চালিয়ে যাবেন। তবে শেষপর্যন্ত পুরোনো শরিকদের রাজি করানো সম্ভব না হলে তারা অতীতের মত নির্বাচনী জোট বা মহাজোট করার বিষয়ও আওয়ামী লীগের ভেতরে আলোচনায় রয়েছে। এমনকি ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে দিয়ে আলাদা একটি জোট করার বিষয়েও সরকারের ভেতর থেকে তৎপরতা আছে। আওয়ামী লীগের পুরোনো একাধিক শরিক দলের সূত্র বলছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কিংবা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) মতো কেউ জোটে আসতে চাইলে তাদের ইতিবাচকভাবে দেখা হবে। কিন্তু ধর্মভিত্তিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শরিকদের আপত্তি থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোট গঠিত হয় ২০০৪ সালে। ২০০৫ সালে ১৪ দলের পক্ষ থেকে ৩৩ দফা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেখানে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়াসহ নানা বিষয় ছিল। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদ ভেঙে জাসদ এবং বাংলাদেশ জাসদ নামের দু’টি দলের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ জাসদ ওই জোট থেকে বেরিয়ে যায়।১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ, জাসদ, ন্যাপ (মোজাফফর) ও বাম জোটের ১১টি দল নিয়ে। এরপর বিভিন্ন সময় জোট থেকে কিছু দল বেরিয়ে গেছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে কিছু দল। তবে জোটে দলের সংখ্যা যা–ই হোক না কেন এটি ১৪ দলীয় জোট হিসেবেই বহাল আছে। সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা বিএনপি ছাড়ার পর থেকেই ক্ষমতাসীনদের জোটে থাকার চেষ্টা করছেন। দলটিকে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য সম্প্রতি আদালত থেকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই দলের সঙ্গে আওয়ামী রীগের যোগাযোগ রয়েছে।এছাড়া কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ১৪ দলীয় জোটে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে কাদের সিদ্দিকী নিজে আওয়ামী লীগে যেতে আগ্রহী বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তাঁকে দলে না নিয়ে ১৪ দলীয় জোটে নিতে চায়। এই বিষয়ে জোটের শরিকেরা খুব বেশি রাজি না হলেও একেবারে নাকচ করে দেয়নি। কাদের সিদ্দিকী ২০১৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক হিসেবে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনের পরে অবশ্য তিনি ওই জোট থেকে বেরিয়ে আসেন। এতদিন কাদের সিদ্দিকী কিছুটা চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু গত ২৩ ডিসেম্বর হঠাৎ করে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে ক্ষমতাসীন জোটে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এসএম
এ বিভাগের আরো
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল