সর্বশেষ সংবাদ
শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত,লালমনিরহাট প্রতিনিধি : ৪৬ বছর বয়সী আসাদুজ্জামান । দরিদ্র দিনমজুরের ছেলে নিজেও দিনমজুর । জন্মের ৫ বছর পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারায়। স্বাভাবিক চলাচলেও দেখা দেয় সমস্যা। সন্তানের এমন অবস্থাতে অসহায় হয়ে পড়েন বাবা-মা। সামান্য কিছু জমি ছিলো তা বিক্রি করেই শুরু হয় চিকিৎসা। চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে উঠে সে। এর মধ্যে বড় হয়ে বিয়ে করে ছয় কন্যা সন্তানের পিতা হন আসাদুজ্জামান। এর মধ্যে ৫ কন্যার বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু বিধি বাম বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আবার দেখা দেয় পুরাতন সেই রোগ । মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পরে বিভিন্ন রাস্তায় গিয়ে গাড়ী ভাংচুর শুরু করেন, করেন অন্যের ফসলের ক্ষতি। এর মধ্যে জন্মদাতা বাবাও চলে যান পৃথিবী ছেড়ে। মা যতটুকু সম্ভব জমি বিক্রি, অন্যের কাছে হাত পেতে, প্রতিবেশিদের সাহায্য নিয়ে করেছেন ছেলের জন্য চিকিৎসা। কিন্তু এ যাত্রায় আর সুস্থ করা যায়নি আসাদুজ্জামানকে। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় স্ত্রীও ছেড়ে চলে যায় তার। পরে বাধ্য হয়ে নিজ সন্তানকে পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে তালা দিয়ে বেঁধে রাখতে শুরু করেন মা আশফা। এভাবেই গত একবছর ধরে লোহার শিকলে বন্দি হয়ে চলছে আসাদুজ্জামানের জীবন। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী একাধিকবার স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানায় পরিবার। তবে অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি তারা। আসাদুজ্জামানের বাবার নাম মৃত জাফর আলী ও মা আশেফা বেগম। তারা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের খানের বাজার গ্রামের বাসিন্দা। আসাদুজ্জামানের আরও এক ভাই ও বোন আছে।সরেজমিনে খানের বাজারের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে জাম গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মানসিক প্রতিবন্ধী আসাদুজ্জামানকে । তাকে সারাদিন এখানেই বেঁধে রাখা হয় বলে জানায় আসাদুজ্জামানের প্রতিবেশীরা । আসাদুজ্জামানের ফুপাতো ভাই শ্যামল জানান, ৫ বছর বয়সে মিলনের নিউমোনিয়া হয়। সে সময় হাতীবান্ধা হাসপাতালে মিলনের চিকিৎসা করানো হয়। এর কিছুদিন পর থেকেই মিলন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এরপরেও আসাদুজ্জামানের চিকিৎসার জন্য আমাদের আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়।বড় হয়ে আসাদুজ্জামানের চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি সহ ধারদেনা করে প্রায় ২লক্ষ টাকা খরচ করেছি। পরে টাকার অভাবে ভাইয়ের চিকিৎসা আর করাতে পারি নাই। আমার ফুপু গরিব মানুষ তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।অন্যের বাড়িতে কাজ করে যতটুকু পায় তাই দিয়েই চিকিৎসা করিয়েছেন তার সন্তানকে। তিনি আরও বলেন,আসাদুজ্জামানকে বেঁধে না রাখলে এদিক-ওদিক চলে যায়। অন্যের ক্ষতি করে এ জন্যই তাকে আমাদের বেঁধে রাখতে হয়।আসাদুজ্জামানের মা আশফা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পরে অনেক ডাক্তার দেখাইছি, কোন লাভ হয়নাই। এ জন্য এখন আসাদুজ্জামানকে আমাদের বেঁধে রাখতে হয়। গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন,আসাদুজ্জামান মানসিক ভারসাম্যহীন।সে কারণে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়।ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। আসাদুজ্জামানের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা করার আহব্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন বলেন, আসাদুজ্জামানের খোঁজ নিয়েছি। দ্রুত চিকিৎসার জন্য যেকোনো সহযোগিতা করা হবে। এসএম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল