নিজস্ব প্রতিবেদক:
নীলফামারী জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতির কাগজ নিতে অফিস সহকারী আব্দুস সাদিকের টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। মুহূর্তেই ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উপজেলার দক্ষিণ দেশীবাই রাজারহাট কাবাদি রহমানিয়া নুরানি ও হাফিজিয়া মাদরাসার উদ্যোগে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ওই মাহফিলের অনুমতির কাগজের জন্য সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের জেএম শাখায় আবেদন করেন মাদরাসা সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান। অনুমতি প্রদানের ওই কাগজটির জন্য অফিস সহকারী আব্দুস সাদিক অর্থ দাবি করেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক কাগজটির জন্য গেলে তার কাছেও অর্থ দাবি করেন সাদিক। টাকা নেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ভিডিও করে রাখেন আব্দুল মালেক। পরে সেই ভিডিও গত শনিবার ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আব্দুস সাদিক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেএম শাখায় অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত। এর আগে তিনি একই কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল চাকরিতে যোগদান করেন।ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে আব্দুস সাদিককে বলতে শোনা যায়, ‘৫০০ টাকার কমে অফ টাইমে কোনো কাজ হবে না। আপনি যদি চান পেপারে দিবেন, তাও দেন আমরা চাচ্ছি ওটা। কারণ আমাদের ইমিডিয়েটলি বদলি নেওয়ার কথা এই শাখা থেকে। হয় ভালো সেকশন দেবে আমাদের, রেকর্ড রুম দেবে।
এসময় অপরদিক থেকে আব্দুল মালেক ২০০ টাকা দেওয়ার কথা বললে সাদিক বলেন, ‘২০০ টাকায় কোনো কাজ হবে না।পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি আবারও জিজ্ঞাসা করেন, কত টাকা হলে কাজ হবে। উত্তরে অফিস সহকারী বলেন, ‘৫০০ টাকার কথা কইছি তোক, রাত ১০টার মধ্যে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দিয়ে তোক তারপর বাড়ি যাব। সেই রকম লোক আমরা।’
অফিস সহকারী আরও বলেন, ‘দে দে টাকা দে টাকা দে- রাত ১০টা হইলো কাম হইবে। ৫০০ টাকা আর মোর হাতোত দিবু ১০০ এলায় কাম হইবে। পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ৫০০ টাকা দিলে তিনি আরও ১০০ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না চাইলে অফিস সহকারী আব্দুস সাদিক বলেন, ‘তাহলে তোর কাজও হবে না, তো চিঠি অর্ধেক সই হয়া ওই যে ক্যান্টিন পর্যন্ত নিগি থুইবে।’
এ বিষয়ে আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশের মাদরাসায় তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মাহফিলের অনুমতি নেওয়ার জন্য ডিসি মহোদয়ের ওখানে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই অফিসে যাওয়া হয়। আবেদনটি এসপি অফিস পাঠাইছে, এসপি অফিস থেকে আবার ওই অফিসে পাঠাইছে। গত কয়েকদিন ধরে অনুমতির কাগজটি টাকার জন্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। কয়েকদিন ধরে কাগজটির জন্য আমিসহ অনেকেই ঘুরছেন ।
তিনি আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার কাগজটির জন্য আমি গেলে আমাকেও বলা হয় টাকা ছাড়া কোনো কাজ হবে না। মহৎ একটা কাজেও উনি টাকা নিবেন দেখে আমি ভিডিও করি। সবাই ভিডিওতে দেখেছেন উনি কি বলেছেন। আমি তার শাস্তি চাই।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুস সাদিক বলেন, ‘এটা ডিলিট করার কোনো উপায় নাই। আমি ঘুস নেইনি। উনিতো নিজেই ভিডিও করেছেন। উনি নিজেই টাকা দিয়ে ভিডিও করেছেন। চাঁদা দাবি করতে পারেন সে উদ্দেশ্যেই তিনি ভিডিওটি করেছেন।পরেতো ভাইরালই করে দিলো। নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘ভিডিওটি খুব আপত্তিকর। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
/আইপি