বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২৩
শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
তিস্তায় ভিটে মাটি হারা শত শত মানুষ এখন ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করেছে তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে। খরশ্রতা নদীর চর যেন এখন বিস্তৃন ফসলের মাঠ, ধু ধু বালুচরে ফলছে সব ধরনের ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তিস্তার বুকে এবছর চরের পরিমাণ ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর। যার মধ্যে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ফসলের চাষাবাদ হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ৫০০শত হেক্টর বেশি। ফসল ভালো হলে কাঙ্খিত বাজার মূল্য থাকলে তিস্তার চর থেকে কৃষকরা পাবে ২ শত ৯২ কোটি ১৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ১৩৭ টাকা। এই মৌসুমে তিস্তার চর থেকে প্রায় তিন'শ কোটি টাকার ফসল চাষাবাদ হবে।
তিস্তা চরের কৃষকরা বলছে, আমরা এখন চর নই, গ্রামে বসবাস করি। আমরাও এখন গ্রামের মতই ফসল ফলাচ্ছি। চরাঞ্চলে এখন হাট-বাজারও আছে। আমরা এখান থেকে প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র কিনতে পারি। খেতের ফসল বিক্রি করতে পারি। আমাদের চর এখন গ্রামে পরিনত হয়েছে। আমরাও এখন ভালো আছি।
তিস্তা চরের খুনিয়াগাছ এলাকার বাসিন্দা মহুবর আলী বলেন, গত বছর এগুলো জমিতে পানি ছিলো। এবছর চর পড়েছে, আমি এবার ৪ বিঘা জমিতে কুমরো চাষ করেছি। পাশেই তিস্তার ছোট ছোট নালায় পানি আছে। ওখান থেকে পানি এনে গাছের গোড়ায় দেই। ফসল ভালো হয়েছে। আল্লাহ দিলে এবার লাভ হইবে।
একই এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম, হোসেন আলী, তালুকদার, আব্দুল বাতেন বলেন, তিস্তার বুকে এই চরে, আমাদের ভাগ্য বদলে গেছে। বন্যা মৌসুমে আমাদের খুব দুর্ভোগে থাকতে হয়। তখন আমাদের কষ্ট বোঝানোর মত কাউকে খুজে পাইনা। কেউ সাহায্য করেনা। এই মৌসুমে তিস্তায় অনেকটা বেশি চর পড়েছে। আমাদের জমিগুলো চরে ভেসে উঠেছে এটা সৃষ্টি কর্তার ভালোবাসা। এইবার আমরা চর থেকে অনেক লাভবান হতে পারবো।
লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার বিস্তীর্ণ চরে চাষিরা ফলাচ্ছেন সোনার ফসল। চরাঞ্চলে সবজির প্রাচুর্য দেখে যে কারও চোখ জুড়াবে। চরাঞ্চলের শত শত মানুষ এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। এতে প্রতিটি ঘরে কষ্ট কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে হাসি ফুটেছে কৃষকের ঘরে ঘরে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, গতবছরের তুলনায় এবছর তিস্তার চরে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। ফসলও অনেকটা ভালো হয়েছে। চরের জমি চাষে, চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, চলছে আবাদের প্রদর্শনী। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে চাষিদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি। ব্লক সুপারভাইজার গন তাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন।
এমআই