ইবি প্রতিনিধি:
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের কন্ঠ সদৃশ নিয়োগ বোর্ডের প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত কয়েকটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। উক্ত ঘটনার পর এবার অনিবার্য কারণ দেখিয়ে মেডিকেল অফিসারসহ তিনটি পদের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ২০ ও ২২ ফেব্রয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মেডিকেল অফিসার, শারীরিক শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে। এবং উক্ত পদসমূহের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের তারিখ ও সময় পরবর্তীতে জানানো হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ভাইরাল হওয়া উক্ত অডিওসমূহের রেশ না কটতেই আজ বিকাল ৩টায় মিসেস সালাম নামের ফেইসবুক আইডি থেকে উপাচার্যের কন্ঠ সদৃশ নিয়োগ সংক্রান্ত আরও একটি অডিও ফাঁস হয়। আগের অডিওগুলোর ন্যায় এটিতেও উপাচার্যের কন্ঠ ব্যতীত অপর দিক থেকে কোনো কথোপকথন শোনা যায়নি।
অডিওতে আবদুস সালাম বলছিলেন, ' হিউম্যান রিসোর্স এর চেয়ারম্যান আসছিলো। বাচ্চা একটা চেয়ারম্যান, নামটা কি তার? আমার এখানে আসছিলো, হিন্দু বোধ হয়। আপনি হিউম্যান রিসোর্সের যে নিয়োগটা, শুধু তার চেকটা একটু নিয়ে আইসেন। আমি যে তার চেক করবো। তো আমার মনে হয় উনি যেন সেই নামটা! উনি যে বললো তাদের ডিপার্টমেন্ট এর জন্য সুপারিশ করছে কিনা? যদি মিলে যায় তাহলে সবগুলো খোলার দরকার নাই। আর না হলে আপনি ব্যাংকিং এন্ড ফিন্যান্স এর ওটাও সাথে করে নিয়ে আসেন।'
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ফারাহ জেবিন নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রথম ফোনালাপ ফাঁস হলে সেটি দ্রুত যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওটিতে এক প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহ সহ নানা বিষয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়। পোস্টের ক্যাপসনে সেই প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগ প্রার্থী অলিউর রহমান অলির বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া গত শুক্রবার রাতে মিসেস সালাম নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে উপাচার্যের ফোনালাপের আরও দুইটি অডিও ফাঁস হয়।
একটিতে আবদুস সালাম(?) তার মেয়াদের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগে ডিন, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এমনকি কন্টাকটররাও একেকজনের কাছ থেকে ১৬ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা করে নিতেন বলে উল্লেখ করেন। অন্যটিতে স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে ভাংচুর করা চাকরি প্রত্যাশি সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ইবি থানায় করা মামলার বিষয়ে সুজন নামে একজনের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। এতে তিনি চাকরি প্রত্যাশি সাবেক সেই ছাত্রলীগ নেতাদের মাস্তান বলে অভিহিত করেন। এরই প্রেক্ষিতে শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার অপসারণের দাবিতে তার কার্যালয় তালা দিয়ে আন্দোলনও করেছিলেন তারা।
এদিকে অডিওটিতে কন্ঠটি তার নয় বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। তার নির্দেশনায় বিষয়টি নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। জিডির বিষয়টি ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি নিশ্চিত করেছেন।
জিডিতে (৬৭২ নং) বলা হয়, ' বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ফারহা জেবিন নামের একটি ফেইক আইডি থেকে ইবি ভিসির কন্ঠ সদৃশ কথোপকথন প্রচারিত হয়েছে। যা ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরিভূক্ত করার আবেদন করা হলো।'
এদিকে প্রচারিত অডিওতে উপাচার্যের কথোপকথনের বিষয়গুলো উল্লেখ করে পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এধরনের মন্তব্য ও কর্মকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষকনেতারা। অডিওতে কন্ঠটি উপাচার্যের নিজের কিনা সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদানসহ তার অবস্থান পরিষ্কার করার জন্যও বলা হয় উভয় বিবৃতিতে।
এমআই