জায়দুল ইসলাম, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
তুলা একটি আন্তর্জাতিক মানের শিল্প ফসল, যা বিশ্বব্যাপী 'সাদা সোনা' হিসেবে পরিচিত। তুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সভ্যতা ও অর্থনীতি। এটি আমাদের দেশের একটি মৌলিক চাহিদা যা বস্ত্রের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বে প্রায় ৭৫টি দেশে তুলা চাষ করা হয়। বিশ্বে তুলা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ৪০তম অবস্থানে রয়েছে।
নিজেদের চাহিদা মিটাতে বড় অংকের খরচ মিটাতে হচ্ছে তুলা আমদানি করে। তুলা উৎপাদন দেশের পাহাড়ি এবং খরা মৌসুম এলাকায় সাধারণত হয়ে থাকে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও তুলা চাষে সম্ভাবনা দেখছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে তুলা চাষ করে সফল হয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে নূর মোহাম্মদ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় রূপালি এবং শুভ্রাসহ মোট ৬জাতের তুলা চাষে সফলতার মুখ দেখে এই শিক্ষার্থী।
কৃষি বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ জানান, তুলা চাষে দেশের দক্ষিণাঞ্চল হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় চাষযোগ্য অঞ্চল। এখানে রবি মৌসুমে অধিকাংশ জমি অনাবাদী থাকে। আর এই মৌসুমও তুলা চাষের জন্য উপযোগী৷ সঠিক তত্ত্বাবধান এবং দিকনির্দেশনা পেলে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য তুলা চাষ হতে পারে একটা সুবর্ণ সুযোগ।
নূর মোহাম্মদকে সার্বিকভাবে তত্ত্ববধান করেন কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ভূঞা। তিনি নয়া শতাব্দীকে জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় উপকূলীয় অঞ্চলে তুলা চাষ প্রজেক্টিতে আমরা সুন্দরভাবে সফল হয়েছি। আমাদের এই গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো লবণাক্ত মাটিতে তুলা চাষ সম্ভব কিনা তা দেখা। দীর্ঘ ৮মাসের গবেষণায় আমরা দেখেছি এই অঞ্চলের মাটি এবং জলবায়ু তুলা চাষের জন্য সম্ভাবনাময়ী।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা তুলা চাষের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটা অঞ্চল। জমিতে লবণাক্ততার কারণেই এই অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা কম। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ফসলগুলো লবণাক্ততা সংবেদনশীল হওয়ার কারণে অধিকাংশ জমিই রবি মৌসুমে পতিত থাকে। তুলা লবণাক্ত অঞ্চলে জন্মানোর একটি উপযোগী ফসল। বিগত কয়েক বছর ধরে তুলা উন্নয়ন বোর্ড আমন ধান কাটার পর রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে তুলার উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য এডাপ্টিভ ট্রায়াল স্থাপন করেছে।
কৃষি বিভাগের এই পরীক্ষামূলক তুলা চাষ দেখতে এসে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক ড.সীমা কুন্ডু নয়া শতাব্দীকে বলেন, তুলা বাংলাদেশের জন্য একটা সম্ভাবনাময়ী ফসল। কৃষি বিভাগের এই পরীক্ষামূলক চাষ প্রমাণ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া তুলা চাষের জন্য উপযুক্ত। এখন আমরা এই চাষাবাদকে আরো সম্প্রসারিত করবো। কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দান করবো।
তুলা চাষের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, তুলা চাষ বিভিন্নভাবে চাষিদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।আমন ধান কাটার পর দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক অনাবাদি জমিতে তুলার আবাদ করে বস্ত্রশিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলার আঁশ জোগানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তুলা উন্নয়ন বোর্ড আগ্রহী তুলা চাষিদের সব প্রকার সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।
সময় জার্নাল/এলআর