আজ ১৭ রমজান, পবিত্র ঐতিহাসিক বদর দিবস। এ দিনে সংঘটিত বদর প্রান্তের যুদ্ধ ছিল ইসলামের প্রথম সিদ্ধান্তমূলক সামরিক জিহাদ। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ই রমজান বদরের এ ঐতিহাসিক জেহাদে মুসলমানদের বিজয় রচিত হয়েছিল।
বদরযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পবিত্র মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম তথা মুসলমানদের বিজয়ের ধারা সূচিত হয়েছিল এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে আবু জেহেলের এক হাজার সুসজ্জিত বাহিনীর বিপরীতে রাসুলুল্লাহ (সা:) এর ৩১৩ জন সাহাবায়েকেরাম আল্লাহ তায়ালার গায়েবী সাহায্যে আবু জেহেলের বিশাল বাহিনীকে পর্যুদস্ত করেছিলেন অত্যন্ত কঠিনভাবে।
এ যুদ্ধে মুশরিক বাহিনীর ২৪ জন সর্দার মারা যান। এ যুদ্ধে ২ জন আনসার কিশোর সহোদর হযরত মাআজ (রা.) ও হযরত মুআজ (রা.) আবু জেহেলকে হত্যা করেন। সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রা.) আবু জেহেলের মাথা কেটে বিশ্বনবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট হাজির করেছিলেন।
ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন আর মুশরিক বাহিনীর ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়েছিলেন। আর এরা ছিল গোত্রসমূহের সর্দার এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। এ জেহাদে ইসলাম ও রাসূল (সা.) এর চরম ১৪ জন শক্রর মধ্যে আবু জেহেল, উৎবা ও শায়বাসহ ১১ জনই জাহান্নামে পৌঁছে যায়। যুদ্ধ শেষে বদর প্রান্তরে নিয়ম অনুযায়ী ৩ দিন অবস্থান শেষে চতুর্থ দিনে রাসূল (সা.) মদিনার পথে যাত্রা করেছেন। এ সময় তাঁর সাথে ছিল বন্দী কোরায়েশগণ এবং গণীমতের মালামাল। আর এসবের তত্ত্বাবধানে ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে কা’ব (রা.)। রাসুল (সা.) ছাফরা প্রান্তরে কাফের বাহিনীর পতাকা বহনকারী নযর ইবনে হারেসকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যেসব পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণে বদরযুদ্ধের সূচনা হয় তা হচ্ছে মদীনা শরীফে সাফল্যজনকভাবে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কুরাইশদের হিংসা, আবদুল্লাহ বিন ওবাই ও ইহুদীদের যড়যন্ত্র, সন্ধি শর্ত ভঙ্গ, কুরাইশদের যুদ্ধের হুমকি, বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার শংকা, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধ্বংস সাধন এবং নবীজী (সা.) কে চিরতরে নিশ্চিহৃ করার অশুভ চক্রান্ত। প্রত্যক্ষ কারণ ছিল নাখালার ঘটনা, কাফেরদের রণপ্রস্তুতি, আবু সুফিয়ানদের অপপ্রচার, যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য ওহী লাভ, মক্কাবাসীদের ক্ষোভ। এসব কারণে এবং আবু জেহেলের নেতৃত্বে এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণের সংবাদ শুনে তাদের গতিরোধ করার জন্য ৬২৪ খ্রিস্টাদের ১৬ মাচর্, ১৭ রমজান ৩১৩ জন মুজাহিদ (৬০ জন মুহাজির অবশিষ্টরা ছিল আনছার) নিয়ে মদীনা শরীফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ৮০ মাইল দূরে বদর নামক স্থানে যুদ্ধে উপনীত হন এবং ১৭ রমজান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
বদর যুদ্ধের সফলতা হচ্ছে, আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি, বিশ্ব বিজয়ের সূচনা, সর্বোত্তম ইতিহাস সৃষ্টি, প্রথম সামরিক বিজয়, কুরাইশদের শক্তি খর্ব, ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন, নবযুগের সূচনা, চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারক যুদ্ধ, রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন, জেহাদের অনুপ্রেরণা, বীরত্বের খেতাব লাভ, পার্থিব শক্তির ভিত্তি স্থাপন ইসলাম ও মহানবী (সা.)’র প্রতিষ্ঠা, মিথ্যার ওপর সত্যের জয়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সৃষ্টি, সূরা আনফালে ঘোষিত আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা পূরণ, রাসূল (সা.) এর দোয়া কবুল হওয়া বদর জেহাদে মুসলমানদের পক্ষে আল্লাহ তায়ালার গায়েবী সাহায্যের জলন্ত প্রমাণ। বদর জেহাদের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে। বদর জেহাদে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বদানকারী ছিলেন হয়রত ওমর (রা.), হযরত আলী (রা.) ও হয়রত আমীর হামযা (রা.)। কায়েরদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন আবু জাহেল, উৎবা, শায়বা ও পতাকাবাহী নযর ইবনে হারেশ, ওয়ালিদ বিন মুগিরা আবু সুফিয়ান।
সাহাবাগণ (রা.) এর পক্ষ থেকে প্রথম তীর নিক্ষেপকারী সাহাবী ছিলেন হযরত সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রা.)। বদর জেহাদে অংশ নেয়া সাহাবী (রা.) মধ্যে ২ জন ছিলেন উষ্টারোহী, ৮০ জন তলোয়ারধারী এবং অবশিষ্টগন ছিলেন তীর বা বর্শধারী। এ জেহাদে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের দিয়ে সাহায্য প্রদান করেন। জেহাদের পূর্ব রাতে বদর প্রান্তরে প্রবল বৃষ্টির কারণে কাফেরদের এলাকা কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে পড়া, সাহাবগনের বালুময় অবস্থান-স্থল বৃষ্টির কারণে জমে গিয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া এবং পানি সংগ্রহের সুযোগ পাওয়া। খেজুরের ডাল তলোয়ারের মত ধারালো হওয়ায় কাফেরদের কতল হওয়া।
পবিত্র বদর দিবস উপলক্ষ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, পবিত্র বদর যুদ্ধে রসূল (সা.) এর নিতৃত্বে ৩১৩ জন সাহাবী আল্লাহ তায়ালার গায়েবী সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে তৎকালীন কাফের গোত্রসমূহের সরদার ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ ৭০ জনকে হত্যা করে ইসলামকে বিজয়ী করেছিলেন। তায়ালার গায়েবী সাহায্যের মাধ্যমে ইসলামের সকল যুদ্ধে মুসলমানেরা বিজয়ী হয়েছিলেন। আজো ইসলামের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মহান আল্লাহর গায়েবী সাহায্য লাগবে। আর আল্লাহর গায়েবী সাহায্য পাওয়ার মাপকাঠি হচ্ছে আধ্যাত্মিক শক্তি, যা আমাদের অর্জন করতে হবে।