নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৬ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে পাশকৃত হবু শিক্ষকদের যেন অপেক্ষার পালা শেষই হতে চায় না! এ যেন আঠারো মাসে বছর। সেই লিখিত পরীক্ষার ফলাফল থেকে অপেক্ষার পালা শুরু হয়েছে এখনও প্রতিটি ধাপে অপেক্ষা আর অপেক্ষা!
১৬ তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৫ এবং ১৬ নভেম্বর। এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সারাবিশ্বে মহামারী COVID 19 হানা দেয়। এনটিআরসিএ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে সময় নেয় ১ বছরেরও বেশি। অথচ কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা নীতিমালায় উল্লেখ আছে যে, সর্বোচ্চ ২ মাসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারবে। নিবন্ধন ইতিহাসে এত বেশি সময় কোনও ব্যাচের লাগেনি। এই লিখিত ফলাফল প্রকাশের জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে। এরপর, ভাইভা পরীক্ষা নিতে কর্তৃপক্ষের সময় লাগে প্রায় ৭ মাস। করোনা পরবর্তী সময়ে দ্রুত সময়ে ভাইভা শেষ করার জন্যেও আন্দোলন করতে হয়েছে। যেখানে অন্যান্য ব্যাচগুলোর ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ ভাইভা শেষ করতে সর্বোচ্চ দুই মাস সময় নিয়েছিল।
১৬তমদের কষ্ট এখানেই শেষ নয়, মাত্র ৭ দিনের ভাইভা বাকি থাকতে কর্তৃপক্ষ ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ১৬ তমরা ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি হতে বঞ্চিত হয়। ১৬ তমদের ভাইভা পরবর্তী চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ করা হয় ১৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখে। যেখানে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ করা হয় ১৮,৫৫০ জন প্রার্থীকে। তারপর গণবিজ্ঞপ্তির জন্য আবার অপেক্ষা! এ অপেক্ষার পালা যেন ১৬তমদের পিছু ছাড়ছেই না! এই অপেক্ষার প্রহরে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির পূরণ না হওয়া প্রায় ১৫ হাজার পদ নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এখানেও হতাশার শেষ নেই। ঐ ১৫ হাজার পদের বেশিরভাগই নারী কোটার এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের। ১৬তমদের মধ্যে খুব বেশি কেউ আবেদন করতে পারল না।
বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি তাদের গলার কাঁটা হয়ে উঠলো। কারণ, এই বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির কারণে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি পিছিয়ে পড়লো। আবারও অপেক্ষা শুরু হলো ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির জন্য। ১৬ তম মানেই কি অপেক্ষা! তাদের অপেক্ষার পালা যেন শেষই হয় না?
আবার শুরু হলো ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির জন্য আন্দোলন। আন্দোলনের মুখে অবশেষে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই কাঙ্খিত ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তারপর কর্তৃপক্ষ ১ মাসের বেশি সময় ধরে আবেদন নেয়। যেখানে এত বেশি সময় না দিলেও হতো। এই সময়ের মধ্যে ইনডেক্সধারি কিছু প্রার্থী ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ না পেয়ে রিট মামলা দায়ের করে। ১৬তমদের কষ্ট আর হতাশা আরও বেড়ে যায়। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি বন্ধ করার জন্য এক দল নিবন্ধন প্রার্থীদের সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির আবেদন নেয়া শেষ হয় ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে।
এবার প্রাথমিক সুপারিশ এর ফলাফল প্রকাশের পালা। এখানে এসে অপেক্ষা না করা লাগলে এবং আন্দোলন না করা লাগলে ১৬তমদের মানায় না! এ যেন সৃষ্টিকর্তার লীলা! সুন্দর, স্বচ্ছ, নতুন এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেখানে ফলাফল প্রকাশে সর্বোচ্চ ১৫ দিন লাগার কথা সেখানে কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩৫ দিন পার হয়ে গেলেও ফল প্রকাশ করতে পারেনি। কেন এত বেশি সময় নিচ্ছে তারা! ১৬তমদের বুঝে আসে না। ১৬তমদের অপেক্ষার পালা পূনরায় শুরু হয়েছে। এই ফলাফল কবে নাগাদ প্রকাশ করা হবে সেটা কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে বলতে পারে না।
এনটিআরসিএ এর কর্মকর্তাদের নিকট জানতে চাইলে তাদের কেউ বলেন ফল এখনও প্রস্তুত হয়নি, কেউ বলেন ফল প্রস্তুত কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রনালয় অনুমতি দেয়নি, কেউ বলেন ফল পূন:নিরীক্ষার কাজ চলছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কার কথা সত্য এটা ফল প্রত্যাশিরা বুঝতে পারে না।
এই বিষয়ে ১৬ তম নিবন্ধনধারী"ইকবাল হাসান বলেন ১৬ তমরা গোটা নিবন্ধন জগতের সবচেয়ে অবহেলিত, উপেক্ষিত ও হতাশাগ্রস্ত ব্যাচ। এদের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আজ অবধি দেখা যায়নি।আমরা অতি দ্রুত ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশ চাই"।
আরেকজন প্রার্থী "রাশেদ অর্নব বলেন লিখিত ফলাফলে বিলম্ব,ভাইভা পরীক্ষায় বিলম্ব, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিলম্ব, ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি দিতে বিলম্ব এবং ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশে বিলম্ব!আর কত বিলম্ব ১৬ তমদের সহ্য করতে হবে? কর্তৃপক্ষের কর্ণকুহরে কেন এই আর্তনাদ পৌছায় না"।
ফলাফল প্রত্যাশিরা ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশের ফলাফল প্রকাশের জোর দাবী জানিয়ে পূনরায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ফেসবুকসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যমে তারা প্রচার প্রচারনা শুরু করেছে। তারা আগামী ১৬ মার্চের মধ্যে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশের ফল প্রকাশ করা না হলে তুমুল আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এমআই