সর্বশেষ সংবাদ
দীর্ঘ ২৮ বছর অচল থাকার পর ২০১৯ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে সচল হয় ডাকসু ও ১৮টি হল সংসদ। সেই নির্বাচনের চার বছর পূর্ণ হলো আজ শনিবার। ডাকসু ও হল সংসদের সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালে। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর থেকে হল ও ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়। এরপর দেড় বছর পেরোলেও ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কারা ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন?
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ডাকসু–মনোনীত পাঁচজন শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের সদস্য হন। এ আনুষ্ঠানিক ফোরামে তাঁরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পান। কিন্তু নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও গত বছরের মে মাসে সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক–প্রতিনিধি নির্বাচন হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসে সারা দেশে সিনেটের ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ডাকসুর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তার আগের বছর বেতন-ভাতায় খরচ হয় ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া হল সংসদ নির্বাচন ও অভিষেকের জন্য (নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে) ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সর্বশেষ বাজেটে। পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন আলোচনা আছে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ‘সবুজ সংকেত’ না পাওয়া পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে না। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার হয়তো ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার মতো ‘ঝুঁকি’ নিতে চাইছে না। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চান, আওয়ামী লীগ ডাকসু নির্বাচন চায় কি না। জবাবে কাদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ডাকসু নির্বাচন প্রতিবছরই হওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে এটা করেনি, এটা তাদের ব্যর্থতা। আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ এখানে নেই।’
ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রশাসনকে নিয়ে মানুষ কথা বলতেই পারে। এটাকে আমরা নেতিবাচকভাবে দেখি না। শব্দচয়ন যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু বিষয়টি তো প্রশাসনের মাধ্যমেই হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনা আছে। কিন্তু ভাবনাটা বিবেচনাপ্রসূত হতে হয়। ভাবনাটা বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তগুলো আসতে হয়। অবিবেচনাপ্রসূত হয়ে গেলে হয়তো অন্য ধরনের আরেকটি বক্তব্য চলে আসবে। আমি বিশ্বাস করি যে প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হতে পারলে তা দেশের গণতন্ত্রসহ সামগ্রিক উন্নয়নে একটা বড় সূচক হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিগুলো নিয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তখন সেটা খুবই সুবিবেচনাপ্রসূত হতে হয়। সে ধরনের একটি অনুকূল ও সুন্দর পরিবেশ বিশেষভাবে প্রত্যাশিত।’ আমি বিশ্বাস করি, প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হতে পারলে তা দেশের গণতন্ত্রসহ সামগ্রিক উন্নয়নে একটা বড় সূচক হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিগুলো নিয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তখন সেটা খুবই সুবিবেচনাপ্রসূত হতে হয়। সেই ধরনের একটি অনুকূল ও সুন্দর পরিবেশ বিশেষভাবে প্রত্যাশিত।
মো. আখতারুজ্জামান, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্য পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি। ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে এ মুহূর্তে কী কী বাধা আছে, তা জানতে চাওয়া হলে উপাচার্য বলেন, ‘অনেক বিষয় থাকে। প্রথমত, গণতন্ত্রচর্চার মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিটা অনেক সময় হোঁচট খায়। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির অনেক অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং সম্প্রীতির অভাবের মতো বিষয়গুলো অনেক সময় ক্যাম্পাসে চলে আসে। সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।’
ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী যাঁরা
প্রথমত, গণতন্ত্রচর্চার মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিটা অনেক সময় হোঁচট খায়। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির অনেক অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং সম্প্রীতির অভাবের মতো বিষয়গুলো অনেক সময় ক্যাম্পাসে চলে আসে। সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।’ মো. আখতারুজ্জামান, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এর আগে ২০১৯ সালে ডাকসুর যে নির্বাচন হয়, তার স্বচ্ছতা নিয়ে নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন ছিল। ছাত্রলীগ ছাড়া সব প্যানেল নির্বাচন বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে ডাকসুর ভিপি পদে নির্বাচিত হন নুরুল হক আর সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন আখতার হোসেন। প্রথমে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পরে তাঁরা দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের মোট ২৫ পদের অন্য ২৩টিতে জিতেছিল ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। তাঁদের মধ্যে জিএস পদে ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী ও এজিএস পদে একই প্যানেলের সাদ্দাম হোসেন (এখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি) নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ১৮ হল সংসদের মধ্যে ১২টিতে ভিপি ও ১৪টিতে জিএস পদে জেতে ছাত্রলীগ। অন্য পদগুলোয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।
নুরুল হক ও গোলাম রাব্বানী ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জিএস
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রভাবে ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ কমেছিল
ডাকসু নির্বাচনের আগে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল গণরুমব্যবস্থা উচ্ছেদ করে শিক্ষার্থীদের জীবনমানের উন্নয়ন। ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বিভাগের অতিরিক্ত উন্নয়ন ফি ও কিছু হলের অতিরিক্ত আবাসিক ফি কমানো, হল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ কিছু কাজ করলেও গণরুমব্যবস্থা উচ্ছেদে সফল হননি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রভাবে হলগুলোয় ‘গেস্টরুম নির্যাতনের’ মাত্রা কিছুটা কমেছিল। ডাকসু ও হল সংসদ অচল হয়ে পড়ায় এখন হল নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভোটের জন্য ‘ক্লিন ইমেজ’ (স্বচ্ছ ভাবমূর্তি) বজায় রাখার ভয়ও নেই। এ কারণে নির্যাতন বেড়েছে।
তহবিলের সাড়ে ৮৩ লাখের বেশি টাকা খরচ করেন ডাকসু নেতারা
ডাকসু ও হল সংসদের ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উদ্যোগের খরচ হিসেবে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার তহবিল থেকে সাড়ে ৮৩ লাখ টাকার বেশি খরচ করেছিলেন ডাকসুর নেতারা। করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চে ডাকসু ও হল সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আর নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন না হওয়ায় ডাকসু ও হল সংসদের কার্যক্রম এখন বন্ধ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দপ্তরের তথ্য বলছে, ডাকসু ও হল সংসদের ফি হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগের মতোই ৬০ টাকা করে মোট ১২০ টাকা বছর বছর আদায় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ও অব্যাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ডাকসুর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তার আগের বছর বেতন-ভাতায় খরচ হয় ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া হল সংসদ নির্বাচন ও অভিষেকের জন্য (নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে) ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সর্বশেষ বাজেটে। এর বাইরে ডাকসু ও হল সংসদের জন্য অনুদান হিসেবে ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সময় জার্নাল/এসএম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল