সৈয়দ জামান লিংকন, রিসার্চ ডিরেক্টর, মিতসুবিশি কেমিক্যাল অ্যাকুয়া সল্যুশন্স:
এসো নিজে করি
❶আপনি কতটুকু পুরুষ কিংবা কতটুকু নারী?
❷কোন প্রানী চাহিবা মাত্রই তার লিংগ পরিবর্তন করতে পারে?
❸কেন মানুষসহ কিছু প্রানী বাচ্চা প্রসব করে কেনই বা কিছু প্রানী ডিম প্রসব করে?
❹ভবিষ্যতে মানুষের কি ধরনের পরিবর্তন হতে পারে?
আমরা ছোটবেলা থেকে বায়োলজিতে পড়ে এসেছি XX ক্রোমোজোম হলে মেয়ে আর XY ক্রোমোজোম হলে ছেলে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় এর বাইরেও কিছু কম্বিনেশন পাওয়া গেছে যেমন X, XXY, XYX আর এসব কম্বিনেশনের কারনে কে কতটুকু পুরুষ কিংবা কতটুকু নারী সেটা নির্ধারণ হয়ে থাকে। আমাদের মাঝে কেউ শতভাগ পুরুষ, কেউ হয়ত ৩০ ভাগ পুরুষ।
আমরা যারা পুরুষত্ব নিয়ে গর্বিত তাদের জন্য দুঃসংবাদ আসছে সামনে, পুরুষত্ব নির্ধারক Y ক্রোমোজোম টি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে, বর্তমানে একটি Y ক্রোমোজোমের আকৃতি X ক্রোমোজমের ১২ ভাগের ১ ভাগ, শুরুতে যেটা সমান সমান ছিল। এ অবস্থা চলতে থাকলে ১০ কোটি বছর পর Y ক্রোমোজোম টি বিলীন হয়ে যাবে। তবে এটা খুব শীঘ্রই ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জাপানের এক ধরনের ইঁদুরের সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলোর Y ক্রোমোজোম অলরেডি বিলীন হয়ে গেছে। একদিন মানুষ প্রজাতীর Y ক্রোমোজোম বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এমন যদি হত আপনি মনে মনে ভাবলেন আগামীকাল জেন্ডার পরিবর্তন করবেন এবং ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার আশা পুরন হয়েছে, ব্যাপারটা কেমন হতো। মানবদেহে কিছু সুনির্দিষ্ট কাঠামোর কারনে নিজের ইচ্ছে মত জেন্ডার পরিবর্তন করতে না পারলেও পৃথিবীর ৪৫০ প্রজাতির মাছ কিন্তু নিজের প্রয়োজনে ইচ্ছে মত জেন্ডার পরিবর্তন করতে পারে। ক্লাউন ফিস তাদের অন্যতম, এরা দলবদ্ধভাবে থাকে এবং দলের যে মাছটি সবচেয়ে বড় সে হয় পুরুষ আর তার পরের সাইজটা হয় নারী। কোন কারনে পুরুষ মাছটি হারিয়ে গেলে মেয়ে মাছটি নিজেকে পুরুষে রুপান্তরিত করে ফেলে, ওভারীর পরিবর্তে তার শরীরে তৈরি হয় স্পাম এবং এর পরের সাইজের মাছটি তখন নিজেকে মেয়ে তে রুপান্তরিত করে। এই রুপান্তরের তাদের সময় লাগে ১০ দিন।
সৃষ্টির শুরুতে অর্থাৎ কয়েক কোটি বছর আগে কোন প্রানীই কিন্ত স্তন্যপায়ী ছিল না। কোন একটা ভাইরাস সংক্রমণের কারনে প্রাণীদের এই পরিবর্তন ঘটেছে। ভাইরাস তাদের কপি তৈরি করার জন্য প্রানীর ডিএনএ তে প্রবেশ করে থাকে এবং সেই সময়ে কোন একটি ভাইরাসজনিত কারনে প্রানীর দেহে PEG10 নামক অংশটুকু ডিএনএতে যুক্ত হয়ে যার ফলে ঐ সব প্রজাতির প্রাণী স্তন্যপায়ী প্রানীতে রুপান্তরিত হয়।
ভবিষ্যতে নতুন নতুন ভাইরাস সংক্রমণের কারনে আমাদের ডিএনএতে পরিবর্তন আসতে পারে, যার কারনে বদলে যেতে পারে ডিঅনএ, পরিবর্তন হতে পারে চিরাচরিত মানুষের স্বভাব কিংবা ভবিষ্যতে মানুষই তার প্রয়োজনে ডিএনএ পরিবর্তন করে মানবসভ্যতায় বিরাট পরিবর্তন আনবে। কৃষি বিজ্ঞানীরা যেমন ডিএনএ পরিবর্তন করে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন, আমরা পাচ্ছি নতুন প্রজাতির শস্য যাদের আকার আকৃতি, স্বাদ আসছে বিরাট পরিবর্তন।
আবার যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আসত, তাহলে বায়োলজি পড়া এবং ডিএনএ নিয়ে গবেষনা করতে চাইতাম।
ফটো: ক্লাউন ফিস, প্রয়োজনে জেন্ডার পরিবর্তনে সক্ষম