সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:
“দেশের একটি পরিবারও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না” মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন প্রতিশ্রতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলায়। এরই মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এসেছেন জেলার ১ হাজার ১৬১টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার। আগামী বুধবার (২২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে নরসিংদী জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে সুবিধাভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিজের জমি ও ঘর না থাকায় ৩০ বছর ধরে সদর উপজেলার বাগহাটা কবরস্থানে খুপড়ি ঘর তৈরি করে বসসবাস করে আসছিলেন ৭০ বছর বয়সী মালেছা বেগম ও তার পরিবার। দু:খ দুর্দশাগ্রস্ত জীবনে এবার প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ৪র্থ ধাপে দুই শতক জমির দলিলসহ সেমিপাকা ঘর পেতে যাচ্ছেন শোনে খুবই খুশি তিনি। কখনও ভাবেননি কপালে জুটবে বসবাসের এক টুকরো জমি ও ঘর।
মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম বাসস্থান না থাকায় মালেছা বেগমের মতই মানবেতর জীবন কাটতো নরসিংদীর ৬ উপজেলার ১ হাজার ১৬৫টি পরিবারের। কেউ থাকতেন রেলস্টেশনে, কেউ বাসস্ট্যান্ড, বাজার বা সড়কের পাশে, কেউবা থাকতেন অন্যের বাড়ি বা পরিত্যক্ত কোন স্থানে।
ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষের স্বপ্ন পূরণ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪র্থ ধাপে জেলার ৪৫৯ জন গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই, হতে যাচ্ছে স্থায়ী ঠিকানা।
এর আগে তিন ধাপে জেলার ৭০২ পরিবারকে দেয়া হয় পানি, বিদ্যুৎ, টয়লেটসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। কষ্টের দিনগুলোর কথা ভুলে গিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন সুবিধাভোগী পরিবারগুলো। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনতে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্যও নেয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ। ৪র্থ ধাপে ৩৪ টি স্পটে নির্মাণ করা আরও ৪৫৯ জন গৃহহীন পরিবারকে দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে আগামী বুধবার (২২ মার্চ)। এসময় ভিডিও কনফারেন্সে নরসিংদী জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সদর উপজেলার শীলমান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পাওয়া মালেছা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি ও আমার পরিবার ভূমিহীন। ৩০ বছর ধরে বাগহাটা এলাকার কবরস্থানের জায়গায় খুপড়ি ঘর বেধে বসবাস করে আসছি। আমার বাবার কবরও হয়েছে এইখানে। জীবনেও ভাবিনি জমিসহ থাকার ঘর পাবো। প্রধানমন্ত্রীর এই উপহারে আমি খুবই খুশি।
শিবপুর উপজেলার সেলিনা বেগম বলেন, জমি বাড়িঘর কিছুই নেই। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাই পেলাম। আমার মত সকল অসহায়রা এখন বাড়ির মালিক। ভাবতে ভাল লাগছে।
শীলমান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীনদের আশ্রয় হয়েছে। পাশাপাশি চলাচলের সুবিধা উপযোগী সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় তারা আলোকিত পরিবার হয়ে উঠবে।
শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনিয়া জিন্নাত বলেন, শুধু থাকার জায়গা নয়, তারা যাতে স্বাবলম্বী হতে পারেন সেলক্ষে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। যাতে তারা কর্ম করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মেহেদী মোর্শেদ বলেন, এরই মধ্যে আশ্রয় পাওয়া পরিবারগুলোর জীবন মানে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। কেউবা করছেন হাঁস-মুরগি, ছাগল ও গর লালন-পালন। সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছেন সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা।
জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারফ খান বলেন, জেলার ৬ উপজেলায় ৪ ধাপে নির্মাণ করা মোট ১১৬১টি ঘরের মধ্যে তিনধাপে ৭০২ ও ৪র্থ ধাপে ৪৫৯ টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে আনা হলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায়। এছাড়া ৪ টি পরিবারকে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন নরসিংদী জেলা শাখার অর্থায়নে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত জেলা হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে নরসিংদী জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন।
সময় জার্নাল/এলআর