রুহুল সরকার, রাজীবপুর: ধান ভাঙ্গা,চাল বা গম সহ বিভিন মসলা গুঁড়ো করার জন্য এক সময় গ্রাম অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিল ঢেঁকি এবং উড়ুন। এগুলো ব্যাবহার করাও ছিল বেশ পরিশ্রমের। আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকতার আবর্তে এখন ঢেঁকি ও উড়ুন এর ব্যবহার এখন অনেক কমে গেছে। গ্রাম অঞ্চলে ঢেঁকির দেখা মিললেও উড়ুনের দেখা মেলে কদাচিৎ।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম সদর উপজলার কাঁঠালবাড়ি হাটে বিক্রি করতে দেখা গেল উড়ুনের। এই এলাকার কাশেম আলী এখনও গ্রামীণ হাটবাজারে উড়ুন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
কাঠ দিয়ে তৈরী করা এই জিনিসটিকে অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন উড়ুন,করাল উলকি সহ আরও বিভিন্ন নামে।এতে ধান ভেঙ্গে চাউল, বিভিন মসলা গুড়ো করা ও চালের আটা তৈরী করা যায়।
উড়ুনের ভিতরে যে পণ্য গুঁড়ো করতে হবে তা রেখে একটি ৩ থেকে ৪ ফিট পর্যন্ত সরু লম্বা কাঠের দন্ড স্থানীয় ভাষায় এর নাম 'গাইন' দিয়ে আঘাত করে গুঁড়ো করা হয়। দন্ডের একপাশে গোল করে লোহার রিং বসানো হয় যাতে কাঠ সহজে থেঁতলে না যায় এবং গুঁড়ো করতে সহজ হয়। লোহার রিংয়ের ফলে সহজেই গুঁড়ো হয়ে যায়।
বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কাঠ দিয়ে তৈরী করা যায় উড়ুন। তবে কাশেম আলী বেশির ভাগ ব্যাবহার করে কাঁঠাল ও নিম কাঠ। প্রথমে দেড় থেকে দুই ফিট উচ্চতা করে গোলাকার শুকনো গাছের গুড়ি কেটে নেওয়া হয়। এরপর উপরের অংশ নিখুঁত ভাবে ১০ থেকে ১৫ ইঞ্চি গভীরতায় কেটে নিয়ে ভেতরের অংশটি মসৃণ ভাবে পালিশ করা হয় এবং বাহিরের অংশ ছেটে মসৃণ করা হয়। এরপর রং করলেই তৈরী হয়ে যায় উড়ুন। ছোট ও বড় দুই আকৃতির প্রতিটি উড়ুন বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ১০০০ টকায়।
কাঁঠাল বাড়ি এলাকার কাশেম আলী প্রায় ৪০ বছর থেকে নিজ হাতে উড়ুন বানিয়ে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করছেন। সম্প্রতি কাঁঠাল বাড়ি বাজারে উড়ুন বিক্রি করার সময় তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, 'বাপদাদার আমল থাকি উড়ুন বানাই।আগোত খুব চাহিদা আছিল এলা, মেশিন বাইর হওছে মানুষ মেশিনোত ধান মসলা আটা ভাঙ্গে। আগোত গ্রামে বউঝি'রা সারা রাইত গিত কওছে আর ধান ভাঙ্গছে উড়ুন আর ঢেঁকিত '।
গ্রামীন সনাতনী এই পদ্ধতি এখনও প্রত্যন্ত কিছু কিছু গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়। পিঠা বানানোর জন্য চাল ভাঙ্গতে, হলুদ মরিচ বা বিভিন্ন মসলা গুঁড়ো করতে ব্যবহার করে তারা। বাজার বিভিন্ন প্যাকেটজাত মসলা পওয়া যায় তবে এগুলোর গুনগত মান নিয় প্রশ্ন আছ। ঢেঁকি বা উড়ুন এ ছাঁটা চালে পুষ্টিমান অটুট থাকে, মসলা গুঁড়ো করলে স্বাদটাও অটুট থাকে তাই কোন কোন পরিবার এখনও প্রাচীন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।
উড়ুন এর বিষয় জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজলার সরকারী মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যলয়ের সাবেক শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্লা বলেন, ঢেঁকি এবং উুড়ুন এক সময় এলাকার ধনী মানুষের বাড়িতে থাকত। এগুলা তখন অভিজাত্যর প্রতিক ছিল এখন বিভিন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতি আসার ফলে এগুলো হারিয়ে গিয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলের আদিবাসী, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠি এবং গ্রামের সনাতন ধর্মালম্বীরা এই উড়ুন এর ব্যবহার ধরে রেখেছে।
সময় জার্নাল/এমআই