সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের অডিও ফাঁসের দীর্ঘ দেড় মাস অতিবাহিত হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিষয়টি নিয়ে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে অনতিবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহবান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় সংগঠনটির কার্যালায়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এ আহবান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমানের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, 'গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বেশ কয়েকটি কন্ঠ সদৃশ অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ক্যাম্পাসে একধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অডিওগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রসহ স্টেকহোল্ডারদের জন্য একইসঙ্গে বিব্রতকর ও অপমানজনক।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুসারী শিক্ষকমণ্ডলী 'বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু ' জিকির করেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন যা আদর্শিক জায়গা থেকে খুবই আপত্তিকর। অডিও গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একপ্রকার ইমেজ সংকটের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া বিষয়টি শেখ হাসিনা সরকারের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।'
এতে আরও বলা হয়, 'অডিও গুলোর বিশ্লেষণে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস ও আর্থিক লেনদেন করেছেন মর্মে অনুমিত হয়। বক্তব্যের শেষে মাননীয় উপাচার্যের এধরনের অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তিগত আলাপ জনসম্মুখে উঠে আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উপর্যুক্ত বিষয়ে অনতিবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানানো হয়।'
এর আগে অডিও ফাঁসের পর বিভিন্ন মহল থেকে ফাঁস হওয়া অডিওসমূহ ধারণের উৎস উদঘাটনে উপাচার্যকে তদন্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছিলো। এতে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যক্তিদের ফাঁস হওয়া অডিও সমূহের উৎস উদঘাটনের বিষয় উল্লেখ করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংবাদ সম্মেলনে উক্ত কমিটিকে একপাক্ষিক বলে অভিহিত করে কমিটির উপর অনাস্থা প্রকাশ করেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা।
উল্লেখ্য, ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে লাগাতারভাবে বিভিন্ন আইডি থেকে উপাচার্যের কন্ঠ সদৃশ বেশ কয়েকটি অডিওক্লিপ ফাঁস হয়। অডিও গুলোতে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করতে শোনা যায়। এছাড়াও উঠে আসে নিয়োগ বোর্ডের প্রশ্ন ফাঁস ও আর্থিক লেনদেনের কথোপকথন।
ফাঁস হওয়ার পরপরই অডিওগুলো অতি দ্রুত যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত ঘটনায় তিন দফায় উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা। এবং গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত অডিওসমূহতে উপাচার্যের কথোপকথনের বিষয়গুলো উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অডিওতে কন্ঠটি উপাচার্যের নিজের কিনা সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদানসহ তার অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য পৃথক বিবৃতি দিয়েছিলো শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম। কিন্তু উপাচার্য অডিওতে কথোপকথনগুলো তার নিজস্ব মনে করলেও লিখিতভাবে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সম্মত হননি বলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছে উভয় সংগঠন। এমনকি এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ ও তাতে শিক্ষক সমিতি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিলেও এ নিয়ে উপাচার্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এদিকে প্রচারিত অডিও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ইলেট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ লিপিবদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে লিখিতভাবে পত্র প্রেরণ এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলো শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম। তবে সেখান থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। ফলে আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছে শাপলা ফোরাম।
সময় জার্নাল/এলআর