শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

রোজার পুরস্কার

শুক্রবার, এপ্রিল ৭, ২০২৩
রোজার পুরস্কার

মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন:

মহান আল্লাহর অনুপম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি সবকিছুর স্রষ্টা। ধরাপৃষ্ঠে যা কিছু বিদ্যমান, তার সমস্ত জিনিসই পরম রবের সৃষ্টি। শুধু সৃষ্টি করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং সকল সৃষ্ট জীবের লালন-পালনের একচ্ছত্র কর্তৃত্বও তিনি বহন করে চলেছেন। সে জন্যই কোরআনে কারিমের প্রথম সুরায় এসেছে, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’, অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহের রব তথা পালনকর্তা।

সকল সৃষ্ট জীবের মধ্যে আশরাফুল মাখলুকাত তথা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে তিনি মানুষকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং এ মানুষের মধ্য থেকেই পৃথিবীতে তিনি তার প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন। তিনি মানুষের জন্য ইবাদত তথা উপাসনা পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন এবং এসবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিদান তথা বিনিময় বা পুরস্কারের ব্যবস্থাও রেখেছেন। মোমেন-জীবনে অভাবনীয় পুরস্কারপ্রাপ্তির এমন এক ইবাদত পদ্ধতির নাম হলো মাহে রমজানের রোজাব্রত পালন করা; যার মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর একান্ত নৈকট্য লাভে সক্ষমতা অর্জন করে। যেখানে ইসলাম-বিধৃত সব ইবাদতের প্রতিদান ফেরেশেতা ও সওয়াবের মাধ্যমে প্রদত্ত হয়ে থাকে, সেখানে কেবল রোজা হলো ইবাদতের এক ব্যতিক্রমী পদ্ধতি, যার প্রতিদান বা পুরস্কার স্বয়ং মহান আল্লাহ দিয়ে থাকেন।

মহানবী (সা.)-এর অমীয় বাণী, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ অন্যত্র আরও ঘনিষ্ঠভাবে বলা হয়েছে, ‘রোজা পালন হয় শুধু আমার জন্যই আর আমি নিজেই রোজার পুরস্কার।’ অর্থাৎ রোজাদারের কষ্টের বিনিময়ে স্বয়ং মহান রবই তার জন্য মহা-ইপ্সিত পুরস্কারে পরিণত হন। সৃষ্টির জন্য স্রষ্টাকে পাওয়ার পরম আকুলতা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু রোজাব্রত পালনের মাধ্যমে সেই দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত পুরস্কারের নিশ্চয়তা পেয়ে থাকে রোজাদার; ইবাদত হিসেবে রোজার মূল গুরুত্ব, তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য এখানেই নিহিত। বিশ্বনবীর ঘোষণা, ‘সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি খুশির লগ্ন রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ইফতারের সময় (যখন রোজাদারের প্রার্থনা মঞ্জুর করা হয়) আর অন্যটি এই রোজা রাখার বিনিময়ে পরকালীন জীবনে মহান আল্লাহর দিদার নসিব হওয়ার সময়। রোজা রাখার বদৌলতে মহান রবকে দেখা, তার সাক্ষাৎ লাভ করা এবং তার নৈকট্য অর্জনে ধন্য হওয়ার চেয়ে অধিক প্রত্যাশিত জিনিস মানুষের জন্য আর কিছুই হতে পারে না; সেই অভাবনীয় পুরস্কারই অর্জিত হয় রোজার মাধ্যমে।

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মোমেন ব্যক্তি এমন প্রতিদান লাভ করে থাকেন, যা ইতিপূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি। রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ মহান আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও অধিক প্রিয়। সকল সৃষ্টি, বিশেষ করে ফেরেশেতারা, এমনকি সমুদ্র-গভীরের মৎস্যাদিও ইফতার পর্যন্ত রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে, নিত্যদিন বেহেশতকে রোজাদারের জন্য সুসজ্জিত করা হয় এবং মহান রবের ঘোষণা চলতে থাকে এই মর্মে যে, অচিরেই আমার নেক বান্দারা তোমার ভেতরে প্রবেশ করবে, অভিশপ্ত শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয় যেন কোনো রোজাদারকে বিভ্রান্ত করতে বা পাপাচারের দিকে ধাবিত করতে না পারে এবং রমজানের শেষ রজনীতে রোজাদারের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এর বাইরে জান্নাতের বিশেষ এক দ্বার ‘রাইয়ান’, যা দিয়ে শুধু রোজাদারের প্রবেশাধিকার থাকবে; এ দরজার বিশেষত্ব হলো, একবার এদিক দিয়ে প্রবেশ করলে তার আর কখনো পিপাসার উদ্রেক হবে না।

রোজাকে ঢাল বলা হয়েছে, তার কারণ রোজা ব্যক্তিকে যাবতীয় অনাচার-পাপাচারসহ যা কিছু অকল্যাণকর, সবকিছু থেকে রোজা বাঁচাবে। একটা নফল বা সুন্নত পালন করলে রমজানে তা ফরজের সমান সওয়াব দেয়া হবে আর একটি ফরজ সম্পন্ন করলে তা ৭০টি ফরজ পালনের সমান বলে বিবেচিত হবে। স্মতর্ব্য যে, রমজানে বান্দার আমলের পুণ্যাদির ক্ষেত্রভেদে ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হবে। আর এই রোজার বরকতেই বান্দা প্রকৃত আত্মশুদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়ে থাকে। সুতরাং রোজার পুরস্কারের খতিয়ান কখনো শেষ হওয়ার নয়; অনন্তকাল ধরে মহান রবের সন্তুষ্টির মধুর প্রস্রবণ ধারা রোজাদারের জন্য অব্যাহত থাকবে।

বস্তুত মহান আল্লাহ মানুষকে অসংখ্য নেয়ামত দিয়ে ধন্য ও সমৃদ্ধ করেছেন। বান্দার প্রতি পরম রবের মমত্ববোধ আর দান-অনুদানের হিসাব করা কোনোমতেই সম্ভবপর নয়; এমনকি আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের সংখ্যা গণনা করেও কখনো শেষ করা যাবে না। তাই তিনি বলে দিয়েছেন, ‘ওয়া ইন তাউদ্দু নিমাতাল্লাহি লা তুহসুহা’, অর্থাৎ তোমরা যদি আল্লাহর অনুগ্রহসমূহকে গণনা করতে চাও তা কস্মিনকালেও শেষ করতে পারবে না। বান্দার প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের যেমন সীমা-পরিসীমা নেই, তদ্রূপ রোজার পুরস্কারের ক্ষেত্রেও তা নির্দিষ্ট পরিমাণের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং প্রতিপালক স্বয়ং রোজার পুরস্কার তুলে দেবেন রোজাদারের হাতে- আর সে পুরস্কার হবে সর্বোত্তম, যা বান্দার কল্পনারও বাইরে।

লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল