নিজস্ব প্রতিবেদক:
এক বছরের ব্যবধানে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ওয়াশিংটনে হতে যাওয়া বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রসঙ্গ তোলার ইঙ্গিত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের বার্তা ওয়াশিংটনকে পৌঁছে দেওয়া হবে।
পাশাপাশি ঢাকার পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বাহিনীর সাত জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হতে পারে।
অন্যদিকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে জোর দিতে পারে ওয়াশিংটন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মানবাধিকার, গণতন্ত্র কিংবা র্যাব ইস্যুতে বেশ কিছু দিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সিরিজ সফরসহ কানেক্টিভিটি বাড়াতে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক বেশ ভালোর দিকেই এগোচ্ছে।
মোমেন-ব্লিঙ্কেনের বৈঠক নিয়ে ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, গত বছরের এপ্রিলেই যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিল মোমেন-ব্লিঙ্কেন। গত বৈঠকের পর দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেড়েছে। এরপর দু’দেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সিরিজ সফর বিনিময় হয়েছে। এবারের বৈঠক অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, বৈঠকে নির্বাচন প্রসঙ্গ বেশ গুরুত্ব পাবে। ঢাকার পক্ষ থেকে নির্বাচন ইস্যু তোলা হতে পারে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকার স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর- এমন বার্তা ওয়াশিংটনকে দেওয়া হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার (১০ এপ্রিল) ওয়াশিংটন সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বৈঠকে বসবেন মোমেন-ব্লিঙ্কেন। তবে কোন ফরমেটে বৈঠকটি হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত বার্তা দিতে পারেনি কর্মকর্তারা।
গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার-বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেক বিষয় নিয়েই আপত্তি তুলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ব্লিঙ্কেনের কাছে সরকারের আপত্তির বিষয়টি তোলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, রোহিঙ্গা ইস্যু, জলবায়ু ইস্যু, শ্রম অধিকার নিশ্চিত করাসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিনিদের সমর্থন করার বিষয়ে আহ্বান জানানো হবে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়টিতে বাতিলের অনুরোধ করা হতে পারে। এছাড়া জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রে র্যাবের বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা তুলতে পারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার আগে গত ৫ এপ্রিল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, আমেরিকা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রার সময়ে আমেরিকা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশকে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। আমরা খুব ভাগ্যবান, কারণ পরপর তিনবার তার দাওয়াত পেলাম।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে আলাপ নিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমরা চাই স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমেরিকাও চায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলাপ করার বার্তা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
গত বছরের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। সবশেষ, চলতি বছরের মার্চে শুরুর দিকে নয়াদিল্লিতে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সময় ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল মোমেনের। তবে সেখানে আনুষ্ঠানিক বা সাইডলাইনে কোনো বৈঠক হয়নি দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে।
এমআই