নিজস্ব প্রতিবেদক:
তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপ করলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব। এতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘তামাকজাত পণ্যে কার্যকর করারোপ ও সম্ভাব্য প্রভাব’ বিষয়ক কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়েয়র জ্যেষ্ঠ প্রকল্প সমন্বয়কারী শাহিন উল আলম। কর্মশালায় তামাকজাত পণ্যে কার্যকর করারোপ এর বিষয়ে উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা তুলে ধরা হয়।
এতে জানানো হয়, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সের প্রায় ৩৫.৩ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। ২০১৮ সালে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। একই অর্থবছরে তামাক খাত থেকে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন করা (মূসক) বাবদ রাজস্ব আয় হয় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম বৃহৎ তামাক ব্যবহারকারী দেশ।
উন্নয়ন সমন্বয়ের পক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য কার্যকর করারোপের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, নিম্নস্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের দাম ৪০ থেকে ৫৫ টাকা, এসডি ২২.৮০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫.৭৫ টাকা করা, একইভাবে মধ্যম স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৭০ টাকা এবং এসডি ৪২.২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৫.৫০ পয়সা করা, উচ্চস্তরের ১০ শলাকা সিগারেট ১১১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা এবং এসডি ৭২.১৫ থেকে বাড়িয়ে ৭৮ টাকা করা, প্রিমিয়াম সিগারেট ১০ শলাকা ১৪২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা এবং এসডি ৯২.৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭.৫০ টাকা করা, নিম্নস্তরের সিগারেট খুচরা মূল্যে এক্সাইজ ট্যাক্সের অংশ ৫৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করা, এর সঙ্গে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
সরকার এই সুপারিশ মানলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১ শতাংশ থেকে কমে ১৩.৯২ শতাংশ হবে। ১৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১০ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করা থেকে নিরুৎসাহ হবে। দীর্ঘ মেয়াদের চার লাখ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং চার লাখ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। প্রায় ৪২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। এতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি ড. আতিউর রহমান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘তামাকবিরোধিতা এখন একটি গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের সংসদ সদস্যরাও ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। অনেকেই বলেন কর বাড়ালে বিক্রি কমে যাবে, ফলে রাজস্ব আয় কমে যাবে। রাজস্ব কমার আশঙ্কা একদমই অমূলক। বরং কার্যকর করারোপ করলে রাজস্ব বাড়বে।’
বক্তব্যে আতাউল মাসুদ বলেন, কর বাড়িয়ে বাড়িয়ে তরুনদের তামাক থেকে বিরত রাখা সম্ভব।
এমআই