এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট: পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে তিন মাসের ব্যবধানে আবারো আগুন লেগেছে। সোমবার (৩ মে) বেলা ১১টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসীর ধারণা প্রায় দশ একর বন ভুমি এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
আগুন নেভাতে স্থানীয় লোকজন ও বনবিভাগ কাজ করছে। তবে, বিকালে ফায়ার সার্ভিসের শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জের দুটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।আগুনের বিস্তৃতি যাতে না বাড়তে পারে সেজন্য ফায়ার লাইন (আগুনের অংশের মাটি আলাদা করা) কাটার কাজ শুরু করছে তারা।
এলাকাবাসী ও বন বিভাগের ধারনা মৌয়ালদের ফেলে দেয়া আগুন থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের পার্শ্ববর্তী ধানসাগর এলাকার চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়।
শরণখোলা উপজেলা সদর থেকে ১০কিমি দূরত্বে দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মরা ভোলা নদী পার হয়ে সুন্দরবন। সেখান থেকে এক কিলোমিটার বনের গভীরে সুন্দরবনের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ির আওতাধীন এলাকার ২৪ নং কম্পার্টমেন্টে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। বন বিভাগের শরণখোলা স্টেশন অফিস, মরাভোলা ও দাসের ভারানী টল ফাড়ির বনরক্ষীরা এবং দক্ষিণ রাজাপুর, মাঝেরচর ও রসুলপুর গ্রামের শতাধিক গ্রামবাসী আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে।
আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়া দক্ষিণ রাজাপুর, মাঝেরচর ও রসুলপুর গ্রামের আফজাল চাপরাশি, রেজাউল, সালাম ও সুমন বলেন, সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে তারা শতাধিক গ্রামবাসী সেখানে ছুটে এসেছে। তারা বাড়ি থেকে কলসি, বালতি, জগ ও হাড়ি নিয়ে পাশের ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে একদল গ্রামবাসী আগুন নিভাতে চেষ্টা চালাচ্ছি।
অন্য একটি দল আগুন যাতে সুন্দরবনের সব দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ফায়ার লাইন (আগুনের অংশের মাটি আলাদা করা) কাটার কাজ করছি। মরা ভোলা নদী থেকে আগুন লাগার স্থানের দুরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দূরে হওয়ায় পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে অন্য কোন পানির উৎস নেই। যার কারনে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায় দশ একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে তাদের ধারনা।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন মুঠোফোনে বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে ফাঁড়ির অদূরে ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখতে পায় বনকর্মীরা। তারা সেখানে যেয়ে দেখে কোথাও কোথাও ধোঁয়ার কুন্ডলি আবার কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে।
এই বনে বলা, গেওয়া ও লতাগুল্ম জাতীয় গাছপালা রয়েছে। আগুনের খবর স্থানীয়দের জানানো হলে তারা আমাদের সাথে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। আগুনের বিস্তৃতি যাতে সব এলাকায় ছড়িয়ে না পড়তে পারে সেজন্য স্থানীয়দের নিয়ে একদিকে পানি ছিটানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে ফায়ার লাইন কাটার কাজ চলছে। শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার দমকল বাহিনীর দুটি দল বনের ভিতরে পাইপ লাইন টানতে শুরু করেছে। পানির যোগান কম থাকায় আগুন নেভানোর কাজে দারুণ অসুবিধা হচ্ছে। জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের ফেলে দেয়া আগুন থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারন করছি। তবে, কতটুকু এলাকায় আগুন ছড়িয়ে কি ধরনের গাছপালা পুড়ছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পরে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণ করে জানানো হবে।
সময় জার্নাল/এমআই