নিজস্ব প্রতিবেদক:
উন্নয়ন ও অর্জনের অংশীদার হতে জাপানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের বাস্তবসম্মত নীতির কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির জন্য আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৫০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল্যায়ন করে পরবর্তীতে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আগামী ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।’
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে টোকিওর ওয়েস্টিনের সাকুরায় জাপানিজ বিজনেস লিডারদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে জাপানের সঙ্গে আমাদের গত পঞ্চাশ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী পঞ্চাশ বছর এবং তারপরেও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আসুন আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে পরবর্তীতে উচ্চস্তরে নিয়ে যাই।’
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, গত পাঁচ দশকে আমাদের দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল দেখে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বৃহত্তর পদযাত্রার প্রত্যাশা আমাদের।
জাপানের ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের পরামর্শগুলো নোট করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘টোকিওতে আমাদের দূতাবাস বাংলাদেশে আপনাদের উদ্যোগকে সহযোগিতা ও সহজতর করতে প্রস্তুত। অনুগ্রহ করে আপনাদের জন্য অপেক্ষারত ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে বাংলাদেশে আসুন।’
‘আমরা ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি অব্যাহত রাখব এবং বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আপনাদের সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করব।’-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানির (আরও জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে) উত্থাপিত বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রক ও নীতিগত সমস্যা সমাধান করেছেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উদার বিদেশি বিনিয়োগ ব্যবস্থা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক খরচ, প্রচুর মানবসম্পদ, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতাসহ বিশাল দেশীয় ভোক্তা বাজার এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি অত্যন্ত লাভজনক অবস্থান হিসেবে দ্রুত আবির্ভূত হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার উন্নত করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে সচেষ্ট। সারাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পরিকল্পিত অবকাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করছে।
শেখ হাসিনা জাপানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে ২০১৯ সালে আমি টোকিওতে আপনাদের সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলাম। আমি খুশি তারপর থেকে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অনেক কিছু ঘটেছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও জাপানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়া বাংলাদেশ ও জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এমআই
