সময় জার্নাল ডেস্ক:
ডলারের অভাবে তীব্র কয়লা সঙ্কটে পড়েছে দেশের বড় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
একই কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সর্ববৃহৎ পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও। এতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে লোডশেডিং। এর আগেও কয়লা সঙ্কটে কয়েক দফায় বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছিল।
জানা গেছে, ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় নেওয়া হয় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। ২০১২ সালে গঠিত হয় বিআইএফপিসিএল। ২০১৩ সালে পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয় ওই কোম্পানির।
২০১৬ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরুর কথা থাকলেও সেটি হয় ২০১৭ সালে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রটির। কিন্তু বারবার শুধু সময় পিছিয়েছে।
গত বছরের ২৩শে ডিসেম্বর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে কেন্দ্রটি। কিন্তু কয়লার অভাবে ১৪ জানুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। মূলত ডলার-সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।
এক মাস পর আবার উৎপাদনে ফেরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দিনে ৫ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন। এক জাহাজ কয়লা এনে এক সপ্তাহের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সচল রাখা যায়। কিন্তু গত ১৫ই এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪শে এপ্রিল থেকে এটি আবার বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ জানিয়েছে, কয়লার জাহাজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। কয়লা পেলে দুয়েকদিনের মধ্যে ফের রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হবে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হলে দিনে ১০ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। বর্তমানে তাদের ৬ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ দেওয়া আছে। নতুন করে ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ পেয়েছে দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ। শুরু থেকে তারাই কয়লা সরবরাহ করছে এই কেন্দ্রে। ৬০ লাখ টন কয়লা দিয়ে আগামী তিন বছর রামপাল কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে এসব কয়লা।
দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হলো পটুয়াখালীর কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এটির দুটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কেন্দ্রটি। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসি) এটি নির্মাণ করে। ডলার-সংকটের কারণে কয়লা আমদানি নিয়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো একই সমস্যায় পড়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।
বিসিপিসি সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে কয়লার টাকা বকেয়া রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালিয়ে আসছে তারা। গত জানুয়ারিতে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানি। এরপর মজুতকৃত কয়লা দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রটি। এমন পরিস্থিতিতে গত ফেব্রুয়ারিতে কিছু ডলারের ব্যবস্থা করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে কেন্দ্রটির উৎপাদন সচল থাকে। এখন নতুন করে বকেয়া বিলের চাপে পড়েছে কেন্দ্রটি। কয়লার অভাবে নতুন করে সঙ্কটে পড়েছে দেশের বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। মজুতকৃত কয়লা দিয়ে হয়তো চলতি মাস চালানো যাবে। কয়লা আমদানি করতে না পারলে ফের বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
সময় জার্নাল/এলআর