সময় জার্নাল ডেস্ক:
আজ সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস-২০২৩’। ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস’ (আইসিএন) এবার দিবসটির প্রতিপ্রাদ্য নির্ধারণ করেছে-‘আওয়ার নার্সেস, আওয়ার ফিউচার’ অর্থাৎ আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ। আধুনিক নার্সিংয়ের জনক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
একজন রোগীকে সুস্থ করতে চিকিৎসকের চেয়ে নার্স কোনো অংশে কম ভূমিকা রাখেন না। নার্সরা ২৪ ঘণ্টাই রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে বাকি সবকিছুই করে থাকেন নার্স। এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত নার্সদের সংখ্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে ২৩ জন নার্স থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে এ সংখ্যা দুইজন।
ডব্লিউএইচও’র গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নিবন্ধিত নার্স প্রয়োজন। বাংলাদেশে মোট এক লাখ ৩৬ হাজার চিকিৎসকের বিপরীতে নিবন্ধিত নার্স রয়েছে মাত্র ৭৭ হাজার ৮৩৮ জন। অথচ চিকিৎসকের অনুপাতে বর্তমানে নার্স থাকার কথা চার লাখ ৮ হাজার জন। কিন্তু চিকিৎসক অনুপাতে নার্সের ঘাটতি রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ১৬২ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত কয়েক বছরে দেশের স্বাস্থ্যখাত অনেক দূর এগিয়েছে। এর পেছনে অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের নার্সরাও। বিশেষ করে করোনা মোকাবিলা, শতভাগ ভ্যাকসিন দেওয়াসহ দেশের যেকোনো সংকটকালে নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। করোনা রোগীর সেবা দিতে গিয়ে ৩৩ জন নার্স মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় ৬ হাজার নার্স।
বর্তমানে দেশে সরকারি ৬৭টি ও বেসরকারি ৩৭২টি নার্সিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেবার মান বাড়তে নার্সদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) মহাপরিচালক মাকসুরা নূর এনডিসি বলেন, নার্স সংকট নিরসনে সরকার করোনার মধ্যে দুই দফায় ১৩ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও ১০ হাজার নিয়োগের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। নার্সদের উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিতে এমএসসি নার্সিং কোর্স চালুসহ সরকারিভাবে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দেশে নার্সদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি পর্যায়ে মাত্র দুটি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট (এমএসসি ইন নার্সিং) নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও চালু আছে একটি। যেখানে ৬টি বিশেষায়িত বিষয়ের জন্য ১২০টি আসন থাকলেও মাত্র ৬০টি আসনে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি বিশেষায়িত বিষয়ের জন্য তিনটি করে মোট ২৭টি আসন রয়েছে। বেসরকারিভাবে ১৩টি প্রতিষ্ঠানে নার্সিংয়ে এমএস ডিগ্রি চালুর অনুমোদন পেয়েছে।
দেশে বিএসসি পাস নার্স আছেন ১৪ হাজার ৯৭৪ জন। মাস্টার্স ইন নার্সিং/মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথ পাস নার্স আছেন ২৮৫৪ জন। দেশে নার্সিংয়ে পিএইচডি অধ্যয়নের সুযোগ নেই। মাত্র ১৬ জন বাইরে থেকে পিএইচডি ইন নার্সিং সম্পন্ন করেছেন। তবে, সরকারিভাবে পিএইচডি ইন কমিউনিটি/পাবলিক হেলথ ন্যাশনাল ২২ জন। বর্তমানে সাতজন নার্স বিদেশে পিএইচডি অধ্যয়নরত আছেন।
বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে নার্সিং শিক্ষায় চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের জন্য ৩২টি সরকারি, সাতটি স্বায়ত্তশাসিত ও ১১৫৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে আসন সংখ্যা ৯ হাজার ৪৬০টি। তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্সস অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের জন্য ৪৬টি সরকারি ও ৩৪৮টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এছাড়া দুই বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং শিক্ষায় ১০টি সরকারি, একটি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারিভাবে ১১৯টি প্রতিষ্ঠানে ৫৫২০টি আসন রয়েছে। একইভাবে বিএসসি ইন মিডওয়াইফারি শিক্ষায় চারটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২৪০টি আসন রয়েছে। দুই বছর মেয়াদি এমএসসি কোর্সের জন্য দুটি সরকারি ও ১৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ৯০০ আসন রয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর