সময় জার্নাল ডেস্ক:
সফট স্কিল হলো আপনি কাজটা করতে গিয়ে কতটা সৃজনশীলতার সাথে করতে পেরেছেন, একটি দলে থেকে কিভাবে দলবদ্ধ ভাবে কাজটি করেছেন বা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আপনার কাজ সম্পর্কে আপনার ক্লাইন্ট বা বসকে কতটুকু সাবলীল ভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, ইত্যাদি।
বর্তমান সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই হার্ড স্কিলের চেয়ে সফট স্কিলকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এখন আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিলস সম্পর্কে জানবো।
১. যোগাযোগের দক্ষতা: কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতার মানে এই নয় যে, জোরালো বক্তব্য দিতে পারতে হবে। কমিউনিকেশন স্কিল বলতে যার সাথে কথা বলা হচ্ছে তার কথা বলার ভঙ্গিমা বা ধরনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে কোন কিছু বোঝাতে পারার সক্ষমতাকে বোঝায়। অর্থাৎ যে কোন বিষয় যে কোন ব্যক্তির নিকট সহজে বোঝাতে পারা। এছাড়া নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রেও এই গুনটির প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইমেইল কমিউনিকেশন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কতটা সুন্দর, সাবলীল ও সহজবোধ্য ভাবে আপনি আপনার ম্যাসেজ ইমেইলের মাধ্যমে সেন্ডারের নিকট পাঠাতে পারবেন তা আপনার দক্ষতার প্রকাশ।
২. নেতৃত্ব দেয়া: নেতা এমন ব্যক্তি যিনি কাজ শুরু করেন এবং অধীনস্থদের জন্য নীতি এবং পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তাদেরকে নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত করেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিষ্ঠানের নতুন লক্ষ্য বা পরিকল্পনা সম্পর্কে জানে না আর এইসব জানানোর কাজটি করেন নেতা। একজন নেতা তার সঠিক নেতৃত্ব গুনাবলী এবং দিক নির্দেশনার মাধ্যমে কর্মীদের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত করবে এবং কাজ শুরু করবে। কর্মীদের উৎসাহ এবং প্রেরণা প্রদান করার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করার দায়িত্বটি কিন্তু একজন সঠিক নেতাই নেন। তিনি নেতৃত্বকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করে কর্মীদের অর্থনৈতিক এবং উৎসাহমূলক পুরষ্কার দিয়ে অনুপ্রাণিত করেন যাতে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি দয়িত্বশীল থাকে।
৩. নেটওয়ার্কিং: বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়তে আমাদের যে দক্ষতাটির প্রয়োজন হয় সেটি হলো নেটওয়ার্কিং। নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে যোগ্য, দক্ষ ও সফল মানুষদের সাথে যুক্ত থাকতে পারার সুফল অনেক। চাকরি পাওয়া, পদোন্নতি কিংবা কোন দরকারের সময় সাহায্য পাওয়া নেটওয়ার্কিং সবকিছুকে করে দেয় খুব সহজ।
৪. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি: যে কোন মানুষের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একটি বিশেষ গুন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যা তাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিতে পারে। জীবনে চলার পথে প্রতিদিনই আমাদেরকে বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। কঠিন সময়ে আমাদেরকে সাহস না হারিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। প্রথমে আমাদেরকে ঠিক করতে হবে আমরা আসলে কি চাই, কোন পথে আগালে আমরা সফলতা পাবো এবং সে পথ যত কঠিন হোক না কেন ”আমাদেরকে সেটা পারতে হবে” এই মনোভাব তৈরি করা।
৫. পেশাদারিত্ব: কর্মক্ষেত্রে যে বিষয়টি নিজের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দেয় তা হচ্ছে প্রফেশনালিজম বা পেশাদারিত্ব। কারণ, যে কোন দায়িত্ব দিয়ে নির্ভর করা যায় ঐ কর্মীর উপর যার পেশাদারিত্ব রয়েছে। এই নির্ভরতা ঐ ব্যক্তির ক্যারিয়ারে সফলতা নিশ্চিত করে। সময়মত অফিসে উপস্থিত থাকা, যেকোন কাজ সময়মতো করে দেয়া কিংবা সঠিক জায়গায় সঠিক পোষাক পরা, নিজের কোন কাজের ব্যর্থতা থেকে নিজে শিখা অন্যকে দোষারোপ না করা, এই সবই পেশাদারিত্ব বা প্রফেশনালিজমের অন্তর্গত।
৬. টিমওয়ার্ক: দলগত থাকার মানসিকতা বা দলের সবার সাথে মিশে কাজ করার মানসিকতা থাকা বা দক্ষতা থাকা উভয়ই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, নিজের মতামত ঠিকভাবে দিতে পারা এবং দলনেতার নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা।
৭. মানিয়ে নেয়া: যেকোন পরিবেশ পরিস্থিতে নিজেকে মানিয়ে নেয়াই হচ্ছে এডাপ্টিবিলিটি বা অভিযোজন। অনেক ক্ষেত্রে বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ার চাপ কিংবা নানাবিধ প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করে যেতে হয় এরকম পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে কাজ করে যাওয়ার সক্ষমতা আপনাকে ব্যতিক্রমী ও যোগ্য করে তুলবে।
৮. সৃজনশীলতা ও চিন্তন দক্ষতা: কঠিন সময়ে যিনি চিন্তা করে সহজ সামাধান বের করতে পারে দিন শেষে তিনিই সফলতা অর্জন করেন। সবসময় অন্যের কথা অনুসরণ না করে নিজেকে চিন্তভাবনা করা উচিত। প্রতিযোগীতাপূর্ণ চাকরির বাজারে যে নিজেকে যতটা বেশি সৃষ্টিশীল হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে কর্মক্ষেত্রে তার সফলতার পরিমাণ তত বৃদ্ধি পাবে।
৯. কুইক লারনার বা দ্রুত শিখতে পারার সক্ষমতা: কর্মক্ষেত্র বিস্তৃতির সাথে সাথে কাজের ধরণও পরিবর্তিত হচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই কাজগুলো সহজে আয়ত্বে আনতে না পারলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। তাই প্রয়োজন দ্রুত শিখে নেয়ার ক্ষমতা। কর্মক্ষেত্রে যত দ্রুত কোন প্রয়োজনীয় বিষয় আয়ত্বে এনে তা প্রয়োগ করা সম্ভব হয় সফলতা তত দ্রুতই হাতে ধরা দেয়।
১০. কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট: কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট বা দ্বন্দ ব্যবস্থাপনা যাই বলি না কেন এটি একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় অফিসিয়াল মিটিংএ দেখা যায় একটি বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে একেকজন একেক রকম মতামত দিচ্ছে। কেননা সব মানুষের চিন্তা, রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি একরকম হয় না। তাই সবার যোগ্যতাকে একসাথে ব্যবহার করতেই এই কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি এসেছে। এক্ষেত্রে সকলে মিলে সেক্রিফাইস মূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি কমন ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় যেটা প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলজনক।
সময় জার্নাল/এলআর