মোঃ আবদুল্যাহ চৌধুরী, নোয়াখালী প্রতিনিধি:
বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) হামলায় নিহত সেনাসদস্য আলতাফ হোসেন মাসুমের (২৪) মা ও একমাত্র ছোটবোন বিলাপ করতে করতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। কোনভাবেই তাদের কান্না থামানো যাচ্ছেনা। কে তাদের পাশে দাঁড়াবে, কে দিবে ভরসা!
মাসুমের মা শাহীনুর আক্তার রেখা বিলাপ করে বলছিলেন, আমার মাসুম কিভাবে, কবে এত সাহসী হলো রে, আমারে একা রেখে দেশের জন্য জীবন দিলো রে। কে আমাকে একা করলো রে, এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো রে। আমি আর আমার মেয়েকে কে দেখবে গো’ বলেই চুপ হয়ে আবারো মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
নিহত সেনাসদস্য আলতাফ হোসেন মাসুমের বাড়ি নোয়াখালী জেলা সদরের কাদিরহানিফ ইউনিয়নের পূর্ব লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে। তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনেরা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুর বাদ জোহর নিহত সেনাসদস্য আলতাফ হোসেন মাসুমের জানাযার নামাজ তার নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েক হাজার মানুষ তার জানাযার নামাজে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধায়নে রাষ্টীয় মর্যাদায় নিহত সেনাসদস্য আলতাফ হোসেন মাসুমকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরআগে কুমিল্লা সেনানিবাসথেকে আগত ক্যাপ্টেন সাদিকের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস টিম নিহত আলতাফ হোসেন মাসুমকে গার্ড অব অর্নার ও রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়।
নিহত সেনাসদস্য মাসুমের জানাযার নামাজের পূর্বে তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় এবং নিহতের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন, কুমিল্লা সেনানিবাসের ক্যাপ্টেন সাদিক, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম সিদ্দিকী রাজু, কাদিরহানিফ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহিম চৌধুরী। এসময় স্থানীয় মুসল্লিরা নিহত সেনাসদস্য মাসুমের মা এবং একমাত্র বোনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মাসুমের বাবা আবুল কাশেম মারা যান। তিনি স্থানীয় রেলগেট এলাকায় ডেকোরেশনের ব্যবসা করতেন। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন মাসুম। মা ও একমাত্র ছোটবোন সানজিদা সুলতানা মিমকে নিয়ে সুখের সংসার সাজানোর প্রত্যাশা ছিল তার।
মাসুমের ছোটবোন সানজিদা সুলতানা মিম বলেন, গতবছর আমি এইচএসসি পাস করেছি। ভাইয়া আমাকে বলেছে অনেক বড় হতে হবে। দেশের সেবা করতে হবে। এখন আমাদের ভবিষ্যতের কী হবে। মাকে নিয়ে আমি এখন কি করবো, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মিম।
মাসুমের বড় মামা মো. জহির উদ্দিন শাহিন বলেন, আমার এক খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে ভাগনের মৃত্যুর সংবাদ শুনি। বাবাহারা মাসুমের এমন আকষ্মিক মৃত্যুর সংবাদে দু’চোখে অন্ধকার দেখছি আমরা। বোন-ভাগনিকে এখন কি বলে শান্তনা দেব ভেবে পাচ্ছি না। আমার ভগ্নিপতির মৃত্যুর পর ভাগনে সংসারের হাল ধরে। আজ সেও দেশের টানে চলে গেলো।
মাসুমের প্রতিবেশী নুর উদ্দিন বলেন, মাসুমের মতো এত নম্র-ভদ্র ছেলে এ এলাকায় দ্বিতীয়টি নেই। সে তার বাবার মতোই লাজুক স্বভাবের ছিল। সে যখন হেঁটে যেত আমরা তাকে দেখলে তার বাবার কথা মনে করতাম।
পরিবারের লোকজন জানান, সর্বশেষ রমজানের ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসেন মাসুম। ছুটি শেষে ২৬ এপ্রিল চাকরিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে যান তিনি। মা ও বোনের সঙ্গে প্রায়দিনই কথা হতো তার। গত তিনদিন আগে শেষবারের মতো মায়ের সঙ্গে কথা হয় মাসুমের। মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই সৈনিক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুই কর্মকর্তা।
এমআই