খালেদ হোসেন টাপু, রামু প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের সংযোগস্থলে মইশকুম-ডাকভাঙ্গা সড়কে জারুলিয়াছড়ি ছড়ার উপর একটি সেতুর অভাবে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ-দূর্দশার শিকার হচ্ছে ৫টি গ্রামের হাজার হাজার জনসাধারণ। ওই স্থানে ২০০৮ সালে চলাচলের জন্য একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণকাজে অনিয়মের কারণে ২০১২ সালে সেতুটি ধ্বসে পড়ে।
পরে গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে একটি কাঠের সেতু বানিয়ে ঝূঁকি নিয়ে চলাচল শুরু করে। কয়েকবছর পর কাঠের সেতুটিও জরাজীর্ণ হয়ে ভেঙ্গে যায়। একারণে আশপাশের ৫টি গ্রামের মানুষ চলাচলে চরম দূর্ভোগের শিকার হয়ে আসছে। বর্ষা মৌসুম এলেই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ইতিপূর্বে ঝূঁকি নিয়ে এ কাঠের সেতু পার হতে গিয়ে ঘটেছে হতাহতের ঘটনাও। কেবল সেতু নয়, জারুলিয়াছড়ি ছড়ার দুইপ্রান্তে সড়ক ব্যবস্থা আরও নাজুক। কাঁচা সড়ক দিয়ে এখানকার বাসিন্দাদের যুগযুগ ধরে চলাচল করতে হচ্ছে।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ডাকভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা- কামাল, মুফিজুর রহমান, আমানুল হক, নুরুল হুদা ও নাজির হোসেন জানান- সড়কটি শত বছরের পুরনো। অথচ নেই বিন্দুমাত্র উন্নয়নের ছোঁয়া। এসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মইশকুম, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের শিবাতলী, ডাকভাঙ্গা, ফকিন্নিরচর, শহর আলীর চর গ্রামের ৫০০ পরিবারের কয়েক হাজার জনসাধারন।
এরমধ্যে শত শত শিক্ষার্থী রয়েছে- যারা ডাকভাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, মইশকুম ওসমান সরওয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন সেতুর অভাবে এখানকার শিক্ষার্থীরাও চলাচলে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এমনকি বর্ষা মৌসুম এলে এসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শিক্ষা লাভের পর্যাপ্ত সুযোগ থেকে এসব গ্রামের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। অসুস্থ লোকজকে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পাহাতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছড়াটি পানিতে একাকার হয়ে যায়। তখন মানুষের চলাচলও স্থবির হয়ে পড়ে। একারণে কৃষি সমৃদ্ধ এসব গ্রামের মানুষ কৃষি পণ্য বাজারেও নিতে পারেননা।
শিবাতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. কালু, আলী হোসেন, মোজাফ্ফর আহমদ, আবদুর রশিদ জানান- বর্ষা মৌসুমে জরাজীর্ণ কাঠের সেতু পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়ে আহত হয়েছে, ভেসে গেছে বই-খাতা। কেবল মাত্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামবাসী কাঠে সেতুটি নির্মাণ করেছিলো। কয়েকবছর আগে কাঠের সেতুটি ভেঙ্গে গেছে। এখানে একটি টেকসই সেতু ও চলাচলের সড়ক সংস্কারের জন্য গ্রামের বাসিন্দারা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার আকুল আবেদন জানিয়ে আসলেও কোন কূলকিনারা হয়নি। ফলে গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানিয়েছেন- কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মইশকুম গ্রামে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জারুলিয়াছড়ি ছড়ার উপর নির্মিত সেতুটি ১১ বছর আগে ভেঙ্গে যায়। পরে গ্রামবাসীর তৈরী কাঠের সেতুটি ভেঙ্গে গেছে। এ কারণে এখানকার মানুষ বর্তমানে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে।
তিনি আরও জানান- রামু উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর উদ্যোগে এখানে একটি সেতু নির্মাণ প্রকল্প টেন্ডারের জন্য প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। হয়তো বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শুরু সম্ভব হবে না। এজন্য বর্ষা মৌসুমে এলাকার লোকজনের চলাচলের জন্য তিনি একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে দেবেন।
সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রামু উপজেলা প্রকৌশলী মঞ্জুর হাসান ভূইঁয়া জানিয়েছেন- রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এখানে নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে এলজিইডি’র সদর দপ্তর থেকে এ সেতুর ব্যাপারে তাঁর কাছে তথ্য চেয়েছিলো। বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন- অচিরেই সেতুটি নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন এবং কাজ শুরু হবে।
সময় জার্নাল/এলআর