আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইকে (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে
পাকিস্তানে ক্ষমতার পালাবদল ঘটানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়। এর মাধ্যমে দেশটিতে কোনো একটি দলের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। এবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) ওই ভাঙা-গড়ার শিকার হতে যাচ্ছে।
প্রখ্যাত গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ‘পাকিস্তানে পুরাতন রাজনৈতিক দলকে ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং তার ধ্বংসাবশেষ থেকে নতুন কোনো দলকে সৃষ্টি করা হয়। যারা দেশ শাসন করে (সেনাবাহিনী) তাদের জন্য রাজনৈতিক দল তৈরি করা এবং ভাঙা একটি প্রিয় বিনোদন। তারা আবারও এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু করতে যাচ্ছে। এবার পিটিআইকে ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে অসংখ্য পিটিআই নেতা ওই দলটি থেকে পদত্যাগ করছে। প্রথমত, তারা সংবাদ সম্মেলন করে ৯ মে তারিখের সহিংস বিক্ষোভের নিন্দা করেন। এরপর বিভিন্ন সামরিক অবকাঠামো ও স্থাপনায় চালানো হামলার বিষয়ে সমালোচনা করে দল থেকে পদত্যাগ করেন।
এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতিদিন পিটিআই দল থেকে বিভিন্ন নেতা ও কর্মীর পদত্যাগকে কাকতালীয় বলা যায় না। এর পিছনে কলকাঠি নাড়ছে দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনী।
এখন ইমরান খানের দল পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ)-কে ভেঙে সামরিক বাহিনীর একটি তল্পীবাহী রাজনৈতিক দল সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছেন জাহাঙ্গীর খান তারিন ও ফাওয়াদ চৌধুরী।
জাহাঙ্গীর খান তারিন এর আগে পিটিআই দলের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। এছাড়া তিনি ইমরান খানেরও আস্থাভাজন ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন।
অপরদিকে ওয়াদ চৌধুরী হচ্ছেন একজন উচ্চাভিলাষী রাজনীতিবিদ। তিনি ইমরান খানের ঘনিষ্ট মিত্র ছিলেন। এছাড়া দলে তার ভালো প্রভাব ছিল।
এখন এ দুই নেতাকেই পিটিআই দল ভাঙার মূল কারিগর মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের পিএমএল-এন ও পিপিপি দলও চাইছে কিছু দলত্যাগী পিটিআই নেতাকে নিজেদেন দলে টানতে।
যারা গত দুই দশক ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিকে পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের কাছে এটা খুবই পরিচিতি একটি বিষয়।
এর আগে ২০০২-২০০৩ সালে সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ প্রথমে পিএমএল-এন এবং তারপর পিপিপি দলে ভাঙন ধরান। ওই সময় বিপুল সংখ্যক নেতা ওই দুই দল থেকে পদত্যাগ করেন। ওই দলত্যাগী নেতাদের নিয়ে মোশাররফ তার নিজের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-কিউ) গঠন করেন। পরে ওই দলই দেশটির ক্ষমতাসীন দলে পরিণত হয়েছিল।
একইভাবে বর্তমানে ও অতীতে দেশটিতে অন্য দলগুলোকেও ভাঙা-গড়ার শিকার হতে হয়েছে।
লাহোর ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস- বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হাসান জাভিদ বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে পিটিআই-এর সঙ্গে যুক্ত রাজনীতিবিদরা "সেই 'চাপের' শিকার হচ্ছেন যা সেনাবাহিনী অতীতে অন্য দলগুলোর ওপর প্রয়োগ করেছিল। এভাবে রাজনৈতিক দলগুলোতে দলত্যাগ ও পদত্যাগের কৌশল অবলম্বন করে সামরিক কর্মকর্তারা তাদের সুবিধা মতো তল্পীবাহক রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে থাকে। এসব দল সেনাবাহিনীর অনুগত হয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এর ফলে দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এমআই