ইসাহাক আলী, নাটোর থেকে:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় স্থানীয় এমপির ভাইয়ের পুকুর পাড় দিয়ে ঘাস কাটতে যাওয়ার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মিরাজ হোসেন রাব্বি (২২) নামে এক নব বিবাহিত যুবক নিহত হয়েছে। এ ঘটনার পুকুর মালিকের বিচারের দাবিতে বাগাতিপাড়া মালঞ্চি বাজারে বিক্ষোভ , ইউএনও অফিস ঘেরাও ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। এদিকে পুকুর মালিককে গ্রেফতার ও মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। তবে গ্রেফতারের আগে ঘটনার পর গতকাল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে পুকুর মালিক জাহাঙ্গীর দাবি করেন, তার পুকুর পাড়ে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া ছিল না বরং ওই যুবক তার পুকুরে মাছ চুরি করতে গিয়েছিল।
এর আগে শনিবার বিকালে উপজেলার স্যান্যালপাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। নিহত মিরাজুল ইসলাম স্যান্যালপাড়া মধ্যপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলাম মৃধার ছেলে। তিন মাসে আগে তিনি বিয়ে করেছিলেন।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর দুইটার দিকে উপজেলার স্যান্যালপাড়া গ্রামের মৃত আজিজুল সরকারের ছেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বৈমাত্রেয় ভাই জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে ঘাস কাটতে যায় প্রতিবেশী যুবক মিরাজ । এ সময় সে বিদ্যুতায়িত হয়। চায়না বেগম নামের এক নারী দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেসে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। মিরাজের মৃত্যুর জন্য পুকুর মালিক জাহাঙ্গীর হোসেনকে দায়ী করেছে নিহতের পরিবার সহ এলাকাবাসী।
নিহত যুবকের চাচা সাইদুল ইসলাম বলেন, মিরাজ ইসলাম স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমের পুকুর পাড়ে ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে যান। সেসময় পুকুরে অন্যদের প্রবেশ ঠেকাতে জিআই তার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া ছিল। ওই তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন
মিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুকুর মালিক জাহাঙ্গীর আলম দিনের বেলাতেও পুকুরসহ তার অন্য জমিতেও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখে।
তবে এ বিষয়ে পুকুর মালিক জাহাঙ্গীর আলম গ্রেফতারে আগে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার পুকুর পাড়ে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া ছিল না বরং ওই যুবক তার পুকুরে মাছ চুরি করতে গিয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে হাসপাতাল থেকে মিরাজের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয়রা জাহাঙ্গীর আলমের এ সব কর্মকান্ডের জন্য বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে রাতে এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে বাগাতিপাড়া থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে ও রাতেই জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে। এদিকে রবিবার সকালে আবারো জাহাঙ্গীরের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সহকারে ইউএনওর কার্যালয় ঘেরাও করে কয়েকশ নারী পুরুষ। এ সময় পুলিশ তাদের শান্ত করে। উপজেলা চত্তরে বিক্ষোভ সমাবেশে পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনেকেই বক্তব্য রাখেন। ওসি তাদের ন্যায্য বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধরা স্মারকলিপি প্রদান করে চলে যায়।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি শফিকুল আজম খান বলেন, পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় মামলা শেষে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এমআই