অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
কোরবানির ঈদের এখনো প্রায় এক মাস বাকি। তবুও এ কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে মসলার বাজার এতোটাই গরম যে ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে ক্রয়ের ক্ষমতা। ক্রেতাদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে অস্থিরতা, দেখা দিয়েছে না কিনতে পারার হাঁসফাঁস। অতিমুনাফার আশায় এক মাস আগেই কারসাজি শুরু করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
চক্রটি ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে বেসামাল করছে বাজার। সরবরাহ ঠিক থাকলেও পেঁয়াজ, আদা-রসুন, ধনিয়া, গোলমরিচ, জিরা, দারুচিনি, তেজপাতাসহ একাধিক পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে ভোক্তা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন- কয়েক বছর ধরে কারসাজির ধরন পরিবর্তন হয়েছে। ঈদের সময় দাম না বাড়িয়ে দেড় থেকে দুই মাস আগেই বাড়ানো হচ্ছে। যাতে বলতে পারে ঈদে পণ্যের দাম বাড়েনি। আর তদারকি সংস্থার চাপে মূল্য কমাতে হলেও অতিরিক্ত মুনাফা রেখেই কমাতে পারে।
জানতে চাইলে না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মশলা ব্যবসায়ী বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে অনেক আমদানি করা পণ্যের দাম যৌক্তিকভাবে বেড়েছে।
আমরা বেশি দামে কিনে এনে বেশী দামেই বিক্রি করতে হয়। তবে দেশের বাজারে ব্যবসায়ীরা আদৌ যৌক্তিক দামে বিক্রি করছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি এ প্রতিবেদককে। কারণ কোনো উৎসব এলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাকে ভোগান্তিতে ফেলে এটা ওই ব্যবসায়ী স্বীকার করেন।
কোরবানির ঈদকে ঘিরে একই কারসাজি শুরু হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর, রাখালিয়া, দালাল বাজার, কমলনগরের হাজির হাট, তোরাবগঞ্জ,চরলরেন্স, চন্দ্রগঞ্জ বাজার, মান্দারী বাজার ও দাসের হাটেরখুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- শনিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা, যা এক মাস আগে ৩৫-৪০ টাকা ছিল।
প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ৩৫০, যা আগে ২৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা, যা এক মাস আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ২৬০০, যা আগে ২২০০ টাকা ছিল। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা কেজি, আগে ১৫০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা, মাসখানেক আগে ৬৫০ টাকা ছিল। ধনিয়াগুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, যা আগে ১২০ টাকা ছিল। গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি, আগে ৯১০ টাকা ছিল।
এছাড়া কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি মেথি ১২০-১৬০ টাকা, আলু বোখারা ৪৮০-৫০৪ টাকা, কিশমিশ ৪৪২-৪৭০ টাকা, পাঁচফোড়ন কেজিপ্রতি ১৫২-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দালাল বাজারের মসলা বিক্রেতা হেলাল বলেন, মসলার বাজার আমদানি নির্ভর। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমদানি করে। তারা সেখান থেকে দাম বাড়িয়েছে। যে কারণে সব জায়গায় দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে।
রায়পুর বাজারের মশলা ব্যবসায়ী দুলাল চন্দ দাস আবীর আকাশকে জানান- আন্তর্জাতিক বাজারে মশলার রেট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাই আমদানি করা মসলা পণ্যের দাম বাড়ছে। এছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।
এজন্য দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি। তবে বাজারে পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ আছে। ঈদ-উল- আজহাকে সামনে রেখে চীন এবং মিয়ানমার থেকে আদা আমদানি হচ্ছে। তাই দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা কম।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদকে ঘিরে আগে থেকেই বাজারে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। পণ্য কেনা ও বিক্রির মধ্যে যে পার্থক্য তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সময় জার্নাল/এলআর