নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে খুলনা ও বরিশাল সিটির নির্বাচন। সোমবার (১২ জুন) সকাল আটটায় এই দুই সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
নির্বাচনে বরিশাল সিটিতে হামলার শিকার হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। দুপুরে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন বলে ইসলামিক দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় ভোটগ্রহণ।
সরেজমিন বরিশাল সিটিতে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি অনেকটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। তবে পৌনে ৩টার পর মুষলধারার বৃষ্টি শুরু হলে ভোটারদের উপস্থিতি কমে আসে।
সকাল থেকে বরিশাল শহর ও শহরতলীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এজেন্টদের দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রে জাতীয় পার্টি সমর্থিত লাঙল প্রতীকের এজেন্টদের দেখা মেলেনি। ভোটগ্রহণের পুরো সময় শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
বরিশাল সিটিতে মেয়র প্রার্থী রয়েছেন সাত জন। এছাড়াও ১১৮ জন সাধারণ ও ৪২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটে লড়ছেন। সবমিলিয়ে এই সিটিতে মোট ভোটার দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এরমধ্যে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন পুরুষ ও এক লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন নারী ভোটার রয়েছে।
নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ছোট্ট এই সিটির ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের হিসাবে ৭০টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রার্থীরা যেসব কেন্দ্র নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেগুলো যুক্ত করে মোট ১০৬টিকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনে মোট ভোট কক্ষ ৮৯৪টি। প্রতিটি ভোট কক্ষে একটি করে এবং প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশ পথে দুইটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট এক হাজার ১৪৬টি ক্যামেরা আছে।
পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ভোটের দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও আনসার মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৪০০ সদস্য মোতায়েন আছেন।
অন্যদিকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে খুলনা সিটি নির্বাচন। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দেন দেন ভোটাররা। সুষ্ঠু ভোট হলে বড় দলের প্রার্থীরা জয়ের জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৮ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৪ জন।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার ৩০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচনকে ঘিরে খুলনায় বিজিবির ১১ প্লাটুন সদস্য ছাড়াও নির্বাচনি মাঠে আছেন ৪৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না তা দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আছে সব ভোটকেন্দ্র।
দিনভর সিসি ক্যামেরায় ইসির চোখ
সবশেষ গাজীপুরের ভোটে সিটি ক্যামেরায় দু’জনকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসি। এবারও অন্যসব নির্বাচনের মতো খুলনা ও বরিশালের নির্বাচনেও অনিয়ম এবং গোপন বুথে অযাচিত লোকজনের উপস্থিতি ঘটছে কি না সেদিকে নজর রাখছে নির্বাচন কমিশন। সকাল থেকে ভোটের শেষ অবধি সিসি ক্যামেরার মনিটরিং সেলে বসে সিইসিসহ অন্য কমিশনার ও কর্মকর্তারা নির্বাচনে চোখ রাখছেন।
এমআই