রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

হাজিদের সুস্থতায় করণীয়

শুক্রবার, জুন ১৬, ২০২৩
হাজিদের সুস্থতায় করণীয়

সময় জার্নাল ডেস্ক:

হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ ও ফরজ ইবাদত। ইসলামে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ করা অবশ্য কর্তব্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

হজ না করার পরিণতি সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই বঞ্চিত।’ (ইবনে হিব্বান: ৩৭০৩)

বাংলাদেশের হজযাত্রীরা ইতোমধ্যে যাওয়া শুরু করেছেন। হজে যাওয়ার কত প্রস্তুতি কত ঝামেলা! তার সাথে আবার বাড়তি চিন্তা যোগ হয়েছে স্বাস্থ্য নিয়ে। হজে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে। আছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। সেইসব কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুস্থতা।

তাছাড়া আমাদের দেশের বেশিরভাগ হজযাত্রীই সাধারণত বেশি বয়সে হজ করতে যান। তাই তাদের জন্য দরকার বাড়তি সতর্কতা। যে বয়সেই হজ করতে যান না কেন, যদি শরীর সুস্থ না থাকে, তাহলে ইবাদত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সুতরাং, যাত্রার আগেই চিন্তা করে নেবেন কীভাবে যতটা সম্ভব সুস্থ থাকবেন। এ ব্যাপারে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।

অতিরিক্ত আহার পরিহার: হজের সময় প্রচুর হাঁটাহাঁটি ও ইবাদত করতে হয়। ভিড়ের সময় কাবা শরিফের কাছাকাছি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ইচ্ছা করলেই গাড়িতে যাতায়াত করা যায় না। ফলে ক্যালরি ব্যয় হয় প্রচুর। এসব কারণে অনেকেই বেশি বেশি খেয়ে থাকেন দেহে শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশে। কিন্তু দেখা যায়, শক্তি লাভের পরিবর্তে অতিভোজন বদহজমের সৃষ্টি করে, যা সত্যিই একটা যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার। কারণ, পাকস্থলী যতখানি খাবার পরিপাক করতে পারে, তার বেশি হলেই বদহজম হয়ে থাকে। এতে পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, বমি, মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে নির্বিঘ্নে ইবাদত করা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং, খাবার চাহিদার তুলনায় কিছু বেশি হবে, তবে অতিরিক্ত নয়।

পরিমিত খাবার গ্রহণ: অনেকে আবার এতই কম খান যে, শরীরের স্বাভাবিক সামর্থ্যটুকুও হারিয়ে ফেলেন। হজের ব্যাপারটি এক-দুই দিনের নয়। টানা ২০-৪০ দিন পর্যন্তও মানুষকে ব্যস্ত থাকতে হয়। এসব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ক্যালরিযুক্ত খাবার অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। যাদের ভাত-রুটি কম খাওয়ার অভ্যাস, তারা মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল অর্থাৎ আমিষজাতীয় খাদ্য একটু বেশি খাবেন। অপর্যাপ্ত খাওয়ার ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। এর ফলে কোনো কাজেই শক্তি ও উৎসাহ পাওয়া যায় না। হজের সময় দীর্ঘপথ হাঁটা, তাওয়াফ (সাতবার কাবা শরিফ প্রদক্ষিণ), সায়ি (সাফা থেকে মারওয়া সাতবার দৌড়ানো), সালাত ইত্যাদি সঠিকভাবে পালন করার জন্য শরীরে শক্তি থাকা একান্ত জরুরি।

এদিকে মদিনা শরিফে মসজিদে নববিতে ৪০ রাকাত নামাজ আদায় করতে পারলে আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত পাওয়া সম্ভব হয়। সুতরাং, ওই সুযোগ কেউই ছাড়তে চান না। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো হজ এজেন্সি সকালের নাশতার ব্যবস্থা রাখে না। এর ফলে মক্কা-মদিনায় গিয়ে হাজিরা বেশ বিপাকে পড়ে যান। অনেকে পয়সা খরচ করে বাইরে খেতে চান না অথবা খুব কম খান। আবার অনেকে ভেবে পান না কী খাবেন, কোথায় করবেন। এমনও দেখা যায়, অনেকে সকালে না খেয়ে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন প্রদত্ত খাবারের জন্য। আবার দেখা যায়, খাবার পছন্দ না হলে অনেকে খেতে চান না বা কম খান। এসব কারণে দেহে ক্যালরির ঘাটতি প্রকট হয়ে দেখা দেয়। 

বাসি খাবার পরিহার: কোনোক্রমেই বাসি খাবার খাওয়া উচিত নয়। অনেক সময় বাসি খাবারে গন্ধ না হলেও জীবাণুর বিস্তার ঘটে থাকে এবং এটা শরীরে গিয়ে ধীরে ধীরে সংক্রমিত হয়। এ ধরনের খাবারে পেটে গ্যাস, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি হতে পারে। এ ছাড়া আপনি যে খাবার পছন্দ করেন না অথবা যে খাবার আপনার নিষেধ, সেসব খাবার অনুরোধে বা কৌতূহলবশত না খাওয়াই ভালো।

পানি ও ফলের রস: হজের সময় প্রচুর পানি, ফলের রস, দুধ, যেকোনো শক্তিদায়ক পানীয় পান করা উচিত। কারণ, অত্যধিক পরিশ্রম এবং গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দেহে পানিস্বল্পতা হতে পারে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি বা পানীয় গ্রহণ করতে হবে। পানি দেহের জলীয় ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখা: জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মানুষ যেমন ফরজ আদায় করার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন, তেমনি এ সময় বার্ধক্যজনিত অথবা যেকোনো ধরনের রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমান এর পরও আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে যান মক্কা-মদিনা, মিনা-আরাফাত প্রান্তরে। তবে অসুস্থতা যা-ই থাকুক না কেন, প্রত্যেক মানুষকেই নিজ নিজ শরীর সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, প্রয়োজনীয় ওষুধ, পানি ও খাবার। কারণ, হাজিরা কখন কোথায় অবস্থান করবেন তার কোনো ঠিক নেই। এ ছাড়া সে দেশের আনুষঙ্গিকতার জন্য অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে অবস্থান করতে হয়, সে ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা খাবার খেয়ে শরীর সুস্থ রাখাটা জরুরি।

সঙ্গে রাখতে পারেন কেক, বিস্কুট, কলা, আপেল, নাশপাতি, খেজুর, বাদাম, আলু বোখারা, কিশমিশ, শুকনা মিষ্টি, জুস, দুধ। এসব খাবারে সহজেই অধিক ক্যালরি পাওয়া সম্ভব। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা সঙ্গে রাখতে পারেন চিড়াভাজা, মুড়ি, ভুট্টার খই, ডায়াবেটিক বিস্কুট, দুধ ইত্যাদি। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা থাকলে সঙ্গে জুস রাখতে পারেন।

মদিনায় বাঙালিদের অবস্থান যেখানে, সেখানে মুড়িসহ বাংলাদেশের অনেক খাদ্যপণ্য পাওয়া যায়। ডায়াবেটিসে যেহেতু প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর খাবার খেতে হয়, তাই দেরি না করে সময়মতো খেয়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার (রক্তশর্করা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া) হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ডায়াবেটিস গাইড বইটি সঙ্গে রাখা একান্ত জরুরি। এতে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, খাদ্যতালিকা সবই রয়েছে।

ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়
হজে যাওয়ার সময় ইনসুলিন (যদি প্রয়োজন থাকে) এবং ডায়াবেটিসের মুখে খাওয়ার বড়ি যা-ই ব্যবহার করেন না কেন, হিসাব করে কিছু বেশি পরিমাণে নিতে হবে। কারণ, এগুলো শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়তে হবে। এ ছাড়া গ্লুকোমিটার (রক্তশর্করা মাপার যন্ত্র), রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, থার্মোমিটার সঙ্গে নিতে হবে।

যেকোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে খাবার ও ওষুধ গ্রহণের সময় পরিমাণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। চিনি ও মিষ্টি খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তা না হলে রক্তশর্করা বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। অনেকে মনে করেন, কাবা শরিফের কাছে এসেছি, এখানে কোনো অনিয়ম করলে কিছু হবে না। এ ধারণা একেবারেই অমূলক। অসুস্থতার সঙ্গে ইবাদতের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং যত বেশি সুস্থ থাকা যাবে, তত বেশি আল্লাহ তাআলাকে প্রাণভরে ডাকা যাবে।

হৃদরোগীদের করণীয়: হৃদেরাগী ও উচ্চরক্তচাপের রোগীদের সময়মতো ওষুধ সেবন করা জরুরি। এ ছাড়া তঁদের চলাফেরা ও খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। জমাট চর্বি বাদ দেয়ার পরও এমন কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়, যাতে অস্বস্তি বোধ হয় এবং পেটে গ্যাস হয়। যেমন, খুব বেশি মসলাযুক্ত মাংস, আঁশযুক্ত সবজি ও ডুবোতেলে ভাজা খাবার খাওয়া। উট, দুম্বা, গরু, খাসির মধ্যে উটের মাংসে চর্বির আনুপাতিক হার কম। সুতরাং, তারা উটের মাংস অনায়াসে খেতে পারেন। তাদের খাসি ও দুম্বার মাংস পরিহার করা উচিত। এ ছাড়া চর্বির অংশ বাদ দিয়ে ঝোল ছাড়া গরুর মাংস খাওয়া যাবে।

সন্দেহ হলে খাবেন না: কোনো খাবারের মান নিয়ে আপনার সন্দেহ হলে তা না খাওয়াই ভালো। যদি মুরগি ভালোভাবে রান্না না হয় এবং পঁচাবাসি মনে হয় তাহলে তা পরিহার করুন। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে ডায়রিয়া হতে পারে এবং আপনি দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন।
 
ভালো করে হাত ধুয়ে নিন: সুষ্ঠুভাবে হজ পালনে সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেক কাজের আগেই ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। এতে করে জীবাণু মুক্ত থাকা যায় এবং জীবাণু ছড়ানো রোধ করা যায়। খাবার আগে-পরে, প্রশ্রাব-পায়খানার পর এবং ক্ষতস্থান ও নাক পরিষ্কারের পর ভালোভাব হাত ধুয়ে নিন।

পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন এবং ঘুমান: দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম। সারারাত ঘুমানোর চেয়ে সুযোগ থাকলে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালনের ফাঁকে ঘুমানো যেতে পারে। এতে শরীর ফুরফুরে থাকবে। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য অটুট রাখতে সাহায্য করে।

প্রতিটি ব্যক্তির হজে যাওয়ার আগে অসুস্থতার ব্যাপারে দেশে থাকতেই চিকিৎসক ও পথ্যবিদের পরামর্শ নিয়ে গেলে ভালো হয়। বড় ধরনের অসুস্থতা ছাড়াও হজের সময় যতটা সম্ভব সতর্ক থাকতে হবে, যাতে অন্যান্য ছোটখাটো অসুখে আক্রান্ত না হন। এতেও ইবাদতে বিঘ্ন ঘটতে পারে। যেমন জ্বর, সর্দিকাশি, পেট খারাপ, পেটব্যথা, বমি, মাথাব্যথা, গা-ব্যথা, অ্যালার্জিজনিত চুলকানি ইত্যাদি।

যেহেতু প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে অনেক লোকের সঙ্গে চলাফেরা, ওঠাবসা, খাওয়া, প্রার্থনা করতে হয়; সে জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ সহজেই সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য মাস্ক ব্যবহার করলে ভালো হয়।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল